বুধবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

বিকল্পধারা চায় সংসদের প্রতিনিধি নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার

ইসির সঙ্গে সংলাপ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বর্তমান সংসদের ‘বৈধতা নিয়ে’ প্রশ্ন তুলে নবম সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দল নিয়ে নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। গতকাল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। এ ছাড়া বিচারিক ক্ষমতা ছাড়া ৪৫ দিনের জন্য সেনা মোতায়েন, ‘না ভোট’ প্রদানের ব্যবস্থা রাখা, সীমানা পুনর্নির্ধারণ না করা ও ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা ও নিরাপত্তায় নিয়োজিতদের ধর্মীয় গ্রন্থ ছুঁয়ে শপথ নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে দলটি। এদিকে বিকালের সংলাপে অংশ নিয়ে জাতীয় নির্বাচনে ঢালাওভাবে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দরকার নেই বলে মত দিয়েছে ইসলামী ঐক্যজোট। দুই দলের সংলাপে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে নির্বাচন কমিশনার, ভারপ্রাপ্ত সচিবসহ সংশ্লিষ্টরা অংশ নেন।

নির্বাচনকালীন সরকার চায় বিকল্পধারা

সকালে এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বসে। দলটি মনে করে, বর্তমান দশম সংসদের সসদ্যরা বেশির ভাগই বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়ায় একে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বলা যায় না। দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে জানতে চাইলে বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, ‘আমরা এ ব্যাপারে ইসিকে প্রস্তাব দিইনি। এটা তাদের এখতিয়ারে নেই; এটা সরকার করতে পারে। তবে নবম সংসদের প্রতিনিধি নিয়ে করা যেতে পারে। কারণ সে নির্বাচন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল।’ তিনি জানান, চলতি সরকারের কোনো বৈধতা রয়েছে কিনা তা মৌলিক প্রশ্ন। কারণ অনেক জায়গায় নির্বাচন হয়নি। এর আগের যে সরকার ছিল সেটা গ্রহণযোগ্য। গতবারের নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রস্তাব দিয়েছিলেন খালেদা জিয়াকে আপনি হোম মিনিস্ট্রি নিন, জনপ্রশাসন নিন। আরও একটি মন্ত্রণালয়ের কথা বলেছিলেন। সেই নবম সংসদের সদস্যদের নিয়ে সর্বদলীয় সরকার গঠন করা যেতে পারে। যে তিনটি মন্ত্রণালয় দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল সেগুলো যদি নবম সংসদের প্রধান বিরোধী দলকে দেওয়া হয় তাহলে নবম সংসদের প্রতিনিধি নিয়ে যে সরকার গঠন করা হবে তা প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার হবে। সেই সরকার ‘সর্বদলীয় সরকার’, তারা নির্বাচনকালীন দায়িত্ব পালন করতে পারবে বলে মনে করেন বিকল্পধারা প্রেসিডেন্ট। ফের সীমানা পুনর্নির্ধারণ না করা, বিচারিক ক্ষমতা ছাড়া সেনা মোতায়েন করা, ‘না ভোট’ চালুসহ ১৩ দফা সুপারিশ করেছে বিকল্পধারা বাংলাদেশ। বদরুদ্দোজা চৌধুরী জানান, নির্বাচনের এক মাস আগে সেনাবাহিনীকে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত রাখতে হবে। তবে বিচারিক ক্ষমতা সেনাবহিনীর প্রয়োজন নেই। সংসদীয় এলাকার সীমানা নিয়ে দলটি জানায়, প্রতিবারই জাতীয় নির্বাচনের আগে কিছু কিছু সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হয়। এতে বিভিন্ন বিতর্ক ও জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এ মুহূর্ত থেকে আর কোনো সীমানা পুনর্নির্ধারণের প্রয়োজন নেই। ‘না ভোট’ চালু, ভোটের ছয় মাস আগে অভিযোগ নিষ্পত্তি কার সুপারিশও করেছে বিকল্পধারা।

জনসমক্ষে শপথ : নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্টদের ধর্মীয় গ্রন্থ ছুঁয়ে শপথ করানোর প্রস্তাব দিয়েছে দলটি। এতে বলা হয়, প্রত্যেক নির্বাচনী কেন্দ্রে যারা দায়িত্ব পালন করবেন— ইউএনও, ওসি, প্রিসাইডিং অফিসার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য তারা জনসমক্ষে প্রকাশ্যে পবিত্র কোরআন/গীতা/বাইবেল ও ত্রিপিটক ছুঁয়ে নিরপেক্ষতা ও আন্তরিকতার শপথ নেবেন। আর নির্বাচনে এজেন্ট নিয়োগের প্রথাও তুলে দিতে প্রস্তাব করেছে দলটি।

ঢালাওভাবে সেনা মোতায়েন নয় : জাতীয় নির্বাচনে ঢালাওভাবে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দরকার নেই বলে মত দিয়েছে ইসলামী ঐক্যজোট। প্রয়োজন হলে স্পর্শকাতর এলাকায় তাদের মোতায়েন করার কথা বলেছে দলটি। গতকাল বিকালে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে ১১ দফা প্রস্তাব পেশ করে ঐক্যজোট। চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামীর নেতৃত্বে ১৭ সদস্যের প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নেয়। দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে দলটির চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ নেজামী বলেন, ‘নির্বাচনের সময় প্রতিটি নির্বাচনী এলাকা মূল্যায়ন করে প্রয়োজনে স্পর্শকাতর এলাকায় সেনাবাহিনী নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। তবে ঢালাওভাবে সেনাবাহিনী নিয়োগ করার প্রয়োজন নেই বলে আমরা মনে করি।’

লিখিত প্রস্তাব তুলে ধরে তিনি জানান, ইসির উদ্যোগে প্রার্থীর নাম, দল ও প্রতীকের উল্লেখসংবলিত অভিন্ন পোস্টারের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এতে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল যোগ্য প্রার্থীরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ পাবেন। নির্বাচনে অনৈতিকভাবে জেতার প্রয়াসকে প্রতিহত করা; পোলিং বুথে সব প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের নির্ভয়ে কাজ করার পরিবেশ নিশ্চিত করা, প্রতিটি কেন্দ্রের নির্বাচনী ফলাফল জনসমক্ষে ঘোষণা করা এবং প্রত্যেক প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের সার্টিফিকেট ইস্যু বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাবও রয়েছে দলটির।

 ইসলামী ঐক্যজোটের অন্য প্রস্তাবগুলো হলো : নির্বাচনী বিরোধ তিন মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করা, নির্বাচন কালো টাকা, পেশিশক্তির প্রভাবমুক্ত রাখা, নৈতিক স্খলনের অভিযোগে দণ্ডিত ব্যক্তিদের দুই বছর পর সংসদ নির্বাচনে প্রার্থিতার সুযোগ বাতিল করা; যেসব দল ৩০-এর বেশি প্রার্থী মনোনয়ন দেবে সেসব দলকে বেতার-টিভিসহ সরকারি প্রচারমাধ্যমে নির্বাচনী প্রচার চালানোর সুযোগ দেওয়া, রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কমিশন থেকে প্রত্যাহার করতে হবে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আবদুল লতিফ নেজামী বলেন, কোন সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে তা ঠিক করবে সরকার। এখানে নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার নেই। ইসি ঘোষিত কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এর আগে ৩১ জুলাই নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি এবং ১৬ ও ১৭ আগস্ট গণমাধ্যমের প্রতিনিধির সঙ্গে মতবিনিময়ের পর ২৪ আগস্ট থেকে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ চলছে। অক্টোবরের মধ্যে সবার সঙ্গে মতবিনিময় শেষ করা কথা রয়েছে।

সর্বশেষ খবর