শনিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

মঙ্গলের বুকে পারসিভিয়ারেন্স জানাবে রূপ রস গন্ধ

মঙ্গলের বুকে পারসিভিয়ারেন্স জানাবে রূপ রস গন্ধ

মঙ্গল গ্রহে অবতরণের পর পারসিভিয়ারেন্স -এএফপি

আতঙ্ক ছিল সাত মিনিটের। অবশেষে সেই সময়কে জয়। তার পরই লাল গ্রহের মাটি স্পর্শ করল নাসার মঙ্গলযান ‘পারসিভিয়ারেন্স’। মঙ্গলের মাটি ছোঁয়ার মুহূর্তে এর ভবিষ্যৎ কী হবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন বিজ্ঞানীরা। সর্বোচ্চ মার্কস পেয়েই সে পরীক্ষায় উতরে গিয়েছে এ যান। সাত মাসের সফর শেষে বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার রাত ২টা ৫৩ মিনিটে নিরাপদেই মঙ্গলের মাটি ছুঁল সর্বাধুনিক ল্যান্ডার ও রোভার। সে খবর পৌঁছতেই উ”চ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন বিজ্ঞানীরা। এরপর গবেষক দলের এক সদস্য জানিয়েছেন, ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত। আমরা সবাই খুব উত্তেজিত। পারসিভারেন্সের পাঠানো প্রথম ছবি দেখার অপেক্ষায় রয়েছি।’ তার কিছুক্ষণের মধ্যে ছবিও আসতে শুরু করে। সেগুলো দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন সবাই। বিবিসি জানিয়েছে, মঙ্গলের ‘জেজোরো ক্রেটার’ নামে একটি সুবিশাল গহ্বরে যানটি অবতরণ করে। গহ্বরের ব্যাস ৪৯ কিলোমিটার। কোটি কোটি বছর আগে গ্রহাণু বা কোনো মহাজাগতিক বস্তুর সঙ্গে সংঘর্ষের পরই এর সৃষ্টি হয়েছিল বলে দাবি। কিন্তু পারসিভিয়ারেন্সকে নিয়ে কেন এত উন্মাদনা? বিশেষজ্ঞদের মতে আগামী দুই দশকের মধ্যে মঙ্গল নিয়ে বড় পরিকল্পনা রয়েছে। সেখানে ‘উপনিবেশ’ গড়তে চাইছেন বিজ্ঞানীরা। আগামী দুই বছর সে ব্যাপারে খুঁটিনাটি তথ্য জোগাড় করবে এ রোভার। খতিয়ে দেখবে মাটি-পাথর। খুঁজবে প্রাণের স্পন্দনও। পাশাপাশি বসতি গড়ার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান সেখানে রয়েছে কি না তার উত্তরও জানাবে পারসিভিয়ারেন্স। এর সঙ্গেই মঙ্গলে উড়ে গিয়েছে একটি হেলিকপ্টারও। নাম ‘ইনজেনুইটি’। ১৯ মার্চের পর এক মাস ধরে যা উড়বে লাল গ্রহের আকাশে। অর্থাৎ মাটি ও আকাশ দুই দিক থেকেই যতটা সম্ভব তথ্য একাট্টা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। মঙ্গলে নাসার এটি তৃতীয় সফল অবতরণ। আগামী ১০ দিন লাল গ্রহে তন্ন তন্ন ঘুরবে এ মহাকাশযান। সেখান থেকে পাথর, মাটি সংগ্রহ করে পৃথিবীতে নিয়ে আসার কথা। নাসা জানিয়েছে, প্রায় ২০ হাজার কিলোমিটার বেগে মঙ্গলের কক্ষপথে ঢুকে পড়ে রোভার পারসিভিয়ারেন্স। এরপর একটি বিশাল প্যারাসুটের সাহায্যে তার গতিবেগ কমিয়ে ৩ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় আনা হয়। মঙ্গলের মাটি ছোঁয়ার সময় ব্যবহার করা হয় এক অতিকায় ক্রেন। তার সাহায্যেই মঙ্গলের মাটি ছোঁয় রোভারের চাকা। যে প্যারাসুটের সাহায্যে রোভারের গতিবেগ কমানো হয়েছে, তাও ঐতিহাসিক। এর আগে এত বড় প্যারাসুট মহাকাশে ব্যবহার করা হয়নি।

ইতিহাসে চার ভারতীয় : পারসিভিয়ারেন্স মঙ্গলের মাটি স্পর্শ করার সঙ্গে ইতিহাসে নাম উঠে গেল চার ভারতীয় বংশোদ্ভূতের। যার দুজন বাঙালি। বেঙ্গালুরুর স্বাতী মোহন পারসিভারেন্সের গাইডেন্স, নেভিগেশন ও কন্ট্রোল অপারেশন্স (জিএনঅ্যান্ডসি)-এর প্রধান। দ্বিতীয় ব্যক্তিও বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা। তাঁর নাম জে বব বলরাম। ইনজেনুইটি হেলিকপ্টারের চিফ ইঞ্জিনিয়ার তিনি। তৃতীয় ব্যক্তির নাম অনুভব দত্ত। মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যারোডায়নামিক্স ও অ্যারোইলেকট্রিসিটি বিভাগের অধ্যাপক তিনি। এ ছাড়া আছেন বর্ধমানের সৌম্য দত্ত।  যে বিশাল প্যারাসুটের সাহায্যে রোভারের গতিবেগ কমিয়ে মঙ্গলে অবতরণ করানো হয়েছে, সে প্যারাসুটটি তৈরি করেছেন সৌম্য।

২১ মিটার ব্যাসের এ প্যারাসুটটির উচ্চতা ১৫ জন মানুষের সমান। তীব্র গতিবেগে রোভার যখন মঙ্গলের দিকে যাচ্ছিল তখন মাত্র এক থেকে দুই সেকেন্ডে এ প্যারাসুটটি খুলে যায়। তারই সাহায্যে নিয়ন্ত্রণে আসে রোভারের গতি এবং শেষ পর্যন্ত ঠিকমতো অবতরণ করতে পারে।

সর্বশেষ খবর