রবিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা
মানি লন্ডারিং

মামলার তদন্ত ও নিষ্পত্তিতে একক ক্ষমতা চায় পুলিশ

মামলার তদন্ত ও নিষ্পত্তিতে একক ক্ষমতা চায় পুলিশ

ঘটনা-১ : গত ১৯ এপ্রিল রাজধানীর কদমতলী থানা এলাকা ও টঙ্গীর আরিচপুর থেকে ৫৩ হাজার জাল জাতীয় পরিচয়পত্রসহ আমিনুল ইসলাম ওরফে মামুন ও তৌফিক ইসলামকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মামলা দায়েরের পর তা তদন্তের জন্য দুদকে পাঠানো হয়। কিন্তু দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কোনো তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ না করায় প্রতারণা মামলার দুই আসামি আদালত থেকে জামিন নিয়ে বেরিয়ে যায়। সম্প্রতি তেজগাঁও রেজিস্ট্রি অফিসের পিয়ন আলী আহমেদ কেটু, দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কর্মরত আবদুস সোবহানসহ আরও ছয়জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ঘটনায় রাজধানীর মিরপুর থানায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়। জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার মূল মামলাটি স্থানান্তর করা হয় দুদকে। দুদক তদন্ত না করার কারণে সব আসামি জামিন নিয়ে বেরিয়ে গেছে।
গত ২০ নভেম্বর থেকে জুন মাস পর্যন্ত এ ধরনের ৪৩৭টি জালিয়াতি ও প্রতারণা মামলা দায়ের হয়েছে। মামলা দায়েরের পরপরই মামলার নথি দুদক কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছিল। তবে অধিকাংশ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ না করায় মামলাগুলো এখনো ফাইলবন্দী। এসব বিষয় উল্লেখ করে মামলার জট কমাতে এবং ভুক্তভোগীদের হয়রানি লাঘবের স্বার্থে মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত মামলার তদন্তে একক ক্ষমতা চাচ্ছে পুলিশ। দুদকের অধীনে এসব মামলার তদন্তভার থাকলে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অতিরিক্ত অর্থ খরচের পাশাপাশি ভুক্তভোগীদের ভোগান্তির মাত্রা আরও বেড়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি এ সংক্রান্তে পুলিশ সদর দফতর থেকে এ ধরনের একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। ওই প্রস্তাবনায় উল্লেখ রয়েছে, বিশেষ করে চুরি, ডাকাতি সংক্রান্ত এসব মামলা পুলিশ ও দুদক পৃথকভাবে তদন্ত করার কারণে দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি হচ্ছে। দুদক, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিটসহ (বিএফআইইউ) অন্য কয়েকটি সংস্থা এর সঙ্গে যুক্ত থাকায় মামলার কার্যক্রম দ্রুত নিষ্পত্তি করা যায় না। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) বিশেষ পুলিশ সুপার আশরাফুল ইসলাম বলেন, প্রেডিকেল অফেন্সের ক্ষেত্রে যেমন চুরি, ডাকাতি, মানব পাচারের মতো মামলার তদন্তে অনেক সময় মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়টি উঠে আসে। এ সংক্রান্ত মামলার তদন্তভার পুলিশের হাতে ছেড়ে দিলে মামলার বাদী-বিবাদী উভয়ই ভোগান্তি থেকে রক্ষা পায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ১৯ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত মানি লন্ডারিং মামলার নিষ্পত্তি শীর্ষক এক বৈঠকে এ ধরনের মতামত তুলে ধরা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। এ ছাড়া মানি লন্ডারিং আইন-২০১২ সংশোধনীর ওপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া মতামতেও এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, এ যাবৎকালে নানা জটিলতার কারণে মানি লন্ডারিং অপরাধ তদন্তের বিষয়ে খুবই সামান্য অগ্রগতি হয়েছে। এ সংক্রান্ত বেশির ভাগ অপরাধ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তদন্ত করলেও দুদকের কাছে অনুমতি নিতে হয়। এতে নানা ধরনের হয়রানি ও জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। যা মামলার সার্বিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করছে। শুধু তাই নয়, কোনো কোনো মামলা ১০, ১৫ বছর ধরে বিচারাধীন অবস্থায় ঝুলে রয়েছে। মামলার কার্যক্রমের এমন ধীরগতির কারণে আন্তর্জাতিক মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ সংস্থা এশীয় প্যাসিফিক গ্রুপও (এপিজি) অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। এ জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিএফআইইউকে লেখা এক চিঠিতে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে  বলেন, মানি লন্ডারিং মামলার তদন্ত ও নিষ্পত্তিতে দুদক, পুলিশ, বিএফআইইউসহ অন্যান্য সংস্থার মধ্যে আরও সমন্বয় প্রয়োজন। সম্প্রতি পুলিশের পক্ষ থেকে কিছু কিছু ঘটনার তদন্তে একক ক্ষমতা চাওয়া হয়েছে।  অন্যদিকে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ কার্যক্রম শক্তিশালী করতে গত বছরের ২৩ অক্টোবর অ্যান্টি মানি লন্ডারিং ও কমবাটিং দ্য ফাইন্যান্সিং অব টেরোরিজম সংক্রান্ত একটি নতুন শাখা (উইং) খুলেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ শাখার মাধ্যমে মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রকার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে তা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে সরবরাহ করা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর