৩ জুন, ২০২৩ ০৭:৪৪

জিয়ারতে সোনার মদিনা মুমিনের বাসনা

মুফতি মোহাম্মদ এহছানুল হক মোজাদ্দেদী

জিয়ারতে সোনার মদিনা মুমিনের বাসনা

‘সোনার মদিনা আমার প্রাণের মদিনা, সব ভুলিব কিন্তু তোমায় ভুলতে পারি না’। মদিনা পৃথিবীর এক বরকতময় স্থান। ইসলাম-পূর্ব যুগে মদিনা শরিফের নাম ছিল ইয়াসরিব। রসুলে করিম (সা.)-এর হিজরতের পর এ শহরের নাম হয় মদিনাতুন্নবী বা নবীজির শহর। এখন বলা হয় মদিনা। সোনার মদিনা, প্রাণের মদিনা। মুমিন মুসলমানদের প্রাণের ভূমি। মদিনা শরিফ হলো নবীজি (সা.)-এর প্রিয় শহর; শান্তির নগর। রসুলে করিম (সা.) বলেন, ‘যে আমার রওজা জিয়ারত করল, তার জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে গেল।’ (বায়হাকি : ৩৮৬২)। তিনি আরও বলেন, যে হজ করল কিন্তু আমার রওজা জিয়ারত করল না; সে আমার প্রতি জুলুম করল। (ইবনে হিব্বান, দারা কুতনি, দায়লামি শরিফ)। ফকিহগণের মতে, হাজিদের জন্য মদিনা শরিফ জিয়ারত করা সুন্নত। জান্নাতপ্রত্যাশী প্রতিটি মুমিন মুসলমানের অন্তর সর্বদা উন্মুখ হয়ে থাকে নবী (সা.)-এর রওজা মোবারক জিয়ারত ও পবিত্র মদিনা মুনাওয়ারা দেখার জন্য। হুজুরপাক (সা.)-এর রওজাপাকের সবুজ গম্বুজ তো বেহেশতের একটি নিদর্শন যা দর্শনে কেবল চক্ষুই পবিত্র হয় না, প্রশান্তিতে ভরে ওঠে মানব হৃদয়। সবুজ গম্বুজের চতুর্দিকে রহমতের এমন স্রোতধারা প্রবহমান, যার প্রবণে কার না অবগাহন করতে ইচ্ছা করে। কার না মন চায় হৃদয় উজাড় করে বাদশাহর বাদশাহ কামলিওয়ালা নবীজি (সা.)-কে সালাতু সালাম জানাতে! কারণ এখানেই শুয়ে আছেন সুলতানে মদিনা, রহমাতুল্লিল আলামিন, হায়াতুন্নবী হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা আহমাদ মোজতবা (সা.)।

জান্নাতি নিশান রওজাপাকের জিয়ারতে রয়েছে অধিক পুণ্য ও ফজিলত। যা কোরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াস দ্বারা সমর্থিত ও উত্তম ইবাদত হিসেবে গণ্য। রওজাপাক জিয়ারতের ফজিলত কোরআন-সুন্নাহর আলোকে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।

আল কোরআনে রওজাপাকের জিয়ারতের প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘(হে মাহবুব!) যদি তারা নিজেদের আত্মার ওপর জুলম করে তাহলে যেন তারা আপনার দরবারে আসে, অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং রসুল (সা.) যদি তাদের জন্য ক্ষমা চেয়ে সুপারিশ করেন তবে তারা অবশ্যই আল্লাহকে তওবা কবুলকারী ও দয়ালু পাবে।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৬৪)।

রওজায়ে আতহার জিয়ারতে নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার রওজা জিয়ারত করল তার জন্য আমার শাফায়াত (সুপারিশ) ওয়াজিব হয়ে গেল। (বায়হাকি) আরেক বর্ণনায় এসেছে, যে ব্যক্তি একনিষ্ঠভাবে মদিনায় উপস্থিত হয়ে আমার জিয়ারত করবে কিয়ামত দিবসে আমি তার পক্ষে সাক্ষী ও সুপারিশকারী হব। (বায়হাকি)। অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, যে ব্যক্তি বাইতুল্লাহ শরিফ হজ করল অথচ আমার জিয়ারত করল না, মূলত সে আমার ওপর জুলুম করল। (ইবনে হিব্বান, দারা কুতনি, দায়লামি)।

রসুল (সা.)-এর রওজাপাক হাজারো বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। তার শান ও মর্যাদা মহান আল্লাহ প্রদত্ত। এ মহিমান্বিত পুণ্যস্থান জিয়ারতে আদব বজায় রাখা ইমানের দাবি। আসুন জেনে নিই রওজা শরিফ জিয়ারতের আদব। দেহ-মনে পবিত্র হয়ে, সুন্দর পোশাকে সুসজ্জিত হয়ে, খুশবু লাগিয়ে মসজিদে নববীতে প্রবেশ করে জিয়ারত করা উচিত। রিয়াজুল জান্নাতে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে ভক্তি, শ্রদ্ধা, ভালোবাসায় বিগলিত হয়ে আল্লাহর হাবিবের প্রতি সালাত ও সালাম পেশ করা। খুব আদবের সঙ্গে বিনয়ের সুরে ‘আস-সালাতু আসসালামু আলাইকা ইয়া রসুলুল্লাহ’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে সালাম পেশ করা। তারপর হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.), হজরত উমর (রা.)-এর প্রতি সালাম পেশ করা ও তাঁদের রওজা নম্র, বিনয়াবনত হৃদয় নিয়ে জিয়ারত করা। রওজা পাকে উচ্চ আওয়াজে কিছু না বলা। নবী করিম (সা.)-কে হায়াতুন্নবী মেনে রওজামুখী হয়ে তাঁর উসিলা নিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করা। নবীপ্রেমে সিক্ত হৃদয়ে দুই নয়নের অশ্রু ঝরানো। বেশি বেশি দরুদ শরিফ পাঠ করে দোয়া করা। হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.), হজরত উমর (রা.), জান্নাতুল বাকিসহ সব সাহাবি, উম্মাহাতুল মুমেনিন, সারা বিশ্বের মুসলিম নর-নারীর জন্য দোয়া করা।

লেখক : খতিব, মনিপুর বায়তুল আশরাফ (মাইকওয়ালা) জামে মসজিদ, মিরপুর, ঢাকা

 

বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর