ভারতের রাজধানী দিল্লি লাগোয়া হরিয়ানার শহর গুরুগ্রামে পশ্চিমবঙ্গের অন্তত ছয়জন বাসিন্দাকে বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করে শারীরিক নির্যাতন চালাচ্ছে পুলিশ, এমনই অভিযোগ করেছে তাদের পরিবার।
এই ছয়জনই পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার বাসিন্দা এবং তাদের ধর্মীয় পরিচয় তারা মুসলমান। তারা সকলেই পরিযায়ী শ্রমিক এবং সাত-আট বছর ধরে গুরুগ্রামে থাকতেন বলে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের একটি সংগঠন।
তাদের কাছে গুরুগ্রাম পুলিশ ওই ছয়জন আটক হওয়ার কথা স্বীকার করেছে, তবে বিবিসিকে এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য দেয়নি গুরুগ্রাম পুলিশ।
এই ছয়জন আটক হওয়ার ব্যাপারে মালদা জেলার যুগ্ম শ্রম কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগও জমা পড়েছে।
হরিয়ানার এই ঘটনা এমনই দিনে সামনে এল, যেদিন কলকাতায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি অভিযোগ করেছেন যে, দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাভাষীদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে, গ্রেফতার করা হচ্ছে।
দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাট, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র এবং ওড়িশা রাজ্যে গত কয়েক মাস ধরে ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ সন্দেহে বহু বাংলাভাষীকে আটক করা হচ্ছে, যারা আসলে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা।
আবার ভারতের বেশ কয়েকজনকে বাংলাদেশে ‘পুশ’ করে দেওয়া হয়েছে এবং তারপর পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরে ভারতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে – এমন একাধিক ঘটনাও সামনে এসেছে।
পরিচয় যাচাইয়ের নামে ‘আটক’
পশ্চিমবঙ্গের যে বাসিন্দাদের গুরুগ্রামে আটক করা হয়েছে, তারা মালদা জেলার চাঁচল– এক নম্বর ব্লকের বাসিন্দা বলে দাবি করেছে তাদের পরিবার।
গত শুক্রবার রাতে সাদা পোশাকের পুলিশ তাদের ঘরে এসে পরিচয়পত্র যাচাই করতে আসে বলে জানিয়েছেন ধৃতদের এক আত্মীয় মামনি খাতুন।
তার কথায়, “যাদের আটক করেছে, তার মধ্যে আমার দুই মামা আর দুই দাদা আছে। সেদিন রাতে তখন কারও খাওয়া হয়ে গিয়েছিল, কেউ খেতে বসেছিল। সাদা পোশাকের পুলিশ এসে আধার কার্ড দেখতে চায়। এরপরে তারা বলে যে থানায় যেতে হবে আঙুলের ছাপ নেবে বলে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ছেড়ে দেবে – এই আশ্বাস দিয়ে গাড়িতে নিয়ে চলে যায়।”
তাদের অবশ্য সোমবার পর্যন্তও ছেড়ে দেওয়া হয়নি। প্রাথমিকভাবে গুরুগ্রামের সেক্টর ১০-এ থানার পুলিশ তাদের আটক করেছিল এবং পরের দিন তাদের বাদশাহপুর থানায় নিয়ে যাওয়া হয় বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন মামনি খাতুন।
“আমরা রবিবার রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ওই থানায় ছিলাম, কিন্তু আমাদের সঙ্গে দেখা করতে দেয়নি। একবার ওদের নিয়ে গেল মেডিকেল পরীক্ষা করা হবে বলে। কোথায় যে নিয়ে গেছে, তা বলেনি। রাত পর্যন্ত তাদের তো ওই থানায় ফেরত আনেনি,” যোগ করেন তিনি।
‘পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চ’ -এর সাধারণ সম্পাদক আসিফ ফারুক বলছিলেন, “পুলিশ আমার কাছে মেনে নিয়েছে যে ওই ছয়জনকে তারা আটক করেছে। আমি রবিবার বাদশাহপুরের অ্যাসিস্ট্যান্ট পুলিশ কমিশনারকে ফোন করেছিলাম। তিনি অবশ্য এটাও বলেছেন যে ওদের গ্রেফতার করা হয়নি।”
বিবিসি বাদশাহপুর থানার ওসি, অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার এবং তারও ঊর্ধ্বতন অফিসর ডেপুটি কমিশনারকে একাধিকবার ফোন করার চেষ্টা করেছে। তবে বিস্তারিত কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি তাদের কাছ থেকে। সূত্র: বিবিসি বাংলা
বিডি প্রতিদিন/একেএ