শনিবার প্রবল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ভারতজুড়ে পালিত হচ্ছে ৭০তম প্রজাতন্ত্র দিবস। এ দিন রাজধানী দিল্লির বিজয়চকে সেনাবাহিনীর কুচকাওয়াজের অভিবাদন গ্রহণ করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।
এবারের অনুষ্ঠানে প্রধান অথিতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা।
কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভারতের উপরাষ্ট্রপতি ভেঙ্কাইয়া নাইডু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং, সড়ক ও জাহাজ মন্ত্রী নীতিন গড়কড়ি, অন্তর্বর্তীকালীন অর্থমন্ত্রী পীযুশ গোয়েল, পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানসহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য, সাবেক প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবগৌড়া, আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী, কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালসহ দেশটির বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা এবং বিদেশের সম্মানীয় অতিথিরাও।
এদিন সকাল ১০টা নাগাদ ভারতীয় রাষ্ট্রপতির জাতীয় পতাকা (তিরঙ্গা) উত্তোলনের মধ্যে দিয়ে সাধারণতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রজাতন্ত্র দিবসের আকর্ষণের কেন্দ্র ছিল সেনাবাহিনীর কুচকাওয়াজ। বিজয়চক থেকে প্যারেড শুরু হয়ে রাজপথ, ইন্ডিয়া গেট, তিলক মার্গ, বাহাদুর শাহ জাফর মার্গ, নেতাজী সুভাষ মার্গ হয়ে রেড ফোর্ট ময়দান পর্যন্ত প্রায় ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পথে প্রদর্শিত হয় কুচকাওয়াজ।
প্রধানত এদিন প্রকাশ্যে সামরিক শক্তি প্রদর্শন করে দেশটির সেনাবাহিনী। সেদিকে তাকিয়েই এই কুচকাওয়াজে অংশ নেয় আল্ট্রা লাইট হাউৎজার কামান কে-৯ ভাজিরা-টি, জাগুয়া, সুখোই-এর মতো যুদ্ধ জাহাজ, ল্যান্ড মাইন প্রতিরোধ ট্যাঙ্ক টি-৯০ ট্যাঙ্ক প্রমুখ।
এরই সঙ্গে যোগ হয়েছিল সেনা ও আধাসামরিক বাহিনীর জওয়ানদের কসরত। এর পাশাপাশি দেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্রও এই কুচকাওয়াজে ফুটে উঠেছিল। বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে সুসজ্জিত ট্যাবলো বের করা হয়।
প্রায় দেড়ঘণ্টা ধরে চলে প্রজাতন্ত্র দিবসের এই কুচকাওয়াজ। শেষে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপনী হয়।
কুচকাওয়াজ শেষে নরেন্দ্র মোদি দর্শকাসনের সামনে গিয়ে হাত নাড়িয়ে তাদের অভিবাদন গ্রহণ করেন। প্রথম দফায় প্রধানমন্ত্রী হিসাবে এটিই তার প্রজাতন্ত্র দিবসের শেষ অনুষ্ঠান। সম্ভবত সেই কারণেই কুচকাওয়াজ শেষে অনেক সময় ধরে রাজপথের দুই ধারে অবস্থিত দর্শক আসনের সামনে কখনও হাত নাড়িয়ে কখনও বা হাত জোড় করে অভিবাদন গ্রহণ করেন। এসময় দর্শকদের মধ্যেও প্রবল উৎসাহ লক্ষ্য করা যায়।
এর আগে এদিন সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ ইন্ডিয়া গেটের সামনে অমর জওয়ান জ্যোতিতে ফুল দিয়ে দেশের বীর শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ সহ তিন বাহিনীর প্রধানরা।
প্রজাতন্ত্র দিবসের সময় জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় দিল্লিসহ আশপাশের এলাকা নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছিল। কুচকাওয়াজের দিকে নজর রাখতে দিল্লির পুলিশের পাশাপাশি এনএসজি কমান্ডো, বিমান বিধ্বংসী বন্দুক, স্নাইপার, শার্পশ্যুটার মোতায়েন রাখা হয়েছিল।
এছাড়াও সমগ্র দিল্লিতে কয়েক হাজার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। জঙ্গি-নাশকতা রোধে আকাশেও কড়া নজরদারি চালানো হয়েছিল ভারতীয় বিমানবাহিনীর তরফে।
রাজধানী দিল্লির পাশাপাশি দেশটির অন্যান্য রাজ্যেও জমকালো অনুষ্ঠানে পালন করা হচ্ছে ৭০তম প্রজাতন্ত্র দিবস। কলকাতার রেডরোডে (ইন্দিরা গান্ধী সরণি) জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে শুরু হয় প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজ। কুচকাওয়াজের অভিবাদন গ্রহণ করেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল কেশরী নাথ ত্রিপাঠি। সকাল দশটা নাগাদ শুরু হয়ে প্রায় দেড়ঘণ্টা ধরে চলে সেই কুচকাওয়াজ।
এই কুচকাওয়াজে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, বিদানসভার স্পীকার বিমান বন্দোপাধ্যায় সহ রাজ্যের একাধিক মন্ত্রী, সচিব ও সরকারি কর্মকর্তারা।
ত্রিপুরা, কেরল, বিহার, ছত্রিশগড়, মহারাষ্ট্র, গুজরাট, তামিলনাড়ু, পাঞ্জাবসহ প্রতিটি রাজ্যেও কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে পালিত হচ্ছে প্রজাতন্ত্র দিবস। জম্মু-কাশ্মীরের লাদাখে সমতল থেকে ১৮ হাজার ফুট উচ্চতায় মাইনাস ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যেও ইন্দো-তিব্বেতিয়ান সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর সদস্যরা প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপনে সামিল হন।
উল্লেখ্য, স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে ২৬ জানুয়ারি তারিখটি একটি স্মরণীয় দিন। ১৯৫০ সালের এই দিনটিতে সংবিধান কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই দেশ একটি গণপ্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষিত হয়। সেই থেকে এই দিনটি প্রতিবছরই ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ হিসাবে পালিত হয়ে আসছে।
বিডি প্রতিদিন/কালাম