সোমবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

চরে চরে হবে শিল্পাঞ্চল

নদী ও বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠা চর পড়ে থাকবে না

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

চরে চরে হবে শিল্পাঞ্চল

দেশের নদ-নদী ও বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠা চরাঞ্চল আর পতিত থাকবে না। ওই চরগুলোর ভূমির উন্নয়ন করে সেখানে পরিবেশ উপযোগী শিল্পনগরী গড়ে তুলবে সরকার। এ লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)-কে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় প্রশাসন।

জানা গেছে, এরই মধ্যে পরিকল্পিত শিল্পনগরী গড়ে তোলার উপযোগী কিছু চরের জমি উন্নয়নের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের অনুকূলে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। আরও কয়েকটি এলাকার জমি নির্বাচন করা হয়েছে, যেগুলোর অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ওই জমির বন্দোবস্ত চাইছে অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ।

শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার জন্য প্রাথমিকভাবে যেসব এলাকা নির্বাচন করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে—সিরাজগঞ্জ ও যমুনা নদীতে জেগে ওঠা চর। যমুনা নদীর বঙ্গবন্ধু সেতুসংলগ্ন এলাকায় অব্যবহূত জমি ও জেগে ওঠা চর। চট্টগ্রামের মিরসরাই, সাধুরচর, পীরের চর এবং চর মোশাররফ এবং ফেনীর সোনাগাজীতে শিলাঞ্চল স্থাপনের লক্ষ্যে এরই মধ্যে জমি বন্দোবস্ত নিয়ে কাজ শুরু করেছে বেজা। টেকনাফের জালিয়ার চর ও সেন্ট মার্টিন এলাকায় টুরিজম পার্ক স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী এবং তত্সংলগ্ন অবস্থিত চরাঞ্চলেও শিল্পাঞ্চল স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। বেজা সূত্র জানিয়েছে, মহেশখালী ও মাতারবাড়ী সংলগ্ন জেগে ওঠা চরে শিল্পাঞ্চল স্থাপনের জন্য ভূমির বন্দোবস্ত প্রয়োজন।

সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় শিল্প উন্নয়ন পরিষেদের দ্বিতীয় সভায় চরাঞ্চলে পরিকল্পিত শিল্পনগরী গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়। গত বছরের ১৬ আগস্ট অনুষ্ঠিত ওই সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, চরের নিষ্কণ্টক অব্যবহূত জমিতে ওই এলাকার উপযোগী পরিবেশসম্মত শিল্প বা শিল্পনগরী স্থাপনের উদ্যোগ নিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর ওই নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে গত ৭ আগস্ট শিল্প মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক হয়। জাতীয় শিল্প উন্নয়ন পরিষদের নির্বাহী কমিটির ওই সভায় শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, চরাঞ্চলে পরিবেশ উপযোগী মনোটাইপ ক্লাস্টার শিল্প স্থাপনে জমি প্রাপ্যতার বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয় এবং জেলা প্রশাসকরা আরও তত্পর হতে পারেন। এ জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন তিনি। ওই সভায় সম্ভাব্য যেসব চরে শিল্পনগরী গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে সেগুলোর বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরেছে বেজা।

সিরাজগঞ্জ ও বঙ্গবন্ধু সেতুসংলগ্ন এলাকা : বেজা বলেছে, বঙ্গবন্ধু সেতু ও তত্সংলগ্ন এলাকা অব্যবহূত জমি অর্থনৈতিক অঞ্চল সৃষ্টির উপযোগী। উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা এবং স্থল, নৌ ও রেল যোগাযোগের সুযোগ থাকায় ওই এলাকা এবং যমুনার বুকে জেগে ওঠা চরে শিল্পোন্নয়নে ব্যবহূত হতে পারে বলে মনে করছে বেজা। সেতু নির্মাণজনিত কারণে নদী শাসন কার্যক্রম এবং কেপিটাল ড্রেজিংয়ের ফলে পুনরুদ্ধারকৃত ভূমি এবং পার্শ্ববর্তী চরসমূহ বন্দোবস্ত প্রদানের মাধ্যমে ওই অঞ্চলে শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলা সম্ভব হবে। এরই মধ্যে সিরাজগঞ্জ বঙ্গবন্ধু সেতুসংলগ্ন স্থানে সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছে বেজা।

বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠা চর : বঙ্গোপসাগরের উপকূল ঘেঁষে কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী এবং তত্সংলগ্ন অবস্থিত চরাঞ্চলে কৌশলগত কারণে অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলা কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বেজা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন এই সংস্থাটি জানায়, মহেশখালী চ্যানেলের নিকটবর্তী এ এলাকা বদরখালি সেতু দ্বারা সংযুক্ত। ওই চরাঞ্চলে শিল্প স্থাপন হলে সেখানে প্রস্তাবিত মাতারবাড়ী তাপ ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। নদীপথে সহজ যোগাযোগের কারণে শিল্প স্থাপন ত্বরান্বিত হবে। পাশাপাশি শিল্পের কাঁচামাল ও উৎপাদিত পণ্য পরিবহনও সহজ হবে। এ ছাড়া মহেশখালী চ্যানেল পুনঃখনন হলে একদিকে যেমন নৌপথে নাব্য বৃদ্ধি পাবে অন্যদিকে খননকৃত মাটি দ্বারা ভূমি উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ সাশ্রয়ী হবে। মাতারবাড়ী ও ধলঘাটায় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব বর্তমানে বিবেচনাধীন আছে বলে জানায় বেজা।

জালিয়ার দ্বীপ : টেকনাফ স্থলবন্দরের পূর্ব পাশে নাফ নদীতে জেগে ওঠা চরভূমি একটি পর্যটন সম্ভাবনাময় অঞ্চল। প্রায় ২৭২ একর জমি সমৃদ্ধ জালিয়ার দ্বীপটিতে বনায়ন ব্যতীত চর ভরাট জমির পরিমাণ ২৭১ দশমিক ৯৩ একর। বেজা বলেছে, এরই মধ্যে টেকনাফের সাবরং-এ একটি টুরিজম পার্ক স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। জালিয়ার দ্বীপটি পর্যটন সম্ভাবনাময় হওয়ায় সাবরং, জালিয়ার দ্বীপ ও সেন্ট মার্টিন এলাকায় পর্যটন অঞ্চল স্থাপন করা সম্ভব। জালিয়ার দ্বীপের জমি বেজার অনুকূলে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে।

মিরসরাই : চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল এবং খাসজমিতে মিরসরাই ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিস্ট্রিক্ট স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। এ লক্ষ্যে সাধুরচর, পীরের চর এবং চর মোশাররফের সাত হাজার ১৩৮ একর জমি ইতিমধ্যে বেজার অনুকূলে বন্দোবস্ত প্রদান করা হয়েছে। ওই জমিতে পরিকল্পিতভাবে অর্থনৈতিক জোন স্থাপনের কার্যক্রম এগিয়ে চলছে।

সোনাগাজী : ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার প্রায় সাত হাজার ২২০ একর জমিতে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য এরই মধ্যে স্থান নির্বাচন করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় চার হাজার ৫১৩ একর জমি বেজার অনুকূলে বন্দোবস্ত প্রদান করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের সহায়তাপুষ্ট একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ওই এলাকার অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ চলছে বলে জানিয়েছে বেজা।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর