শনিবার, ৯ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

ইউরোপীয় পার্লামেন্টেও মিয়ানমারের বিকল্প সরকারকে স্বীকৃতি

সংকট নিরসনে এনইউজিকে যুক্ত রাখার জন্য আসিয়ানসহ আন্তর্জাতিক সব পক্ষকে আহ্বান

ইউরোপীয় পার্লামেন্টেও মিয়ানমারের বিকল্প সরকারকে স্বীকৃতি

সম্প্রতি ফ্রান্সের উচ্চকক্ষ সিনেট মিয়ানমারের জান্তা সরকারকে স্বীকৃতি না দিয়ে বিকল্প সরকার বা জাতীয় ঐক্যের সরকারকে (এনইউজি) স্বীকৃতি দিয়েছে। এবার একই পথে হাঁটল ইউরোপীয় পার্লামেন্টও।

বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় পার্লামেন্টে মিয়ানমারের ধর্মীয় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অবস্থাসহ দেশটির মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রস্তাবের পক্ষে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ৬৪৭ সদস্য ভোট দেন। বিপক্ষে ভোট দেন দুজন। ভোটদানে বিরত থাকেন ৩১ জন। প্রস্তাবে মিয়ানমারে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের পাশাপাশি বিক্ষোভ-প্রতিবাদকারীদের ওপর দমন-পীড়ন চালানোর ঘটনায় দেশটির সামরিক সরকারের নিন্দা জানানো হয়েছে। এবং প্রস্তাবে মিয়ানমারে চলমান সংকট নিরসনে এনইউজিকে যুক্ত রাখার জন্য আসিয়ানসহ আন্তর্জাতিক সব পক্ষকে আহ্বান জানানো হয়েছে। এ ছাড়া মানবাধিকার লঙ্ঘন ও হামলার ঘটনাকে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে অভিহিত করেছেন। মিয়ানমারের স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর হামলা, নির্যাতন ও আটকের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা।

গত মঙ্গলবার ফ্রান্সের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে গৃহীত প্রস্তাবে মিয়ানমারে সাংবিধানিক প্রক্রিয়া ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি দেশটিতে শান্তি ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার স্বার্থে বিকল্প সরকারকে (এনইউজি) স্বীকৃতি দিতে ফ্রান্স সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। সেদিনই এনইউজিকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে আলোচনা শেষে প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়।

সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকার উৎখাতের আট মাস পর দুটি পার্লামেন্টে দেশটির বিকল্প সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টিকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা।

মিয়ানমারে জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের সামরিক সরকারকে এখন পর্যন্ত কেউ স্বীকৃতি দেয়নি। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সদ্য সমাপ্ত অধিবেশনে মিয়ানমারের আসনটি ফাঁকা ছিল। মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে আগামী মাসে (নভেম্বর) জাতিসংঘে আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে মিয়ানমারের বিকল্প সরকারকে বিদ্যমান সংকট নিরসনে যুক্ত করার আহ্বান আন্তর্জাতিক পরিসরে এনইউজির স্বীকৃতির বিষয়টিকে জোরালো করে তুলছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী যে অজুহাতে অভ্যুত্থান করেছে, তার সত্যতা খুঁজে পাননি ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা। ফলে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট ও স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন তারা। মিয়ানমারের সংকট সমাধানের জন্য আসিয়ানকে আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে বলা হয়েছে। আসিয়ান তাদের উদ্যোগে যেন এনইউজিসহ মিয়ানমারের নাগরিক সমাজকে যুক্ত রাখে, তা-ও বলা হয়েছে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের     প্রস্তাবে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নিরাপদ, স্বেচ্ছা ও মর্যাদাপূর্ণ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে চীন ও রাশিয়াকে মিয়ানমারের সংকট নিরসনে সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর