নির্বাচনি অঙ্গীকার অনুযায়ী ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের দিনই যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধ অভিবাসী তাড়ানোর কাজ শুরু করলেন। আর এ অভিযাত্রার সূচনা ঘটালেন ভার্জিনিয়া স্টেটের ফলসচার্চ থেকে গ্রেফতারকৃত এক ব্যক্তিকে মেক্সিকোতে পাঠিয়ে দেয়ার মধ্য দিয়ে। সোমবার ভোর রাতের মধ্যেই শিকাগো, লসএঞ্জেলেস, মিশিগানের ডেট্রয়েট, পেনসিলভেনিয়ার ফিলাডেলফিয়া, নিউইয়র্ক এবং বস্টন সিটিতে আইস’র (ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট) এজেন্টরা গুরুতর অপরাধে লিপ্ত অবৈধ অভিবাসী গ্রেফতারের অভিযান শুরু করেছে।
নানা অপরাধে দোষী সাব্যস্ত অথবা মামলায় অভিযুক্ত ৬ লাখ ৬০ হাজার অবৈধ অভিবাসীর তালিকা নিয়ে মাঠে নেমেছে আইসের ৬ হাজার এজেন্ট। ইউএস অভিবাসন দফতরের তথ্য অনুযায়ী, এ সময়ে সিটিজেনশিপ-স্ট্যাটাস নেই এমন ৭৬ লাখ অভিবাসীর ওপর গভীর নজরদারি থাকবে। ট্রাম্পের নীতি-নির্ধারকেরা জানিয়েছেন, দক্ষিণের সীমানা দিয়ে একজনকেও বেআইনিভাবে ঢুকতে না দেয়ার রেড এলার্ট কার্যকর করা হয়েছে। যদি কেউ সীমান্ত রক্ষীদের দৃষ্টি এড়িয়ে প্রবেশের চেষ্টা করে তবে তাকে গ্রেফতারের পরই মেক্সিকো-তে পাঠিয়ে দেয়া হবে। এ নিয়ে কালক্ষেপণের কোনই অবকাশ নেই।
অভিবাসন দফতরের তথ্য অনুযায়ী, সারা আমেরিকায় অবৈধ অভিবাসীদের ডিটেনশন সেন্টারে সর্বমোট ৪১ হাজার ৫০০ বেডের একটিও খালি নেই। অর্থাৎ ট্রাম্পের ইচ্ছার পরিপূরক পদক্ষেপ গৃহীত হবার পর তাকে শতভাগ সফল করতে গ্রেফতারের পরই বহিষ্কারের বিকল্প নেই। বহিষ্কারে বিলম্ব হলেই গ্রেফতারকৃতরা আইনগত লড়াইয়ের সুযোগ পাবে এবং একবার কোর্টে যাবার অর্থ হবে মাসের পর মাস ডিটেনশন সেন্টার অথবা কারাগারে রেখে ট্যাক্স প্রদানকারীদের অর্থ সাবাড় করতে হবে। এটি করার আগ্রহ নেই ট্রাম্প প্রশাসনের।
ফেডারেল সূত্রে আরো জানা গেছে, গুরুতর অপরাধে দণ্ডভোগের পর নানা অজুহাতে প্যারোলে মুক্তিপ্রাপ্ত অবৈধ অভিবাসীকে খুঁজে বের করা থেকে গ্রেফতার পর্যন্ত গড়ে ৬৬৫৩ ডলার করে ব্যয় হয়। একদিকে, আইসের লোকবল কম, অপরদিকে বিপুল এই অর্থ ব্যয়ের ব্যাপারটি এখোনন সামনে চলে এসেছে ঢালাওভাবে অবৈধ অভিবাসী গ্রেফতার-অভিযান শুরুর পরই।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই অভিযানকে আমেরিকানরা অভিনন্দিত করলেও মানবাধিকার নিয়ে কর্মরত সংগঠনগুলো ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। শনি ও রোববার নিউইয়র্ক, পেনসিলভেনিয়া, বস্টন, আটলান্টা, ডেট্রয়েট, ডালাস, হিউস্টন, লসএঞ্জেলেস, সানফ্রান্সিসকো, ফিনিক্স প্রভৃতি সিটিতে অনুষ্ঠিত র্যালি থেকে কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের মধ্যে গ্রেফতার ও বহিষ্কারের আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়ার জন্যে ট্রাম্পের নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়েছে। সমাবেশের বক্তারা উল্লেখ করেছেন, অভিবাসীদের মেধা আর রক্ত-মাংসে গড়ে উঠা আমেরিকায় অভিবাসীদের নিরাপত্তাহীনতায় ঠেলে দেয়ার ভিকটিম প্রকারান্তরে আমেরিকাকেই হতে হবে।
রবিবার ওয়াশিংটন ডিসিতেও বড় ধরনের একটি র্যালি থেকে অভিবাসন-বিরোধী পদক্ষেপের সমালোচনা করা হয়েছে। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে অর্থাৎ ২০১৩ অর্থ বছরে সবচেয়ে বেশি অবৈধ অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের ঘটনা ঘটেছে। সে সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৩৮ হাজার ৪২১। এর আগের অর্থ বছরও অনেক বেশি অবৈধকে বহিষ্কার করা হয় ওবামার নির্দেশে। সে সংখ্যা ছিল ২ লাখ ১৮ হাজার। এরপর ট্রাম্পের চার বছরের কোন বছরই এর ধারে-কাছে ছিল না গ্রেফতার অথবা বহিষ্কারের ঘটনা। অপরদিকে, প্রথম টার্মে ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ‘অভ্যন্তরীন নিরাপত্তা জোরদারকল্পে’ ২০১৭ সালের ২৫ জানুয়ারি ১৩৭৬৮ নম্বরের নির্বাহী আদেশ অনুযায়ী মাত্র ১৪৩৪৭০ অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেছিল। এর ৯২% ছিল গুরুতর অপরাধে দণ্ডিত অবৈধ অভিবাসী। সে অর্থ বছর বহিষ্কারের ঘটনা ঘটেছিল ২ লাখ ২৬ হাজার ১১৯ জন। অর্থাৎ ঢাকঢোল পিটিয়ে অভিবাসন-বিরোধী অভিযানের ফলাফল ছিল ওবামা আমলের গতানুগতিক পর্যায়ের মতোই।
এ অবস্থায় ‘আমেরিকান ইমিগ্রেশন কাউন্সিল’র সিনিয়র পলিসি কাউন্সেলর আর্ডিয়েল ওরস্কো বলেন, রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কঠোর বার্তায় গোটা কম্যুনিটিতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লেও ফলাফল খুব একটা ভালো হবে বলে মনে করছি না। কারণ, গত চার বছরে বাইডেন প্রশাসনের উদারনীতির কারণে ২২ লাখের অধিক বিদেশি ঢুকেছে আমেরিকায়। এর অধিকাংশই নিজ নিজ দেশে গুরুতর অপকর্মে লিপ্ত ছিল। তারা আমেরিকার সমাজ-জীবনকে হুমকির মুখে নিপতিত করেছে বলে ট্রাম্প অভিযোগ করলেও কার্যত নানা সীমাবদ্ধতার কারণে ফলপ্রসূ কোন ফলাফল আসবে না।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল