শনিবার, ১৫ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

দূষণে বিপন্ন জনজীবন

প্লাস্টিক দূষণে বছরে ক্ষতি ৬ হাজার কোটি টাকা ♦ বায়ু পানি ও পরিবেশ দূষণে ক্ষতি ৪২ হাজার কোটি টাকা ♦ সিসা আক্রান্ত রাজধানীর ৫৯ এলাকা

শফিকুল ইসলাম সোহাগ ও মাহবুব মমতাজী

দূষণে বিপন্ন জনজীবন

রাজধানীর সড়কে নাক-মুখ চেপে চলতে হয় -রোহেত রাজীব

অনিয়ন্ত্রিতভাবে প্লাস্টিকের ব্যবহার, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়নের ফলে বাংলাদেশের পরিবেশ মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার শহরের গরিব মানুষ ও শিশুরা। বায়ু, পানি ও কাজের পরিবেশের দূষণ এবং শিশুদের ওপর ভারী ধাতু সিসার প্রভাবে বছরে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা। আর ভয়ঙ্কর প্লাস্টিক দূষণে বছরে ক্ষতি হয় ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। 

সিটি করপোরেশনগুলো প্লাস্টিক বর্জ্যরে জন্য আলাদা গ্রেডিং ও ব্যবস্থাপনা না করায় গৃহস্থালির প্রাকৃতিক বা অরগানিক বর্জ্যও কাজে লাগানো যাচ্ছে না। প্রাকৃতিক বর্জ্যরে সঙ্গে মিশে এসব প্লাস্টিক ছড়িয়ে পড়ছে পরিবেশে। সরাসরি দূষণের পাশাপাশি জলাশয়ে মিশে জলজ প্রাণির জীবনচক্রে প্রভাব ফেলছে পলিথিন ও প্লাস্টিক। এ ছাড়া বায়ুদূষণে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ও ক্যান্সার বাড়ছে। এতে বছরে সোয়া লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। অর্থাৎ এক লাখ ২২ হাজার ৪০০ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে বায়ুদূষণে। 

যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা সংস্থা ইফেক্টস ইনস্টিটিউট এবং ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক অ্যান্ড ইভালুয়েশনের যৌথ পরিচালিত জরিপে বলা হয়, বায়ুতে ক্ষতিকর উপাদানের মধ্যে মানবদেহের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক উপাদান পিএম (ক্ষুদ্র বস্তুকণা) ২.৫ অন্যতম। ২০১৫ সালে বিশ্বে ৪২ লাখ মানুষ মারা যায় বায়ুদূষণের কারণে। বিশ্বব্যাংকের ‘বাংলাদেশ পরিবেশ সমীক্ষা-২০১৭’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, বায়ু, পানি ও কাজের পরিবেশের দূষণ এবং শিশুদের ওপর ভারী ধাতু সিসার প্রভাবে যে পরিমাণ ক্ষতি হয় তা দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ২ দশমিক ৭ শতাংশ। ৭১৯টি তৈরি পোশাক শিল্পের ওয়াশিং ও ডাইং কারখানা থেকে প্রতিদিন রাজধানীর চারপাশের নদীগুলোতে বর্জ্য এসে পড়ছে। এটি দূষণের অন্যতম উৎস। এক টন কাপড় উৎপাদন করার বিনিময়ে নদীতে ২০০ টন বর্জ্য পানি তৈরি করা হচ্ছে। এ ছাড়া আরও ছয় ধরনের শিল্পকারখানাকে দূষণের জন্য দায়ী করা হয়। ২০১৩-১৪ সালে বস্ত্র কারখানাগুলো ২৭০ হাজার কোটি লিটার দূষিত বর্জ্য পানি নির্গত করেছে। রাজধানীর পানি ও বায়ুদূষণের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গরিব মানুষ ও শিশুরা। কারণ রাজধানীর গরিব মানুষরা নদী ও খালের পারে বাস করে থাকে। রাজধানীর ৫৯টি এলাকাকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যা তীব্র মাত্রায় সিসা-আক্রান্ত বা হট স্পট। এসব এলাকার পানি ও মাটিতে আরও পাওয়া গেছে আর্সেনিক, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম, ক্ষুদ্র বস্তুকণা, কীটনাশক ও সালফার ডাই-অক্সাইডের মতো মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বস্তু। রাজধানীতে শুধু সিসা-দূষণের শিকার ছয় লাখ মানুষ। আর তার বেশির ভাগই শিশু। এ দূষণের কারণে এসব এলাকার শিশুরা স্নায়ুবিক ও মানসিক সমস্যার শিকার হচ্ছে। শিশুদের মেধার বিকাশ ও উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দূষণজনিত সমস্যা। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম-সম্পাদক শরিফ জামিল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঢাকার চারপাশে থাকা ইট-ভাটাগুলো বায়ুদূষণ করছে সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্পায়নের জন্য পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। এর জন্য অর্থনৈতিক পরিকল্পনাকে রিভিউ করতে হবে। পাশাপাশি উন্নয়ন পরিকল্পনাকে আরও সাটেইনাবল ও এডভান্স করতে হবে। ওয়েস্ট কনসার্ন নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হিসাবে দেখা গেছে, বছরে বাংলাদেশে অন্তত ১০ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদিত হচ্ছে যার বেশিরভাগ পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করা হয় না। শুধু প্লাস্টিক ও প্লাস্টিকজাত বর্জ্যরে কারণে বছরে ৬ হাজার ১৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর