একুশের নির্বাচনের আগেই ‘খেলা হবে’ স্লোগানে মুখরিত বাংলার রাজনৈতিক আকাশ-বাতাস। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বিরোধীদের সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেছেন ভাঙা পায়েই খেলা হবে। তিনি হবেন গোলরক্ষক।
মমতার সেই স্লোগানকে হাতিয়ার করেই এবার রাজ্যে নির্বাচনী প্রচারণায় ঝড় তুললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বললেন ‘খেলা তো হবেই কিন্তু তা হবে উন্নয়নের।
বৃহস্পতিবার সংক্ষিপ্ত সফরে পুরুলিয়ার ভাঙরায় নির্বাচনী জনসভায় উপস্থিত ছিলেন মোদি। আর সেই সভা থেকে আগাগোড়াই তৃণমূল কংগ্রেসের সরকারকে নিশানা করে গেলেন। সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে ডবল ইঞ্জিন সরকারের ডাক দিয়ে তিনি বললেন কেন্দ্রে একটি ইঞ্জিন থাকবে আর বাংলায় আরেকটি ইঞ্জিন থাকবে। আর তাতেই উন্নয়নে গতি আসবে।
এদিন তিনি বলেন ‘বাংলার মানুষের কল্যাণের চেয়ে খেলার দিকেই বেশি মন দিদির। এবারের নির্বাচনে সিন্ডিকেট, কাটমাটি, তোলাবাজি সরকারের পরাজয় নিশ্চিত। মমতা দিদিও সেটা বুঝে গেছেন। আর সেখান থেকেই তিনি বলছেন খেলা হবে। দিদি বলছে খেলা হবে, বিজেপি বলছে চাকরি হবে। দিদি বলছে খেলা হবে, বিজেপি বলছে উন্নয়ন হবে। দিদি বলছে খেলা হবে, বিজেপি বলছে বাড়ি হবে, স্কুল হবে, হাসপাতাল, শিক্ষা, নারীদের উত্থান হবে, প্রত্যেক ঘরে কল হবে, পানি মিলবে।’
এখানেই থেমে থাকেননি মোদি। তিনি বলেন ‘বাংলার মা-বোনেদের চিন্তার খেলা আপনি। আপনি গত ১০ বছর খেলেছেন, এবার খেলা শেষ হবে আর উন্নয়ন শুরু হবে।’
প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ ‘তৃণমূল সরকারের কারণে পুরুলিয়া পানি সঙ্কটে ভুগছে। এখানকার আদিবাসী, কৃষকদের এতটুকু পানি পায় না যা দিয়েই তারা কৃষকের কাজ করতে পারে, নারীদেরও একটু পানির জন্য অনেক দূর যেতে হয়। প্রথমে বামেদের সরকার আর এখন তৃণমূলের সরকার উন্নয়নের কোন নজরই দেয়নি।’
মোদির অভিমত ‘মানুষের জন্য কাজের থেকে তৃণমূলের সরকার খেলছেন বেশি। এই সরকার পুরুলিয়াকে কেবল পরিযায়ী শ্রমিক দিয়েছে, বিভেদের রাজনীতি দিয়েছে, গত ৮ বছরে এখানে একটাও জলপ্রকল্প গড়ে উঠেনি। এর জবাব কে দেবে?’
বাংলায় বিজেপির সরকার গঠন হলেন সমস্ত অসুবিধা দূর হয়ে যাবে বলেও আশ্বাস দিয়ে মোদি বলেন ‘বাংলায় ডবল ইঞ্জিন সরকার চাই। একটি দিল্লির ইঞ্জিন, অন্যটি বাংলার। যখন ডবল ইঞ্জিনের সরকার হবে, তখন উন্নয়ন হবে, মানুষের জীবনের কষ্টু লাঘব হবে।’
মমতার বিরুদ্ধে তোষণের রাজনীতির অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন ‘তোষণের রাজনীতির নামে এখানকার আদিবাসী, দলিত মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়ে অন্য সম্প্রদায়েরকে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ভোটের রাজনীতির স্বার্থের জন্য তৃণমূলের সরকার মাওবাদীদের প্রশয় দিচ্ছে। বালু মাফিয়া, কয়লা মাফিয়া প্রত্যেকেই এই সরকারের প্রশ্রয় পাচ্ছে।’
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার ঘটনায় মমতার অবস্থানের সমালোচনা করে এদিন মোদি বলেন, ‘আপনি দেশের সেনা জওয়ানরে কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন। যখন পুলয়ামায় হামলা হয়েছিল আপনি কার কার সাথে ছিলেন, তা সকলেই জানেন। বাটলা হাউস এনকাউন্টারে জঙ্গির গুলিতে এক জওয়ানের মৃত্যু হয়, তখনও এনকাউন্টারের সমালোচনা করে জঙ্গিদের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন এই মমতা দিদি। মানুষ সবই জানে।’
এদিনের সভা থেকে অসুস্থ মমতার দ্রুত আরোগ্য কামনা করে তিনি বলেন ‘মমতা দিদি ভারতের মেয়ে, তার প্রতি শ্রদ্ধা আছে। দিদির পায়ে চোট লাগার পর দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠার কামনা করেছিলাম।’
তিনি বলেন ‘২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে টিএমসি হাফ, আর এবার পুরো সাফ।’ এদিন টিএমসি’কে কটাক্ষ করে মোদি বলেন টিএমসি’র অর্থ ‘ট্রান্সফার মাই মানি’।
বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন