হালাল উপার্জন ও হালাল ভক্ষণ প্রতিটি মুসলমানের ওপর ফরজ। মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘হে মুমিনরা, আহার করো আমি তোমাদের যে হালাল রিজিক দিয়েছি তা থেকে এবং আল্লাহর জন্য শোকর করো, যদি তোমরা তাঁরই ইবাদাত করো।’
(সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৭২)
এর বিপরীতে অবৈধ উপার্জনকে হারাম করেছেন। অবৈধ পন্থায় বাহ্যিকভাবে ওপরে ওঠা সহজ হলেও এর বহু অপকারিতা রয়েছে, যা তিলে তিলে মানুষকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়।
মানুষের ইহকাল-পরকালকে কলুষিত করে দেয়। দুনিয়া ও আখিরাতে বহু শাস্তির মুখোমুখি করে। নিচে হারাম উপার্জনের কিছু কুফল তুলে ধরা হলো :
আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অসন্তুষ্টি
সাধারণত লোভ-লালসা মানুষকে হারাম উপার্জনে উদ্বুদ্ধ করে। লোভী মানুষ তার স্বার্থের জন্য সব করতে পারে।
সামান্য কিছু সম্পদের লোভে তারা হালাল-হারামের তোয়াক্কা পর্যন্ত করে না। ফলে মহান আল্লাহ তাদের ওপর অসন্তুষ্ট হয়ে যান, যা প্রতিটি মাখলুকের জন্য সবচেয়ে বড় বিপদের বিষয়।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর সঙ্গে করা প্রতিশ্রুতি এবং নিজেদের শপথের বিনিময়ে তুচ্ছ মূল্য খরিদ করে, আখিরাতে তাদের কোনো অংশ নেই। আর আল্লাহ তাদের সঙ্গে কথা বলবেন না এবং তাদের দিকে তাকাবেন না কেয়ামতের দিন। আর তাদের পরিশুদ্ধও করবেন না। তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি।’
(সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৭৭)
রাসুল (সা.) সুদখোর, সুদদাতা, সুদের লেখক ও তার সাক্ষীদ্বয়ের ওপর অভিসম্পাত করেছেন এবং বলেছেন এরা সবাই সমান অপরাধী। (মুসলিম, হাদিস : ৩৯৮৫)।
অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ঘুষদাতা ও গ্রহীতার ওপর আল্লাহর অভিশাপ।
(ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৩১৩)
দোয়া কবুল হয় না
যারা হারাম পন্থায় উপার্জন করে, মহান আল্লাহ তাদের দোয়া কবুল করেন না। রাসুলুল্লাহ (সা.) এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, দীর্ঘ সফরের ক্লান্তিতে যার মাথার চুল বিক্ষিপ্ত, অবিন্যস্ত ও সারা শরীর ধূলিমলিন। সে আকাশের দিকে হাত তুলে বলে, হে আমার প্রভু! হে আমার প্রতিপালক! অথচ তার খাদ্য ও পানীয় হারাম, তার পোশাক হারাম, তার জীবন-জীবিকাও হারাম। এ অবস্থায় তার দোয়া কিভাবে কবুল হতে পারে?
(তিরমিজি, হাদিস : ২৯৮৯)
বরকত কমে যায়
মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন আর দান-সদকা বাড়িয়ে দেন।’
(সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭৬)
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরবিদরা বলেন, ‘যে সম্পদের সঙ্গে সুদ মিশ্রিত হয়ে যায়, বেশির ভাগ সময় সেগুলো ধ্বংস হয়, অধিকন্তু আগে যা ছিল, তা-ও সঙ্গে নিয়ে যায়। সুদ ও জুয়ার ক্ষেত্রে দেখা যায়, অজস্র পুঁজির মালিক কোটিপতি দেখতে দেখতে দেউলিয়া ও ফকিরে পরিণত হয়। এভাবে হারাম উপার্জন মানুষের রিজিক কমিয়ে দেয়।
কবরের শাস্তি
হারাম উপার্জন মানুষকে যেভাবে দুনিয়ায় শাস্তি দেয়, তেমনি কবরেও তাদের জন্য রয়েছে ভয়াবহ শাস্তি। সামুরাহ ইবনে জুনদুব (রা.) বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, আজ রাতে আমি স্বপ্নে দেখেছি, দুই ব্যক্তি আমার কাছে এসে আমাকে এক পবিত্র ভূমিতে নিয়ে গেল। আমরা চলতে চলতে এক রক্তের নদীর কাছে পৌঁছলাম। নদীর মধ্যস্থলে এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছে এবং আরেক ব্যক্তি নদীর তীরে, তার সামনে পাথর পড়ে রয়েছে। নদীর মাঝখানের লোকটি যখন বের হয়ে আসতে চায় তখন তীরের লোকটি তার মুখে পাথর খণ্ড নিক্ষেপ করে তাকে স্বস্থানে ফিরিয়ে দিচ্ছে। এভাবে যতবার সে বেরিয়ে আসতে চায় ততবারই তার মুখে পাথর নিক্ষেপ করছে আর সে স্বস্থানে ফিরে যাচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এ ব্যক্তি কে? সে বলল, যাকে আপনি (রক্তের) নদীতে দেখেছেন, সে হলো সুদখোর।
(বুখারি, হাদিস : ২০৮৫)
দান-সদকা কবুল হয় না
অনেকে মনে করে, হারাম পথে উপার্জন করে সেখান থেকে কিছু সদকা করে দিলে হয়তো শাস্তি কিছুটা হালকা হবে। অথবা আল্লাহ ক্ষমা করে দেবেন। কিন্তু ব্যাপারটা এ রকম নয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা পবিত্রতা ছাড়া কোনো সালাত কবুল করেন না এবং অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদের সদকা গ্রহণ করেন না।’
(নাসায়ি, হাদিস : ১৩৯)
অতএব, আমাদের সবার উচিত, হারাম উপার্জন থেকে দূরে থাকা। কারণ এর দ্বারা সাময়িক সচ্ছলতা অর্জন হলেও এর ক্ষতি চিরস্থায়ী।
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ