শুক্রবার, ২৪ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

দ্বিতীয় দিনেও ট্রেনের ই-টিকিটিংয়ে ভোগান্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক

দ্বিতীয় দিনেও ট্রেনের ই-টিকিটিংয়ে ভোগান্তি

বছর পেরিয়ে আবারও সেই চিরচেনা দৃশ্য। কেউ মধ্যরাত থেকে, কেউবা আবার আগের রাত থেকেই স্টেশনের কাউন্টারগুলোতে শুয়ে, বসে, বই পড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেছেন টিকিট নামক সোনার হরিণের জন্য। অবশেষে সেই অপেক্ষার সমাপ্তি। গতকাল সকাল ৯টা থেকে কমলাপুরসহ নির্ধারিত পাঁচটি স্টেশনে শুরু হয় ঈদে রেলের অগ্রিম টিকিট বিক্রি। আগাম টিকিট বিক্রির দ্বিতীয় দিন গতকাল স্টেশনে ভিড় করেন টিকিটপ্রত্যাশীরা। এদিন ১ জুনের জন্য মোট ২৫ হাজার ৫৭১টি অগ্রিম টিকিট ছাড়া হয়। বিশেষ ট্রেনের টিকিট এবং আগামী ২ জুনের বিক্রি শুরু হবে আজ শুক্রবার। ৩ ও ৪ জুনের টিকিট যথাক্রমে আগামীকাল শনিবার ও ২৬ মে দেওয়া হবে। তবে কোন স্টেশন থেকে কোন অঞ্চলের টিকিট দেওয়া হচ্ছে সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা না থাকায় অনেকেই পড়েন বিভ্রান্তিতে। মোবাইল অ্যাপে টিকিট না পাওয়াসহ প্রতিটি টিকিট বিক্রিতে বেশ সময় লাগছে বলে অভিযোগ করেন ক্রেতারা। সাধারণ টিকিট পাওয়া গেলেও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) কামরার টিকিট সকালেই শেষ হয়ে যায়। ফলে কাক্সিক্ষত টিকিট না পেয়ে ফিরে গেছেন অনেকে। অনলাইনে টিকিট কিনতে না পেরে অনেকে কাউন্টারে চলে আসেন। পঞ্চগড়গামী পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট কিনতে সাহরির আগ থেকে কমলাপুর স্টেশনে আসেন রাজু আহমেদ নামে এক ব্যক্তি। এ ছাড়া মোফাজ্জল নামে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা খুলনার চিত্রা এক্সপ্রেসের ১ জুনের টিকিটের জন্য তার বাসায় কম্পিউটারে দীর্ঘ সময় ধরে অনলাইনে টিকিট কাটার চেষ্টা করছিলেন। তিনি বলেন, ‘অনেকবার চেষ্টা করেও অনলাইনে টিকিট কিনতে পারিনি। এজন্য কমলাপুর চলে আসি। পরে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে কাক্সিক্ষত টিকিট হাতে পাই।’ সব কষ্ট আর অভিযোগ ছাপিয়ে টিকিট হাতে পেয়ে আনন্দের সীমা ছিল না লম্বা সারিতে থাকা টিকিটপ্রত্যাশীদের। দীর্ঘ অপেক্ষার পর টিকিট হাতে নিয়ে স্বস্তিতে ঘরে ফিরেছেন তারা। মমিনুল ইসলাম নামে একজন টিকিটপ্রত্যাশী বলেন, ‘এত কষ্ট করে টিকিট পেয়েছি, সে অনুভূতি ব্যক্ত করার মতো ভাষা নেই। এত খুশি, যা বলার মতো না।’ যাত্রীসেবার মান বাড়াতে এ বছরই প্রথম কমলাপুর, বিমানবন্দর, বনানী, তেজগাঁও এবং গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়ায় টিকিট বিক্রি কার্যক্রম সম্প্রসারিত করা হলেও পর্যাপ্ত প্রচার না থাকায় তা ভোগান্তির কারণ হয়েছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের। সবুর নামে একজন ভুক্তভোগী বলেন, ‘বিমানবন্দরে টিকিট না পেয়ে আবার এখানে (কমলাপুর) এসেছি।’ যে কোনো ধরনের অনিয়ম প্রতিরোধে এবং রেলস্টেশনগুলোর সার্বিক নিরাপত্তা রক্ষায় সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে রেলওয়ে পুলিশ। ঢাকা (কমলাপুর) রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াসিন ফারুক মজুমদার বলেন, ‘যাতে টিকিট কালোবাজারি বা অপরাধের সম্মুখীন না হয় তার জন্য আমরা সর্বক্ষণ প্রস্তুত আছি।’ জানা যায়, ঢাকা থেকে ৩৩টি আন্তনগর ও ৪টি বিশেষ ট্রেনসহ ৩৭টি ট্রেনের ২৮ হাজার ২২৪টি টিকিট বিক্রির জন্য বরাদ্দ রয়েছে। সবচেয়ে বেশি ১৩টি আন্তনগর ট্রেনের অগ্রিম টিকিট ছাড়া হয় কমলাপুর রেলস্টেশনে। এখান থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে যাতায়াতকারী ১৬টি ট্রেনের ১৪ হাজার ৯৫টি টিকিট বিক্রির জন্য বরাদ্দ রয়েছে।

এর মধ্যে কাউন্টার থেকে ৫ হাজার ৯৪৪টি এবং অনলাইন ও মোবাইল অ্যাপে ৮ হাজার ১৫১টি টিকিট বরাদ্দ রয়েছে। বিমানবন্দর স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী ৭টি আন্তনগর ট্রেনের ৪ হাজার ৮৭৯টি টিকিট বরাদ্দ রয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৫৪৮টি অনলাইনে ও ২ হাজার ৩৩১টি টিকিট কাউন্টার থেকে দেওয়া হবে। তেজগাঁও স্টেশন থেকে জামালপুরগামী ৫টি ট্রেনের ৩ হাজার ৪৪৪টি টিকিট বরাদ্দ রয়েছে। এর মধ্যে ৬৪৪টি অনলাইনে এবং ৬১৪টি কাউন্টারে। বনানী রেলওয়ে স্টেশন থেকে মোহনগঞ্জ রুটের দুটি ট্রেনের ১ হাজার ২৫৮টি টিকিট বরাদ্দ রয়েছে। এর মধ্যে ৬৪৪টি অনলাইনের, বাকি ৬১৪টি কাউন্টারের। ফুলবাড়িয়া পুরাতন রেলভবন থেকে সিলেট ও কিশোরগঞ্জ রুটের ৭টি আন্তনগর ট্রেনের ৪ হাজার ৫৪৮টি টিকিট বরাদ্দ রয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ২৫১টি অনলাইনের ও ২ হাজার ২৯৭টি কাউন্টারের।

সর্বশেষ খবর