বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

আট বিভাগে হচ্ছে মানব পাচার প্রতিরোধ ট্রাইব্যুনাল

লক্ষ্য মানব পাচার মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি

আরাফাত মুন্না

মানব পাচার অপরাধের দ্রুত বিচারের লক্ষ্যে দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে যাচ্ছে সরকার। ট্রাইব্যুনালগুলো গঠনের জন্য বিচারকসহ ৪৮টি পদ সৃজনের বিষয়ে এরই মধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এখন অর্থ মন্ত্রণালয় ও সুপ্রিম কোর্টের অনুমোদনের পরই ট্রাইব্যুনাল গঠনের বাকি কাজ সম্পন্ন করবে আইন মন্ত্রণালয়। আইন মন্ত্রণালয় সূত্র বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এসব ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর মানব পাচারের ঘটনায় করা সাড়ে চার হাজারেরও বেশি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির পথ খুলবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে করা মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য শিগগিরই ট্রাইব্যুনালগুলো গঠন করা হবে। ইতিমধ্যে আইন মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আশা করছি শিগগিরই এসব ট্রাইব্যুনাল গঠন করা সম্ভব হবে।’ জানা গেছে, মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে এসব মামলা পৃথকভাবে পরিচালনার জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের কথা বলা আছে। ২০১২ সালে আইন প্রণয়নের সাত বছর পর আলোর মুখ দেখছে এ ট্রাইব্যুনাল। বর্তমানে প্রতিটি জেলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মানব পাচার-সংক্রান্ত মামলার বিচার পরিচালিত হচ্ছে। এসব ট্রাইব্যুনালে নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলার চাপ বেশি থাকায় দীর্ঘায়িত হচ্ছে মানব পাচার মামলার বিচার। সুপ্রিম কোর্টের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী (৩০ জুন পর্যন্ত) সারা দেশে ৪ হাজার ৬০১টি মানব পাচারের মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ১৯৭টি মামলা ঝুলছে পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে। আটটি বিভাগের মধ্যে ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ২ হাজার ৬৪টি মানব পাচার মামলা বিচারাধীন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ৬৭৯টি, রাজশাহী বিভাগে ২৩৫টি, খুলনা বিভাগে ৮৩৩টি, বরিশাল বিভাগে ৩৮৫টি, সিলেট বিভাগে ২২৬টি, রংপুর বিভাগে ৫৮টি এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ১২১টি মানব পাচার মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

আইন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে যেসব মামলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন রয়েছে, মানব পাচার প্রতিরোধ ট্রাইব্যুনাল গঠন হলে ওই সব মামলাও সেখানে স্থানান্তর করা হবে। এতে উভয় ট্রাইব্যুনালে বিচারের গতি বাড়বে। উপকৃত হবেন বিচারপ্রার্থীরা।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, নতুন এ আট ট্রাইব্যুনাল গঠনের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব করা পদগুলো হচ্ছে- আটজন জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদার বিচারক, আটজন সাঁটলিপিকার-কাম-কম্পিউটার অপারেটর, আটজন বেঞ্চ সহকারী, আটজন গাড়িচালক, আটজন জারিকারক এবং এমএলএসএসের আটটি পদ।

‘মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২’-এর ২১ ধারা অনুযায়ী এসব ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হচ্ছে। আইনের ২১(১) ধারায় বলা হয়েছে, এ আইনের অধীন অপরাধগুলো দ্রুত বিচারের উদ্দেশ্যে সরকার সরকারি গেজেট দ্বারা দায়রা জজ বা অতিরিক্ত দায়রা জজ পদমর্যাদার বিচারকের সমন্বয়ে যে কোনো জেলায় মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। ২১(২) ধারায় বলা হয়েছে, উপধারা (১) অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল গঠিত না হওয়া পর্যন্ত সরকার প্রত্যেক জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালকে ওই জেলার মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল হিসেবে নিয়োগ ক্ষমতায়িত করতে পারবে।

আইনে ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার শেষের বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। আইনের এ-সংক্রান্ত ২৪(১) ধারায় বলা হয়েছে, এই আইনের অধীন সংঘটিত কোনো অপরাধের অভিযোগ গঠনের ১৮০ (এক শত আশি) কার্যদিবসের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল বিচারকাজ সম্পন্ন করবে। ২৪(২) ধারায় বলা হয়েছে, উপধারা (১)-এর বিধান সত্ত্বেও ওই সময়সীমার মধ্যে বিচারকাজ সম্পন্ন করতে ব্যর্থতা বিচারকাজকে বাতিল করবে না, কিন্তু ট্রাইব্যুনাল ওই সময়ের মধ্যে বিচারকাজ সম্পন্ন করতে সমর্থ না হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে ১০ (দশ) কার্যদিবসের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগে প্রতিবেদন প্রেরণ করবে। এ আইনে সংঘবদ্ধভাবে মানব পাচারের জন্য মৃত্যুদ-, যাবজ্জীবন কারাদ- ও সর্বনিম্ন সাত বছরের কারাদ- এবং অন্যূন পাঁচ লাখ টাকা অর্থদন্ডের বিধান আছে।

সর্বশেষ খবর