ধনী আর দরিদ্র মিলে আমাদের সমাজ। আমাদের চারপাশ। আল্লাহ রব্বুল আলামিন কাউকে অর্থ, বিত্ত, বৈভব দিয়ে সম্পদশালী করেছেন আবার কাউকে অর্থকড়ি না দিয়ে করেছেন অসহায়, দরিদ্র। আল কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘যদি আল্লাহ তাঁর সব বান্দাকে রিজিকে প্রাচুর্য দিতেন তাহলে তারা নিঃসন্দেহে জমিনে বিপর্যয় সৃষ্টি করত, তিনি বরং পরিমাণমতো যাকে যতটুকু চান তার জন্য ততটুকু রিজিকই নাজিল করেছেন। অবশ্য তিনি নিজের বান্দাদের প্রয়োজন সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ওয়াকিবহাল রয়েছেন, তিনি তাদের প্রয়োজনের দিকেও নজর রাখেন।’ (সুরা আশ শুরা, আয়াত ২৭) এ আয়াতের মাধ্যমে পরিষ্কার বোঝা গেল আল্লাহ সবাইকে কেন ধনী বা সম্পদশালী করেন না। একজন দরিদ্র মানুষ সমাজে যে কত অসহায় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ ধরনের অসহায় ও দরিদ্র মানুষকে সাহায্য করার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রসুল সব সময় উৎসাহিত করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী! পার্থিব জীবনের সৌন্দর্যস্বরূপ ভোগবিলাসের সেসব উপকরণ আমি তাদের অনেককেই দিয়ে রেখেছি তার দিকে তুমি কখনো তোমার দুই চোখ তুলে তাকাবে না, এসব কিছু আমি এ কারণেই দিয়েছি যেন আমি তাদের সেখানে পরীক্ষা করতে পারি।’ (সুরা ত্বা হা, আয়াত ১৩১) ধনসম্পদ নিয়ে কখনো গর্ব বা অহংকার করতে নেই। ধনসম্পদ আর দারিদ্র্য দুটোই আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা। ধনীর জন্য পরীক্ষা সে তার অর্থসম্পদ কীভাবে খরচ করছে আর দরিদ্রের জন্য ধৈর্যের পরীক্ষা। আমরা জানি দুনিয়ার সব সম্পদের মালিক আল্লাহ রব্বুল আলামিন। মানুুষ যে সম্পদের মালিক তা শুধু আল্লাহর দয়ার ফসল। আল্লাহ কাউকে করেছেন সম্পদশালী আর কাউকে দরিদ্র। সুতরাং সম্পদশালী ব্যক্তি যখন সমাজের অসহায় দরিদ্র মানুষকে সাহায্য করেন, তার পাশে দাঁড়ান তখন আল্লাহ তার ওপর খুশি হন এবং তার সম্পদ বাড়িয়ে দেন। এ ধরনের মানবিক কাজ নফল ইবাদত বা নফল রোজা রাখার সমতুল্য।
যারা বিপদগ্রস্ত ও অভাবী গরিবদুঃখীকে দান করে, আল্লাহ তাদের পুরস্কৃত করেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, মহান আল্লাহ বলেন, হে আদমসন্তান! তুমি তোমার উপার্জন থেকে আমার অভাবী বান্দাদের জন্য ব্যয় কর। আমি আমার ভান্ডার থেকে তোমাকে দিতে থাকব।’ (বুখারি, মুসলিম)
আমাদের মনে রাখতে হবে, আল্লাহ আমাদের সবাইকে সৃষ্টি করেছেন। কেউ ধনী, কেউ গরিব, কেউ অসহায়, কেউ দুর্বল, কেউ বা সহায়সম্বলহীন। সুতরাং ধনীদের দায়িত্ব হলো গরিব, অসহায় ও বিপদগ্রস্তকে সাহায্য করা। আর অসহায় আশ্রয়হীন বিপদগ্রস্তকে সাহায্য-সহযোগিতা করা ইবাদতেরই অংশ। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘গোটা সৃষ্টিকুল আল্লাহর পরিবার। অতএব যে আল্লাহর পরিবারের সঙ্গে সদয় ব্যবহার করল, আল্লাহর কাছে সে সর্বাধিক প্রিয়।’ (বায়হাকি) মুসলমানদের মনে রাখতে হবে ধনসম্পদ সবকিছুই আল্লাহর দান। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে অঢেল ধনসম্পদ দিয়ে পরীক্ষা করেন। কারণ তার সম্পদে রয়েছে গরিব, অসহায় ও বিপদগ্রস্তের জন্য হিসসা। সুতরাং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও পরকালে নাজাত পেতে হলে সম্পদশালীদের উচিত অসহায়, গরিব ও বিপদগ্রস্তকে সাহায্য করা। হাদিসে এসেছে রসুল (সা.) আরও বলেছেন, ‘আমি জান্নাতের দুয়ারে দাঁড়িয়ে দেখতে পেলাম যারা জান্নাতে প্রবেশ করেছে তাদের অধিকাংশই গরিব মিসকিন অথচ ধনী ও সম্পদশালীরা আটকা পড়ে আছে। অন্যদিকে জাহান্নামিদের জাহান্নামে নিক্ষেপ করার জন্য আদেশ দেওয়া হয়েছে। জাহান্নামের প্রবেশ দ্বারে দাঁড়িয়ে দেখতে পেলাম যে অধিকাংশই নারী।’ (বুখারি) সুতরাং গরিব- মিসকিনের প্রতি অবহেলা না করে তাদের প্রতি সদয় হই। তাদের সাহায্য করি। এতে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সেই তৌফিক দান করুন।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার