রবিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ঈদ জামাত ঘিরে কড়া নিরাপত্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঈদকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ সারা দেশে ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী হামলা মোকাবিলায় সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে পুলিশের বিশেষায়িত টিম। জানমালের নিরাপত্তা এবং পশু কেনাবেচা নিরাপদ রাখতে মাঠে থাকছে পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা। ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে স্পর্শকাতর এলাকাগুলোতে। চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারী, অজ্ঞানপার্টি ও টিকিট কালোবাজারি রোধেও ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। জাতীয় ঈদগাহ, বায়তুল মোকাররম ও রাজধানীর অন্যান্য ঈদগাহে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট ও ওয়াচ টাওয়ার। খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। ঈদগাহ থাকবে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতায়। পশুর হাটে কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। জাল টাকার বিস্তার রোধে বসানো হয়েছে জাল টাকা শনাক্তকরণ মেশিন। গরুর ট্রাকে চাঁদাবাজি রোধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পুলিশপ্রধান। ঈদকে কেন্দ্র করে নেওয়া এই নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকবে ঈদের ছুটি পর্যন্ত। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, জঙ্গিদের ব্যাপারে বিশেষ নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। কাশিমপুর কারাগারে হামলার পরিকল্পনা ফাঁস হওয়ার পর নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘ঢাকা শহরের প্রতিটি মহল্লায় ঈদের জামাত হয়ে থাকে। সেখানে আমাদের ভলান্টিয়াররা থাকবেন। গোয়েন্দারা আমাদের যে তথ্য দিচ্ছে বা দেবে, এর ওপর ভিত্তি করে প্রতিটি ঈদগাহেই পূর্বসতর্ক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, যেমনটা শোলাকিয়ায় নেওয়া হয়েছিল। যেখানে আমাদের প্রয়োজন হবে সেখানে আর্চওয়ে ও অন্যান্য চেকিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে। ঢাকা নগরীসহ সারা দেশে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক বলেছেন, নিরাপদ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদুল আজহা যেন দেশবাসী উদযাপন করতে পারেন, সে জন্য সব ব্যবস্থাই নেওয়া হয়েছে। সড়ক, রেল ও নৌপথ, পশুর হাট এবং ঈদ জামাতস্থলসহ সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ ছাড়া ঈদের দিন অস্থায়ী চামড়া ক্রয়কেন্দ্রেও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হবে এবং পশুর চামড়া পাচার রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রয়েছে প্রস্তুত। পুলিশ ও র‌্যাব জানায়, রাজধানীসহ দেশজুড়েই নিরাপত্তা-বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। এ ছাড়া থাকছে সাদা পোশাকের গোয়েন্দা ইউনিট, ডগ স্কোয়াড, বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, স্ট্রাইকিং ফোর্স, পুলিশের বিশেষ টিম সোয়াত, মোটরসাইকেলে টহল, ফুট পেট্রোল ও তল্লাশি চৌকি। রাজধানীতে ঈদের জামাতকেন্দ্রিক এলাকায় থাকবে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা। ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নিরাপদ করতে যানজট নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি রোধসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ১৫টি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। ঢাকা শহরে ২৩টি কোরবানির পশুর হাটের নিরাপত্তায় নেওয়া হয়েছে কঠোর ব্যবস্থা। হাটের কারণে যেন যানজট সৃষ্টি না হয় সেদিকেও নজর রাখছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ঈদের ছুটিতে রাজধানীর নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যাপ্তসংখ্যক সদস্য মোতায়েন থাকবে। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) জানিয়েছে, জাল টাকার বিস্তার ও লেনদেন ঠেকাতে পশুর হাটগুলোতে সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সান্ধ্যকালীন ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অর্থ বহনে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের সহযোগিতায় মানি স্কর্ট প্রদান করা হবে। প্রতিটি পশুর হাটে অস্থায়ী পুলিশ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপনসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে ডিএমপির উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মাসুদুর রহমান জানান, ঈদের ছুটিতে রাজধানী অনেকটা ফাঁকা হয়ে যায়। এ কারণে চুরিসহ নানা অপরাধ সংঘটিত হতে পারে। রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকায় ছিনতাইকারীরা এ সময় তত্পর হয়ে ওঠে। সব ধরনের অপরাধ ঠেকাতে বাসাবাড়ি, শপিংমল ও জুয়েলারি দোকানসহ সর্বত্র বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকবে। ঈদের দিন রাজধানীর বিভিন্ন ঈদগাহে সাদা পোশাকের গোয়েন্দাসহ মোতায়েন থাকবে বিপুলসংখ্যক পুলিশ।

শোলাকিয়ার ঈদুল আজহায় এবার বিশেষ নিরাপত্তা : কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, গত ঈদুল ফিতরের দিন জঙ্গি হামলার প্রেক্ষাপটে প্রশাসন এবার শোলাকিয়ায় বিশেষ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। প্রতিবারের মতো এবারও ঈদুল আজহার বড় জামাত অনুষ্ঠিত হবে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায়। এটি হবে ১৮৯তম ঈদুল আজহার জামাত।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সকাল ৯টায় জামাত শুরু হবে। জামাতে ইমামতি করবেন ইসলাহুল মুসলিমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাস জানান, ঈদুল ফিতরের দিন সন্ত্রাসী হামলা যে সাহসিকতার সঙ্গে আমরা মোকাবিলা করেছি, সে অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আমরা এবার কয়েক স্তরে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সাজিয়েছি। সার্বিক নিরাপত্তায় তিন প্লাটুন বিজিবি ছাড়াও র‌্যাব, পুলিশ এবং সাদা পোশাকে গোয়েন্দারা সক্রিয় থাকবে। ঈদগাহ কমিটির পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবকও দেওয়া হবে। পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন খান জানান, ঈদ জামাতকে কেন্দ্র করে তিন স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মাঠে প্রবেশ করতে মুসল্লিদের তিনটি স্তরে তল্লাশির মধ্যদিয়ে প্রবেশ করানো হবে। তাছাড়া মাঠের ভিতরে পোশাকে ও সাদা পোশাকে পুলিশ থাকবে। বিজিবি ও র‌্যাবের টহলদলও থাকবে। ওয়াচ টাওয়ার ও সিসি ক্যামেরা দিয়ে সবার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হবে। সার্বিক নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে মুসল্লিরা ঈদগাহে নামাজ আদায় করতে পারবেন।

সর্বশেষ খবর