বাংলা নববর্ষকে সাদরে স্বাগত জানাচ্ছে দুই বাংলা। রবিবার সাড়ম্বরে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান পালিত হয় বাংলাদেশে, একদিন পর সোমবার নতুন বছরকে বরণ করছে পশ্চিমবঙ্গ।
গোটা বাংলাদেশের সাথেই অত্যন্ত উৎসব মুখর পরিবেশে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র মাধ্যমে রবিবার দিনব্যাপী বাংলা ১৪২৬ এর আগমন উদযাপন শুরু করে কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন।
এদিন বিকালে মঙ্গল শোভাযাত্রাটি বাংলাদেশ গ্রন্থাগার ও তথ্যকেন্দ্র (৩, সোহরাওয়ার্দী এভিনিউ, কলকাতা-১৭) থেকে পার্কসার্কাস সেভেন পয়েন্ট ক্রসিং পার হয়ে এ.জি.সি বোস রোড হয়ে বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়।
বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে মঙ্গল শোভাযাত্রায় পা মেলান উপ-হাইকমিশনের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারি এবং কলকাতায় সোনালী ব্যাংক লিমিটেড ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স-এর কর্মকর্তা-কর্মচারিসহ কলকাতার কবি, সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী ও বিভিন্ন পেশার মানুষ।
পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলায় অধ্যয়নরত বাংলাদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের তৈরী মুখোশ ও রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ নানান প্রাণী সদৃশ সুসজ্জিত মুখোশ নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রাটি দর্শকদের দৃষ্টি কাড়ে।
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বাঙালির ঐতিহ্য নিয়ে বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উপ-হাইকমিশনের ঐতিহ্যমন্ডিত সুসজ্জিত প্রাঙ্গণে বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্য ও আবহ রক্ষা করে মেলা ও বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে নাগরদোলা, বায়োস্কোপ, পালকি, ও শিশুদের বিভিন্ন ধরণের খেলনার আয়োজন ছিল এই মেলায়। মেলায় এ ধরণের আয়োজনে উপস্থিত শিশু কিশোররা খুবই আনন্দ উপভোগ করে। এ ছাড়া হাওয়াইমিঠাই, বাতাশা, মোয়া, মুড়কী, বিভিন্ন প্রকারের পিঠা, ঝাল মুড়ি, পান্তা ও বিভিন্ন প্রকার ভর্তা, খিচুড়ী ইত্যাদির ব্যবস্থা করা হয়। সেই সাথে চলতে থাকে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে। অনুষ্ঠানে কলকাতার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন বিদেশী মিশনের কূটনীতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা উপস্থিত ছিলেন।
উপস্থিত অতিথিদের উদ্দেশ্যে উপ-হাইকমিশনার তৌফিক হাসান বলেন ‘প্রতিবারের ন্যায় এবারও কলকাতার রাজপথে মঙ্গল শোভাযাত্রায় মানুষ অংশগ্রহণ করে যে অভূতপূর্ব সাড়া দিয়েছেন তাতে আমি ভিষণভাবে মুগ্ধ। বাংলাদেশের ন্যায় ‘বাংলা নববর্ষ ১৪২৬’ এখানেও সুন্দরভাবে উদযাপিত হয়েছে। প্রতিবারই যেন এমনিভাবেই পহেলা বৈশাখ উদযাপিত হয় সে আশা ব্যাক্ত করেন উপ-হাইকমিশনার।
এদিকে একদিন পর সোমবার নতুন বছরকে স্বাগত জানাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে এদিন সকাল আটটা নাগাদ দক্ষিণ কলকাতার গাঙ্গুলীবাগান থেকে যাদবপুর পর্যন্ত মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ সুদৃশ্য বের হয়-তাতে সমাজের সকল পেশার মানুষ, ছিলেন ওপার বাংলার শিল্পী, শিক্ষার্থীরাও। নাচ-গান কখনও পথনাটিকা-এর মধ্যে দিয়েই শোভাযাত্রা তার নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে যায়। বাংলাদেশের মতোই এখানেও শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষা এক সুস্থ সংস্কৃতির বার্তা তুলে ধরাই লক্ষ্য বলে জানান উদ্যোক্তারা।
ধুমধাম করে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান উদযাপিত হচ্ছে শান্তিনিকতনেও। নাচ, গান, আবৃত্তির মধ্যে দিয়ে বর্ষবরণে মেতে উঠে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। এদিন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মভিটে কলকাতার জোড়াশাঁকো ঠাকুর বাড়িতেও সকাল থেকে সঙ্গীত, আবৃত্তি সহযোগে বর্ষবরণের নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল।
এদিকে নতুন বছর উপলক্ষ্যে দল, রাজ্যবাসী ও দেশের মানুষের মঙ্গল কামনায় দক্ষিণ কলকাতার কালীঘাট মন্দিরে পূজা দেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। রবিবার গভীর রাতে মন্দিরে যান মুখ্যমন্ত্রী। তৃণমূল নেত্রী নিজেই পুজোর যাবতীয় উপকরণ দিয়ে ডালা সাজান।
এছাড়াও এই বিশেষ দিনে কলকাতার শহরের বিভিন্ন প্রান্তে বের হয় প্রভাতফেরী। ভোর হতেই কালীঘাটের কালী মন্দির, দক্ষিণেশ্বর মন্দির, আদ্যাপীঠ, তারাপীঠ সহ রাজ্যটির বিভিন্ন ধর্মস্থানে পূজ দেওয়ার জন্য লম্বা লাইন পড়েছিল। নতুন বছরের শুভ কামনা করে অনেকেই পূজা দেন। অনেক বাড়িতেও এদিন লক্ষী-গণেশের পূজা হয়। সঙ্গে আয়োজন করা হয়েছে বিশেষ খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থাও। এমনকী অনেক নামী রেস্তোরা গুলিতেও বিশেষ বাঙালি ভোজেরও আয়োজন করা হচ্ছে।
ভাষা ও চেতনা সমিতির আয়োজনে এদিন সকাল থেকে বর্ষবরণের উৎসব শুরু হয়েছে কলকাতার অ্যাকাডেমী অফ ফাইন আর্টসের সামনে। সকাল সাড়ে ৭ টা থেকে পার্ক স্ট্রিট জাদুঘরের কাছ থেকে বর্ণাঢ্য বৈশাখী শোভাযাত্রা বের হয়ে শেষ হয় আকাডেমীর সামনে। সেখানেই সারা দিন ধরে চলবে কথা, কবিতা, নাচ, গান, নাটক, ছবি আঁকা। সঙ্গে থাকছে সস্তায় পান্তাভাত-শুঁটকি, মাছ-ভাত, আলু পোস্ত, আমপোড়া সরবত। দুপুরে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে অনুষ্ঠান।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন