হায় হায় কোম্পানি ‘চলন্তিকা যুব সোসাইটি’র নামে প্রায় শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। ডিপিএস ও এফডিআরের নামে গ্রাহকের কাছ থেকে সংগ্রহ করা আমানতের টাকা মালয়েশিয়ায় পাচারও হয়েছে। এ ঘটনায় মানি লন্ডারিং আইনে করা মামলায় চারজনকে খুলনা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ১৩ জুন চলন্তিকা যুব সোসাইটির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মিলন দাশ, এজিএম সজল দাশ, ডিএম প্রণব দাশ ও গণসংযোগ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান মিল্টনকে গ্রেফতার করা হয়। আগেই গ্রেফতার হয়ে জেলহাজতে রয়েছেন সোসাইটির চেয়ারম্যান খবিরুজ্জামান ও নির্বাহী পরিচালক সরোয়ার হুসাইন। এর আগে ১০ জুন নড়াইলের কালিয়া থানায় ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেন সিআইডির ইকোনমিক ক্রাইম স্কোয়াডের এসআই অলক চন্দ্র হালদার। মামলাটির তদন্তে রয়েছেন ইকোনমিক ক্রাইম স্কোয়াডের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আবু সাঈদ। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, চলন্তিকা যুব সোসাইটির চেয়ারম্যান খবিরুজ্জামান আত্মসাৎ করা টাকা নিজের পরিবার ও সন্তানদের খরচ দেখিয়ে মালয়েশিয়ায় পাঠিয়েছেন। আর চলন্তিকার নামে কেনা জমি নিজ নামে নিবন্ধন করেছেন। ২০০৪ সাল থেকে গত বছরের মার্চ পর্যন্ত প্রতারণা করে চলন্তিকার নামে আদায় করা টাকা বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করে স্থানান্তর ও রূপান্তর করেন। নড়াইলে প্রতারণার উদ্দেশ্যে পূর্বপরিকল্পিতভাবে চলন্তিকা যুব সোসাইটির কাজ শুরু হয়। নড়াইল জেলা পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন জানান, মামলাটি পুরোপুরিভাবে তদন্ত করছে সিআইডি। আর আসামি গ্রেফতারের বিষয়টিও দেখছেন তারা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনুসন্ধানে দেখা যায়, খবিরুজ্জামান ও চলন্তিকার নির্বাহী পরিচালক সরোয়ার হুসাইনের নামে খুলনায় ৪ কাঠা জমির ওপর চলন্তিকা টাওয়ার, হরিণটানা জিরো পয়েন্টে ১৮ কাঠা ও তার পাশের ঘেরে ১ একর ৭ শতক, আরাফাত প্রকল্পে ৩ কাঠা, ২.৭৫ কাঠা জমির ওপর বটিয়াঘাটা খুলনা ভবন, ১০ শতক জমির ওপর বেতাগী বাগেরহাট ভবন ও ৭ শতক জমির বাঁশবাগান, ফকির বাজারে ১০ শতক, চুনকাঠি বটতলা মন্দিরের পাশে টিনশেড ঘরসহ ১৮ শতক, ফয়সা বাজারে ১৮ শতক, ঘুনাপাড়া পলিটেকনিকের পাশে ১৩ শতক, মান্দারতলা হাইওয়ের পাশে ৮ শতক, সাতক্ষীরা বিসিকের বিপরীত পাশে ১৮ শতক, কালিয়া বাজারে ভবনসহ ১২ শতক ও কালকিনিতে ২৮ শতক ধানি জমি রয়েছে। এ ছাড়া সরোয়ার হুসাইনের নামে বুখারীপাড়ায় ১২ শতক ও ৪ শতক, তার স্ত্রী সাহিনা সরোয়ারের নামে লবণচরায় ৫ শতক জমি আছে। চলন্তিকার জিএম দিলিপ সাহা নড়াইলের কালিয়ায় শাখা অফিস খুলে ডিপিএস ও এফডিআরের নামে গ্রাহকের কাছ থেকে ৬ কোটি ৩৬ লাখ ৫৫ হাজার ৫৪০ টাকা আমানত সংগ্রহ করে আত্মসাৎ করেন। এজিএম সজল দাশ ও ডিএম প্রণব দাশ একই জেলার বড়দিয়ায় শাখা অফিস খুলে চলন্তিকার কার্যক্রম শুরু করেন। ডিপিএস ও এফডিআরের নামে গ্রাহকের কাছ থেকে ৪ কোটি ৭৪ লাখ ৩৯ হাজার ৭০০ টাকা আমানত সংগ্রহ করে আত্মসাৎ করে। মহাজনে শাখা অফিস খুলে এজিএম রতন ভট্টাচার্য ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা আমানত আত্মসাৎ করেন। গাজীরহাটে ডিএম বুদ্ধদেব বিশ্বাস শাখা অফিস খুলে ১ কোটি ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ টাকা আমানত সংগ্রহ করে আত্মসাৎ করেন। রূপগঞ্জে এজিএম সোহেল রানা শাখার কার্যক্রম শুরু করে ৮০ লাখ টাকার আমানত সংগ্রহ করে তা আত্মসাৎ করেন। বাগেরহাটের বেতাগীর ফকিরহাটে জিএম সুবীর দাস শাখার কার্যক্রম পরিচালনা করে প্রায় ৩ কোটি টাকার আমানত সংগ্রহ করে তা আত্মসাৎ করেন। একই জেলার কাটালীতে আরেকটি শাখায় ডিজিএম আছাদুল ইসলাম প্রায় দেড় কোটি টাকার আমানত সংগ্রহ আত্মসাৎ করেছেন। খুলনার বটিয়াঘাটা শাখার এজিএম অনিমেষ রায় প্রায় ৮ কোটি টাকার আমানত সংগ্রহ করে তা আত্মসাৎ করেছেন। ডুমুরিয়া শাখার জিএম আবদুল জলিল শেখ ২ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ ছাড়া নড়াইলের কালিয়া শাখার জিএম দিলিপ কুমার সাহা জিএম মিলন দাশ, সজল দাশ, সঞ্জয় কুমার দাশ, রতন কুমার ভট্টাচার্য ও ইকতার হোসেন ওই এলাকার লোকজনদের নিয়ে ২০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন। এর মাধ্যমে চলন্তিকা কৃষি সমবায় সমিতির নামে লাইসেন্স নিয়ে অবৈধভাবে ডিপিএস দেখিয়ে গ্রাহকের ৩০ লাখ টাকার আমানত আত্মসাৎ করেন। ২০০৪ সালে চলন্তিকা যুব সোসাইটি তাদের কার্যক্রম শুরু করে। এরপর ডিপিএস ও এফডিআরের নামে কোটি কোটি টাকা গ্রাহকের কাছ থেকে সংগ্রহ করে। মেয়াদ শেষে লাভসহ টাকা ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও না দিয়ে উল্টো তাদের সব অফিস বন্ধ করে দেন। আর বেতন নেওয়ার নাম করে মোটা অঙ্কের টাকা নিজেরা ভোগ করেন। সোসাইটির টাকা দিয়ে নামে-বেনামে সম্পত্তি কিনে বিলাসী জীবন-যাপন করতেন। এমনকি সোসাইটির নামে কম মূল্যের জমি বেশি দামে কেনার মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ করে তা স্থানান্তর করেন। সিআইডির মামলায় চলন্তিকা যুব সোসাইটির চেয়ারম্যান খবিরুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক সরোয়ার হুসাইন, সাবেক গণসংযোগ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান, নির্বাহী সদস্য শ ম আবদুস সোবাহান, মাসুদ পারভেজ শামীম, মনিরুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক রফিকুল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ আহম্মদ শেখ, খবিরুজ্জামানের স্ত্রী নাসরিন সুলতানা, সরোয়ার হুসাইনের স্ত্রী শাহিনা সরোয়ার, সদস্য তৌফিক আহম্মেদ, জিএম দিলিপ সাহা, মিলন দাশ, অসিত দাস, সজল দাশ ও প্রণব দাশকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০ জন পলাতক রয়েছেন।
শিরোনাম
- চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস খাদে, নিহত ২
- আবুধাবিতে সাড়ে ৮৩ কোটি টাকার লটারি জিতলেন প্রবাসী বাংলাদেশি
- দৈনিক কোটি টাকার চাঁদাবাজি
- আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি বেড়েছে ২১০০ কোটি টাকা
- এবার নির্বাচনে সেনাবাহিনীই ভরসা
- পিআর : দেশ কতটা প্রস্তুত
- বাবার হাত ছেড়ে রাস্তা পার হতে গিয়ে গাড়িচাপায় সন্তানের মৃত্যু
- বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় এসিড নিক্ষেপ, দুই নারী ও শিশু দগ্ধ
- এনএসডিএ'র নির্বাহী চেয়ারম্যান হলেন রেহানা পারভীন
- নারী পাচারে টোপ ‘ভালো চাকরি’
- মুগদায় ছিনতাইকারী সন্দেহে গণপিটুনি, হাসপাতালে তরুণের মৃত্যু
- মাতুয়াইলে ১০ তলার ছাদ থেকে পড়ে শিশুর মৃত্যু
- জুলাইয়ের বিপ্লবী ছাত্র-জনতা মব নয় : মাহফুজ আলম
- জাপানে ভূমিকম্পের মধ্যে সমুদ্রে ‘অদ্ভুত গর্জন’ শোনার দাবি
- ফ্যাসিস্টদের পুশইন করুন, বিচার করতে প্রস্তুত আমরা : নাহিদ
- শাকিবের আগামী ঈদের সিনেমা চূড়ান্ত
- এবার ‘ট্রাম্প সুগন্ধি’ বাজারে, বিতর্ক
- মহাসড়কে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ৮ ডাকাত গ্রেফতার
- পারমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তিতে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত ইরানের
- তিতাসে পাওনা টাকা নিয়ে রাজমিস্ত্রিকে রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যা, গ্রেফতার ২
হায় হায় কোম্পানির টাকা পাচার মালয়েশিয়ায়
মাহবুব মমতাজী
প্রিন্ট ভার্সন

টপিক
এই বিভাগের আরও খবর
সর্বশেষ খবর