মঙ্গলবার, ৬ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

জামালপুরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বন্যায় দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় সড়ক, সবজিসহ বিভিন্ন ফসল, বীজতলা, মাছ ও বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ভেঙে পড়েছে গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। বন্যায় দীর্ঘ দুই সপ্তাহ বসতভিটায় পানি থাকায় ঘরের খুঁটি-বেড়া নষ্টসহ আসবাবপত্র পচে যাওয়ায় চরম ক্ষতির শিকার হয়েছে বন্যাকবলিতরা। কাজকর্ম ও অর্থ না থাকায় এসব মেরামত করতে পারছে না মানুষ। শাক-সবজি, বীজতলাসহ ফসল নষ্ট হওয়ায় কৃষকও দিশাহারা হয়ে পড়ছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

গাইবান্ধা : বন্যায় গাইবান্ধা জেলায় মাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মাছ ও পোনা ভেসে যাওয়ায় মাছের খামার ও পুকুরগুলো মাছ ও পোনা শূন্য হয়ে পড়েছে। মৎস্য বিভাগ জানায়, এবারের বন্যায় জেলার ৭ উপজেলার ৭ হাজার ৫০টি পুকুর ও খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৬ হাজার ২৯০টি পুকুর ও ৭৬০টি খামার রয়েছে। বন্যায় খামারের ২ হাজার ৬০ মেট্রিক টন মাছ ও ১ কোটি ১১ লাখ পোনা ভেসে গেছে। অবকাঠামোগত ক্ষতি ২ কোটি ৬০ লাখ ৬৯ হাজার টাকা। এ নিয়ে মৎস্য খাতে মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। বগুড়া : বগুড়ার সোনাতলায় বন্যায় ৩৮ কিলোমিটার পাকা সড়ক খানাখন্দে পরিণত হয়েছে। ২টি কালভার্ট পানির তোড়ে উল্টে গেছে। এতে প্রায় ১৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। পথচারীদের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। এদিকে আগামী তিন মাসের মধ্যে সড়কগুলো সংস্কার করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দিয়েছেন স্থানীয় এমপি আবদুল মান্নান। ভয়াবহ বন্যায় বগুড়ার সোনাতলা পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নের প্রায় ৩৮ কিলোমিটার পাকা সড়ক খানাখন্দে পরিণত হয়েছে। বন্যার পানির স্রোতে সড়কগুলোর কার্পেটিং উঠে গিয়ে ছোটবড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সিরাজগঞ্জ : যমুনা নদী গিলছে বসতভিটা-ফসলি জমি। বাপ-দাদার ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ। তিন সপ্তাহের বন্যায় ২ শতাধিক বসতভিটা-ফসলি জমি বিলীন হয়েছে। গত পরশু রাতেই চৌহালী উপজেলার খাসপুকুরিয়া এলাকায় ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে ৭-৮টি বসতভিটা। এর আগে এনায়েতপুরের ব্রাহ্মণ ও আড়কান্দিতে অন্তত ১০টি বসতভিটা বিলীন হয়ে গেছে। সবকিছু হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্তরা অসহায়ত্বের মধ্যে দিনযাপন করছে। প্রতিষ্ঠান ও বসতভিটা ভেঙে যাওয়ায় শিশু শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটছে। বন্যায় বসতিভটায় পানি থাকায় ঘরের খুঁটি-বেড়া নষ্টসহ আসবাবপত্র পচে যাওয়ায় চরম ক্ষতির শিকার হয়েছে বন্যাকবলিতরা। প্রবল স্রোতের কারণে ঘর হেলে পড়েছে। কাজকর্ম ও অর্থ না থাকায় মানুষ মেরামত করতে পারছে না এসব। এ ছাড়া তাঁত কারখানাগুলো নষ্ট হওয়ায় শত শত শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। ফসল নষ্ট হওয়ায় কৃষকও দিশাহারা। জেলায় প্রায় ১৪৩ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহম্মেদ জানান, ‘ক্ষতিগ্রস্তের তালিকা ও ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের কাজ চলছে। কাজ শেষে মন্ত্রণালয়ে ক্ষতিপূরণের আবেদন জানানো হবে। মন্ত্রণালয় বরাদ্দ দিলে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ করা হবে।’

টাঙ্গাইল : কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক এমপি বলেছেন, ‘বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের মাঝে সরকার বিনামূল্যে বীজ, সার ও কীটনাশক এমনকি সরিষা, ভুট্টা ও শাক-সবজির বীজ বিতরণ করবে; যাতে কৃষক তার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারে। এ ছাড়া স্কুল, কলেজ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং রাস্তাঘাটের যে ক্ষতি হয়েছে তা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দ্রুত মেরামত করা হবে।’

গতকাল দুপুরে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে টেপিবাড়ী এলাকায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণকালে এসব কথা বলেন মন্ত্রী। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় এমপি তানভীর হাসান ছোট মনির, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক টাঙ্গাইল পৌর মেয়র জামিলুর রহমান মিরণ, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র সাহা, ভূঞাপুর পৌর মেয়র মাসুদুল হক তালুকদার প্রমুখ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর