১১ মে, ২০২২ ১৪:০৪
পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি

মমতাকে সাহিত্য পুরস্কার দেওয়ার প্রতিবাদে সম্মাননা ফিরিয়ে দিচ্ছেন লেখিকা

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

মমতাকে সাহিত্য পুরস্কার দেওয়ার  প্রতিবাদে সম্মাননা ফিরিয়ে দিচ্ছেন লেখিকা

অনাদি রঞ্জন বিশ্বাস-রত্না রশীদ ব্যানার্জী

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে সোমবারই পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির তরফে বিশেষ সম্মাননা দেয়া হয়েছিল রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কে। ওই পুরস্কার প্রদানের পর ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই আকাদেমির অন্নদা শঙ্কর রায় স্মারক সম্মাননা ফেরত দিলেন পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট লেখিকা, গবেষক রত্না রশীদ ব্যানার্জী। তার অভিমত, বাংলা আকাদেমির তরফে মুখ্যমন্ত্রীকে পুরস্কৃত করার সিদ্ধান্ত তিনি সাহিত্যিক হিসেবে মেনে নিতে পারছেন না। 

সোমবার কবিগুরুর স্মরণে ‘কবি প্রণাম' অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর। কলকাতার ক্যাথিড্রাল রোডে অনুষ্ঠিত ওই অনুষ্ঠানেই পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির নামাঙ্কিত ‘রিট্রিভার্সিপ’ পুরস্কার দেওয়া হয় মমতাকে। ওই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী নিজে উপস্থিত থাকলেও তার হয়ে ওই সম্মাননা গ্রহণ করেন রাজ্যটির শিক্ষামন্ত্রী তথা বাংলা আকাদেমির চেয়ারম্যান ব্রাত্য বসু। 

পুরস্কার প্রদানের আগে সেই অনুষ্ঠান মঞ্চে দাঁড়িয়ে ঘোষকের ভূমিকায় থাকা ব্রাত্য বসু বলেছিলেন, ‘সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রে কাজের পাশাপাশি যাঁরা নিরলস সাহিত্য সাধনা তথা সারস্বত সাধনা করে চলেছেন, তাদের পুরস্কৃত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলা আকাদেমি। প্রথম বছর বাংলার শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিকের মতামত নিয়ে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কে এই পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁর ‘কবিতা বিতান’ কাব্যগ্রন্থের জন্য এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছিলেন ব্রাত্য বসু। 

কিন্তু বাংলা আকাদেমির ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে নিজের পাওয়া সম্মাননা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিলেন রাজ্যটির বর্ধমান টাউনের বাসিন্দা লেখিকা রত্না রশীদ ব্যানার্জী। 

মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গ বাংলা একাডেমির অধ্যক্ষকে উদ্দেশ্য করে লেখা চিঠিতে এই সম্মান প্রত্যাখ্যানের আবেদন জানিয়ে তিনি জানান, ‘আমি রত্না রশীদ ব্যানার্জী, ২০১৯ সালের ২৬ জুলাই পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির তরফ থেকে অন্নদাশঙ্কর রায় স্মারক সম্মানে ভূষিত হয়েছিলাম। আমি তখন সেই সম্মান সকৃতজ্ঞ চিত্তে গ্রহণ করি। গত (সোমবার) গণমাধ্যমের মাধ্যমে আমি অবহিত হলাম, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি একটি নতুন পুরস্কার ঘোষণা করে প্রারম্ভিক বছরের সেই পুরস্কার পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কে অর্পণ করেছে বাংলা সাহিত্যে তাঁর নিরলস সাধনার স্বীকৃতি হিসেবে। এই অভিধার চেয়ে বড় সত্যের অপলাপ হতে পারে না। মুখ্যমন্ত্রীকে এই পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি শুধু একটি ন্যাক্কারজনক দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে তাই নয়, এর মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যের সত্যিকারের নিরলস চর্চায় রত সমস্ত মানুষকে অপমানিত করেছে।’

তিনি আরও জানান, ‘...এই অবস্থায় ২০১৯ সালে এই সরকারের তরফে আমাকে দেওয়া সম্মান আমার কাছে কাঁটার মুকুটের মতো প্রতীয়মান হচ্ছে। আমি এই চিঠির মাধ্যমে ২০১৯ সালের ২৬ জুলাই আমাকে দেওয়া অন্নদাশঙ্কর স্মারক সম্মান ফিরিয়ে দিচ্ছি। ওই সম্মানের সঙ্গে দেওয়া স্মারক আমি পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির ঠিকানায় অনতিবিলম্বে পাঠিয়ে দেবো।’

আর ঠিক একই কারণে সাহিত্য আকাদেমির বাংলা উপদেষ্টার পরিষদের পদ থেকে ইস্তফা দিলেন রাজ্যটির লেখক ও সম্পাদক অনাদি রঞ্জন বিশ্বাস। তার অভিমত, রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনে বাংলা কবিতার নাম করে এমন পুরস্কার আদতেই কবিতাকে অসম্মান করা হয়, যা তিনি মেনে নিতে পারেননি।

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর