চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সবচেয়ে বড় প্রতিনিধি সম্মেলন বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে। চার দিনব্যাপী এই বৈঠকে চোখ ছিলো বিশ্ব নেতাদের। পার্টির সাধারণ সম্পাদক শি জিনপিংয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে যৌথ ইশতেহার প্রকাশ করা হয়েছে। এতে চীনের আগামী পাঁচ বছরের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান দিকগুলো তুলে ধরা হয়েছে।
এই বৈঠকে তিনটি বিষয় প্রাধান্য পেয়েছে। প্রথমত, পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে যে সংখ্যক প্রতিনিধি অনুপস্থিত ছিলেন, তা দেখে চীনা বিশ্লেষকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। ২০৫ জন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যের মধ্যে মাত্র ১৬৮ জন উপস্থিত ছিলেন। একজন মারা গেছেন এবং ১০ জনকে ইতোমধ্যেই বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। কিন্তু বাকি ২৬ জন অনুপস্থিত সদস্য কোথায় গেলেন?
এই বিশাল অনুপস্থিতির কারণে জল্পনা চলছে, দেশটির দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে গোপনে আরও অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে অপসারণ করা হয়েছে। সামরিক বাহিনীর ক্ষেত্রে চিত্রটি আরও স্পষ্ট, ৩৩ জন জেনারেলের মধ্যে ২২ জনই বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন। এদের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে বরখাস্ত হওয়া আটজন জেনারেলও আছেন।
সামরিক বাহিনীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদাধিকারী হি উইডংয়ের বহিষ্কারসহ বৈঠকের আগেভাগে পার্টির অভ্যন্তরে বড় ধরনের শুদ্ধি অভিযান সম্পন্ন করা হয়। এটি শি জিনপিংয়ের ক্ষমতার দৃঢ়তা নাকি অনিরাপত্তা প্রকাশ করে, তা নিয়ে বিশ্লেষকদের মধ্যে মতভেদ আছে। তবে দুর্নীতি দমন অভিযান যে থামছে না, তা নিশ্চিত। পার্টির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কোনো 'সমাপ্তি রেখা' আপাতত টানা হচ্ছে না।
দ্বিতীয়ত, আমেরিকার সঙ্গে চলমান বাণিজ্য সংঘাতের মাঝে চীন প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। ইশতেহারের একটি মূল উদ্দেশ্য হলো, বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত আত্মনির্ভরশীলতার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি অর্জন করা।
কমিউনিস্ট পার্টির বার্তা সংস্থা সিনহুয়াও জোর দিয়ে বলেছে যে, দেশকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে আরও শক্তিশালী এবং আত্মনির্ভরশীল হতে হবে। শি জিনপিংয়ের বহুল ব্যবহৃত স্লোগান ‘নতুন গুণগত উত্পাদনশীল শক্তি’র মাধ্যমে মূলত দেশের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বিদেশি নির্ভরতা কমাতে বেসরকারি খাত, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এবং সামরিক বাহিনীর অংশীদারিত্বে উন্নত, দেশীয় প্রযুক্তির বিকাশের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
তৃতীয়ত, মার্কিন শুল্ক আরোপের কারণে চীন তার রফতানি বাজার বড় ধাক্কা খেয়েছে। দেশের অর্থনীতি এখনো রফতানির ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য চীন দীর্ঘদিন ধরে অর্থনীতিকে রফতানিমুখিতা থেকে অভ্যন্তরীণ ভোগের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মুখে, দেশটি বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজারের দিকে মনোযোগ দিতে চাইছে। ইশতেহারে বলা হয়েছে, একটি শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ বাজার গড়ে তুলতে হবে। উন্নয়নের একটি নতুন ছাঁচ তৈরি করতে দ্রুত কাজ করতে হবে।
সূত্র: বিবিসি
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল