শনিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

ধুলোবালিতে বাড়ছে শ্বাসকষ্ট ও গলারোগ

হঠাৎ জ্বর, কাশি ও কণ্ঠ স্তব্ধ, সতর্ক থাকার পরামর্শ চিকিৎসকদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

ধুলোবালিতে বাড়ছে শ্বাসকষ্ট ও গলারোগ

রাজধানীর অনেক সড়কে এ রকম ধুলা ওড়ে। নাক-মুখ ঢেকে চলেন পথচারীরা। মিরপুর থেকে তোলা ছবি —রোহেত রাজীব

শীত মৌসুমে বৃষ্টি না হওয়ায় বাতাসে বাড়তে থাকে ধুলার পরিমাণ। আর এ ধূলিময় বাতাস নিঃশ্বাসের সঙ্গে মিশে জ্বর, গলা ফোলা, কাশি ও কণ্ঠ স্তব্ধ হয়ে যাওয়ার মতো রোগের জন্ম দিচ্ছে। আবার অনেক সময় হঠাৎ করেই স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে কণ্ঠস্বর। হাঁচি, কাশি বা চিৎকার কোনো শব্দই আসছে না গলা দিয়ে। এর কারণ হিসেবে মানসিক অবসাদকে চিহ্নিত করছেন বিশেষজ্ঞরা।

গতকাল সরেজমিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আউটডোরে নাক-কান-গলা রোগ বিভাগে গিয়ে দেখা যায় নারী ও পুরুষের আলাদা লাইন ছয়টি। প্রতিটিতে ৪০-৪৫ জন করে দাঁড়িয়ে। তাদের সমস্যা বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে জানা যায়, অধিকাংশেরই সমস্যা গলায়। অনেকের গলা ফুলে গেছে, কারও আবার গলা দিয়ে কোনো স্বরই বের হচ্ছে না; আবার দীর্ঘদিন চিকিৎসা না করায় ইনফেকশন হয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। নাক-কান-গলা রোগের কাউন্টারে দায়িত্বে থাকা কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সারা বছর এ ধরনের রোগীর দেখা তেমন একটা মেলে না। তবে শীত এলে রোগীর চাপ সামলানো কঠিন হয়ে যায়। শিশু-বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণী কেউই রেহাই পান না এই গলা ফোলা রোগ থেকে। সাভারের জিরাবো থেকে স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছেন আহমদ আলী। কী সমস্যা জানতে চাইলে বলেন, ‘প্রতি বছর ঠাণ্ডা মৌসুমে আমার মেয়ের গলা ফুলে প্রচণ্ড ব্যথা হয় এবং স্তব্ধ হয়ে যায় কণ্ঠস্বর। যন্ত্রণায় পানি পর্যন্ত খেতে পারে না। অ্যালার্জির কারণে তার এ সমস্যা হয় বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। কিন্তু কোনো স্থায়ী সমাধান না পাওয়ায় মেয়েটাকে প্রতি বছরই যন্ত্রণায় কষ্ট পেতে হয়।’

এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং প্রখ্যাত নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, শীতের সময় ধুলাবালু, ঠাণ্ডা আবহাওয়া বা অ্যালার্জির কারণে গলা ফুলে যাওয়া, স্বর ভেঙে যাওয়া বা কণ্ঠস্বর স্তব্ধ হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে। সে ক্ষেত্রে গরম পানি বা ধুলাবালু পরিহার করে যদি না কমে তাহলে খুব দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

শুধু যে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা আবহাওয়ার কারণে গলা ফুলে যায় বা কণ্ঠস্বর রোধ হয় তা নয়, মানসিক অবসাদেও রোধ হতে পারে কণ্ঠস্বর। আবার যারা বেশি জোরে কথা বলেন তাদেরও এ সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। এ ধরনের রোগে আক্রান্ত পেশাজীবীদের মধ্যে গায়ক, রাজনীতিবিদ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, সাহিত্যিক, আইনজীবী এবং সাংবাদিকের সংখ্যা বেশি বলে জানান স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের নাক-কান-গলা রোগ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মণিলাল আইচ লিটু। তিনি বলেন, ঠাণ্ডা বা অ্যালার্জির কারণে যদি কণ্ঠস্বর স্তব্ধ হয় তাহলে কথা না বলতে পারলেও হাঁচি বা কাশি দিতে পারবেন। কিন্তু মানসিক অবসাদের কারণে যদি কণ্ঠস্বর স্তব্ধ হয় তাহলে গলা দিয়ে কোনো শব্দই বের হবে না। এসব ক্ষেত্রে সময় নষ্ট না করে খুব দ্রুত চিকিৎসকরে পরামর্শ নিতে হবে বলে জানান এই বিশেষজ্ঞ।

সর্বশেষ খবর