১৫ মে, ২০২৩ ১১:৪৭

সত্যিই কি ইমরানকে ১০ বছরের জন্য বন্দির পরিকল্পনা করছে পাকিস্তান সরকার?

অনলাইন ডেস্ক

সত্যিই কি ইমরানকে ১০ বছরের জন্য বন্দির পরিকল্পনা করছে পাকিস্তান সরকার?

ইমরান খান। সংগৃহীত ছবি

চরম অর্থনৈতিক সংকটের মাঝেই পাকিস্তানে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতিও। এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেফতার ইস্যুতে। সম্প্রতি ইসলামাবাদ সুপ্রিম কোর্টে মামলায় হাজিরা দিতে গিয়ে আদালত চত্বর থেকে গ্রেফতার হন ইমরান খান। এরপর উত্তপ্ত হয়ে উঠে গোটা দেশ। এমনকি সেনাবাহিনীর স্থাপনায়ও হামলা চালায় তার দলের কর্মী-সমর্থকরা। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে নির্বাহী আদেশে সংরক্ষিত স্থানে আদালত বসিয়ে শুনানির ব্যবস্থা করে পাকিস্তান সরকার। কিন্তু তারপরও তাকে হেফাজতে রাখতে হয় কর্তৃপক্ষ। কেননা, আদালতের রায় যায় ইমরান খানের পক্ষে। দেশটির সুপ্রিম কোর্ট ইমরান খানের গ্রেফতার প্রক্রিয়াকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে অবিলম্বে তাকে মুক্তির নির্দেশ দেন। বেকায়দায় পড়ে সরকার ইমরান খানকে দ্রুত মুক্তি দেয়।

তবে তাকে আবারও গ্রেফতার করা হবে হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ খান। তিনি বলেছেন, সব মামলায় জামিন না পেলে আগামী ১৭ তারিখের পর ইমরান খানকে আবার গ্রেফতার করা হবে।

এদিকে, পাকিস্তান সরকার তাকে আগামী ১০ বছরের জন্য জেলে বন্দি করার পর পরিকল্পনা করছে বলে অভিযোগ করেছেন ইমরান খান।

তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান অভিযোগ করে বলেছেন, রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে এই পরিকল্পনা হচ্ছে।

তবে জীবনের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন বিশ্বকাপজয়ী সাবেক এই তারকা ক্রিকেটার। সোমবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার ভোররাতে একাধিক টুইট বার্তায় পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ প্রধান ইমরান খান এসব মন্তব্য করেন। মূলত পাকিস্তানের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী তার লাহোরের বাসভবনে পিটিআই নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করার পর এই টুইটগুলো করা হয়।

ভোররাতের এসব টুইট বার্তায় ইমরান বলেছেন, “তো লন্ডন পরিকল্পনা সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ্যে এসেছে। আমি জেলের ভেতরে থাকাকালীন সহিংসতার অজুহাতে তারা বিচারক, জুরি এবং জল্লাদের ভূমিকা গ্রহণ করেছে। এখন পরিকল্পনা হল- বুশরা বেগমকে (ইমরান খানের স্ত্রী) কারাগারে রেখে আমাকে অপমান করা এবং কিছু রাষ্ট্রদ্রোহ আইন প্রয়োগ করে আমাকে আগামী ১০ বছর কারাগারে আটকে রাখা।”

৭০ বছর বয়সী এই নেতা বর্তমানে একশ’টিরও বেশি মামলায় জামিনে মুক্ত রয়েছেন। টুইটে তিনি আরও বলেন, “জনসাধারণের যেন কোনও প্রতিক্রিয়া না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য সরকার দু’টি কাজ করেছে- প্রথমত, ইচ্ছাকৃত সন্ত্রাস কেবল পিটিআই কর্মীদের ওপর নয় বরং সাধারণ নাগরিকদের ওপরও চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয়ত, মিডিয়াকে সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রিত এবং স্তব্ধ করা হয়েছে।”

তিনি অভিযোগ করেন, এই ‘অপরাধীরা’ (সরকার) যেভাবে চাদর ও চর দেওয়ারীর বা পর্দা ও চার দেওয়ালের পবিত্রতা এমনভাবে লঙ্ঘন করেছে যা এর আগে কখনওই করা হয়নি।

তিনি বলেন, “এটা ইচ্ছাকৃতভাবে মানুষের মধ্যে ভয় জাগানোর চেষ্টা যে, তারা যখন আগামীকাল আমাকে গ্রেফতার করতে আসবে, লোকেরা যেন বাইরে না আসে। এবং আগামীকাল তারা আবার ইন্টারনেট পরিষেবা স্থগিত করবে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে নিষিদ্ধ করবে (যা শুধুমাত্র আংশিকভাবে খোলা আছে)। আমরা যেমনটা বলছি, ঘর ভেঙে ভেতরে ঢুকে পুলিশ নির্লজ্জভাবে বাড়ির মহিলাদের মারধর করছে।”

পাকিস্তানের জনগণকে তার বার্তা দিতে গিয়ে ইমরান খান বলেন, “পাকিস্তানের জনগণের কাছে আমার বার্তা; আমি আমার রক্তের শেষ বিন্দু পর্যন্ত হাকিকি আজাদির (সত্যিকারের স্বাধীনতার) জন্য লড়াই করব, কারণ আমার জন্য এই ধরনের বদমাইশদের দাসত্ব করার চেয়ে মৃত্যুই শ্রেয়।”

সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “আমি আমার সমস্ত লোককে এটাই মনে রাখার জন্য অনুরোধ করছি যে, আমরা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। অর্থাৎ আমরা এক আল্লাহ ছাড়া আর কারও কাছে মাথা নত করব না। যদি আমরা ভয়ের মূর্তির কাছে মাথা নত করি তবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কেবল অপমান এবং বিভাজন থাকবে। যে দেশে অন্যায় ও জঙ্গলের আইন বিরাজ করে, সে দেশ বেশিদিন টিকে থাকে না।” সূত্র: ডন

বিডি প্রতিদিন/কালাম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর