রবিবার, ৩১ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

ব্যাংকার্স সভার সিদ্ধান্ত ৯ মাসেও বাস্তবায়ন হয়নি

কাগজশিল্প রক্ষায় পদক্ষেপ

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের কাগজশিল্প রক্ষায় ব্যাংকার্স সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি গত ৯ মাসেও। চাহিদা অনুযায়ী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এ শিল্পে অর্থায়ন ও নতুন শিল্পের আবেদন-সংক্রান্ত পরিপূর্ণ তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকে সরবরাহ করেনি। ফলে ব্যাংকার্স সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নও ঝুলে আছে। অভিযোগ রয়েছে, এখনো ব্যাংকগুলো এ শিল্পের নতুন প্রকল্পে যথাযথ সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়াই অর্থায়ন করছে। এতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে পেপার মিলের সংখ্যা, যা এ খাতে অসুস্থ প্রতিযোগিতা তৈরি করছে। জানা যায়, গত বছর ২ জুলাই দেশের সব তফসিলি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সভায় (ব্যাংকার্স সভা) কাগজশিল্প রক্ষায় দুটি সিদ্ধান্ত হয়। প্রথমত, কাগজ মিলগুলোকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষায় এ খাতে নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের আবেদন পাওয়ার পর ব্যাংকগুলো প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইপূর্বক অর্থায়ন করবে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ পেপার মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমএ) প্রেরিত তথ্যাদি যাচাইয়ের নিমিত্তে যেসব ব্যাংক এরই মধ্যে কাগজশিল্পে ঋণ প্রদান করেছে ওই ঋণের ডিসেম্বর-২০১৭ ভিত্তিক স্থিতি, বর্তমান স্ট্যাটাস ও আদায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ পরবর্তী ব্যাংকার্স সভায় উপস্থাপন করবে। কিন্তু কিছু ব্যাংক তথ্য দাখিল না করায় ব্যাংকার্স সভায় নেওয়া এ দুটি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশের সব ব্যাংকের কাছে তথ্য চাওয়া হলেও এখন পর্যন্ত প্রায় ২০ শতাংশ ব্যাংক তাদের তথ্য দাখিল করেনি। আবার যারা দাখিল করেছে, তারাও কেবল এই শিল্পে প্রদত্ত ঋণ স্থিতি ও আদায় পরিস্থিতি জানিয়েছে। নতুন শিল্পের আবেদন তাদের কাছে জমা রয়েছে কি না বা নতুন শিল্পে অর্থায়ন করছে কি না তা জানানো হয়নি। এতে এই শিল্পে ব্যাংকগুলোর অংশগ্রহণ-সংক্রান্ত প্রকৃত চিত্র উঠে আসছে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত ১২৯টি কাগজশিল্পে ৩১টি বাণিজ্যিক ব্যাংক অর্থায়ন করেছে। অর্থায়নের পরিমাণ ছয় হাজার ১১২ কোটি টাকা। তবে এ খাতের কোনো নতুন শিল্পের আবেদন ব্যাংকগুলোর কাছে জমা রয়েছে কি না এ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে নেই। সূত্র জানায়, গত বছর ২ জুলাই অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কয়েক দফা বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে তথ্য চেয়েও পায়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রথম দফায় গত বছর ১ আগস্ট ১০ কার্যদিবস সময় দিয়ে ব্যাংকগুলোকে তথ্য পাঠানোর অনুরোধ করা হয়। পরবর্তী সময়ে ১৮ অক্টোবর দ্বিতীয় দফায় পাঁচ কার্যদিবস সময় দিয়ে আবারও চিঠি পাঠানো হয়। ওই সময়ের মধ্যেও সব ব্যাংক এ-সংক্রান্ত তথ্য পাঠায়নি। ফলে পরবর্তী ব্যাংকার্স সভায় কাগজশিল্পের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে যে প্রতিবেদন দাখিলের কথা বলা হয়েছিল, সেটিও উপস্থাপিত হয়নি। গত বছর ১৯ ডিসেম্বর এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর চলতি বছর ৩ জানুয়ারি আরেকটি সভা হয়। কিন্তু ওই সভায়ও এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়নি। ব্যাংকগুলো থেকে পরিপূর্ণ তথ্য না পাওয়াই এ বিলম্বের কারণ। এর আগে গত বছরের শুরুতে দেশের কাগজশিল্প রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করে বিপিএমএর পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠির আলোকে ২০১৮ সালের ২ জুলাই অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভার আলোচ্যসূচিতে কাগজশিল্পের বিষয়টি স্থান পায়। ওই সভায় বিপিএমএর চিঠির ভাষ্য তুলে ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ও বর্তমান বিএফআইইউ প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান বলেন, কাগজশিল্প দেশের একটি স্বয়ংসম্পূূর্ণ খাত। দেশে এখন ছোট-বড় মিলে ১১০টির বেশি পেপার মিল রয়েছে। এসব মিলের উৎপাদন ক্ষমতা অভ্যন্তরীণ চাহিদার তুলনায় ২.৫ শতাংশ বেশি। দেশের কাগজ মিলগুলো সব ধরনের কাগজের দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করতে সক্ষম। কিন্তু স্থানীয় চাহিদার অপ্রতুলতা এবং তীব্র অসম প্রতিযোগিতার মুখে দেশীয় কাগজশিল্প ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, এ খাতে শিল্পোদ্যোক্তাদের বিশাল বিনিয়োগ ছাড়াও বিরাট অঙ্কের ব্যাংক ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান বলেন, বর্তমানে দেশে ৯২টি পেপার মিল চলমান থাকা সত্ত্বেও প্রতিনিয়ত পেপার মিলের সংখ্যা বাড়ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ব্যাংকের অর্থায়নের জন্য প্রদত্ত সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনে এ খাতের সার্বিক চিত্র প্রতিফলিত হয় না। ফলে বিদ্যমান মিলগুলোর প্রায় প্রতিটিই রুগ্্ণ মিলে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিপিএমএর এই পর্যবেক্ষণের আলোকে কাগজশিল্প রক্ষায় ওই দুটি সিদ্ধান্ত দেন সভার সভাপতি ও গভর্নর ফজলে কবির।

সর্বশেষ খবর