রাগ-অনুরাগ, প্রেম, অভিযোগ বা খুনসুটি- এসব অনুভূতির সমষ্টির নামই হয়তো ভালোবাসা। আর এই ভালোবাসাকে পুঁজি করেই বিক্রি হয়েছে কোটি কোটি টাকার ফুল। গত দুই দিনে রাজধানীর অন্যতম বৃহৎ ফুলবাজার শুধু শাহবাগেই বিক্রি হয়েছে ৫০ কোটি টাকার বেশি। গতকাল সন্ধ্যায় এ তথ্য জানিয়েছেন শাহবাগ বটতলা ক্ষুদ্র ফুল ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি সাদেকুর রহমান সাদেক। শাহবাগ ছাড়াও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে রাজধানীর অন্য ফুল বাজারগুলোতে ছিল ব্যস্ততার ছোঁয়া। ক্রেতার হাতে তরতাজা ফুল পৌঁছে দিতে তোড়জোড় ছিল ব্যবসায়ীদের মধ্যে। ছোট-বড় বিভিন্ন সড়কে অস্থায়ী ফুলের দোকানও ছিল অসংখ্য। প্রিয়জনের মুখে একটু খুশির আবহ জাগাতে এসব দোকানেই ভিড় জমান বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। রাজধানীর আগারগাঁও, শাহবাগ ও ফার্মগেট ফুলবাজার ঘুরে জানা যায়, বেশির ভাগ ফুল যশোরের গদখালী থেকে কেনা। এ ছাড়া সাভার, আশুলিয়া, মিরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও নারায়ণগঞ্জ থেকেও আনা হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ফুল। ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে সারা দেশে ফুলের চাহিদা হওয়ায় দাম ছিল বেশি। এ ছাড়া পরিবহন খরচ ফুলের বান্ডিলপ্রতি অন্য সময়ের থেকে বেড়েছে ২০০-২৫০ টাকা, যার প্রভাব পড়েছে ফুলের সব বাজারে।
দাম যেমনই হোক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থান, টিএসসি, শাহবাগ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ধানমন্ডি লেক, রবীন্দ্র সরোবরসহ নগরীর বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে সকাল থেকেই লক্ষ্য করা গেছে তরুণ-তরুণীদের ভিড়। একসঙ্গে তারা ফুলের ঘ্রাণও ছড়াতে থাকে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শাহবাগ এলাকার ছোট-বড় অন্তত ১০০টি ফুলের দোকানে গোলাপ (চায়না, থাই, ইন্ডিয়ান), ¯েœাবল, গ্ল্যাডিওলাস, অর্কিড, লিলি, জারবেরা, টমপম, ক্যালেন্ডুলা, জিপসি অস্টার ও রজনীগন্ধাসহ নানা ধরনের ফুল স্থান পায়। তবে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে লাল গোলাপ। প্রতিটি গোলাপের মানভেদে দাম ছিল ১৫ থেকে ৩০ টাকা। জারবেরা ১৫ থেকে ১৮ টাকা, গ্ল্যাডিওলাস ৮ থেকে ১২ টাকা ও রজনীগন্ধা ৬ থেকে ৮ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। ফুল ব্যবসায়ী নেতা সাদেকুর রহমান সাদেক এ প্রতিবেদককে জানান, চাষিদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিলে তাজা ফুলের ব্যবসা আরও সম্ভাবনাময় পর্যায়ে পৌঁছবে। দেশের অর্থ দেশেই রাখতে চায়না প্লাস্টিক ফুল আমদানি বন্ধেরও দাবি করেন তিনি। বিভিন্ন জাতীয় দিবসের মতোই ভালোবাসা দিবসকেও ফুলের ব্যবসার সবচেয়ে বড় সুযোগ বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, এবার তিন দিবস, অর্থাৎ পয়লা ফাল্গুন, বিশ্ব ভালোবাসা ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘিরে সারা দেশে প্রায় ১৫০ কোটি টাকার ফুলবাণিজ্য হবে। এ জন্য আগ থেকে মাঠপর্যায়ের চাষি থেকে শুরু করে পাইকারি ও খুচরা ফুলের বাজারে নেওয়া হয় পুরোদমে প্রস্তুতি।
জানতে চাইলে নাঈম পুষ্প বিতানের নাঈমুর রহমান জানান, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় দেশে ফুলের উৎপাদন ভালো হয়েছে।