শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

প্রাইভেট ডিটেকটিভ

মির্জা মেহেদী তমাল

প্রাইভেট ডিটেকটিভ

রুদ্র মাহমুদ। এই নামের ফেসবুক আইডি খুললেই কাভার পেজে ভেসে ওঠে এক চৌকস ডিটেকটিভের ছবি। এরপর আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলে দেখা যায় সহজে কানাডা যাওয়ার নানা উপায় বাতলে দেওয়া পোস্ট। তিনি দীর্ঘ সময় ধরে বসবাস করেন কানাডায়। পেশায় ‘প্রাইভেট ডিটেকটিভ’। রুদ্র মাহমুদ নামের ফেসবুক আইডিতে লাখ লাখ ফলোয়ার। মানুষকে কানাডায় নিয়ে যাবেন বলে স্বপ্ন দেখান।

মূলত এসব পোস্ট দেখে প্রলুব্ধ হয়ে অনেকেই ইনবক্সে যোগাযোগ করেন তার সঙ্গে। কথা বলতে চান। প্রথমে ব্যস্ততার অজুহাতে কিছুটা অনীহা দেখান তিনি। একপর্যায়ে শুরু হয় কথোপকথন। আর এই কথোপকথনেই সর্বনাশ যা হওয়ার হয়ে যায় আগ্রহীদের।

কানাডা নিয়ে যাবে বলে আগ্রহীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নেন। এরপরে এই লোকটির ফোন বন্ধ থাকে। এমন অনেক ভুক্তভোগী বিষয়টি একপর্যায়ে পুলিশকে জানায়। পুলিশ বের করে নিয়ে আসে আসল তথ্য। রুদ্র মাহমুদ প্রকৃতপক্ষে বিদেশে লোক পাঠান না। তিনি একজন প্রতারক। নাম তার শহীদুল ইসলাম। পুলিশ তাকে রাজধানী থেকে পাকড়াও করে। বেরিয়ে আসে তার প্রতারণার নানা কাহিনী।

পুলিশ বলছে, রুদ্র মাহমুদ নামের এই আইডিটি কৌশলে হ্যাক করে দখলে  নিয়েছেন শহীদুল। পরে এই আইডির মাধ্যমেই প্রতারণা শুরু করেন তিনি। এমনকি বিশেষ একটি অ্যাপ ব্যবহার করে ঢাকায় বসেই কানাডার নম্বর ব্যবহার করে মানুষের সঙ্গে কথা বলতেন শহীদুল। এ ছাড়া নিজেকে কখনো মানবাধিকার কর্মী, কখনো সাংবাদিক, কখনো এনজিওকর্মী বলে পরিচয় দিতেন তিনি। পুলিশ জানায়, শহীদুল ইসলাম কানাডায় যেতে আগ্রহীদের যা বলেন, সর্বৈব মিথ্যা। শহীদুল নামের এই লোক মূলত একজন প্রতারক। প্রতারক শহীদুল খান পুলিশকে বলেন, ‘প্রথমে ৫২ হাজার টাকা নিতাম। এরপর ভিসা হবে কিংবা হয়েছে এমন কথা বলে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়েছি। একটা অ্যাপ আছে, সেটা দিয়ে যে কোনো দেশের নম্বর দিয়ে কথা বলা যায়।’ পুলিশের গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগ সূত্র জানায়, শহীদুলকে গ্রেফতারের পর ৩০ জনের সঙ্গে প্রতারণার তথ্য পেয়েছেন তারা। তবে পুলিশের ধারণা, এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি। শহীদুল শুধু নয়, এমনভাবে অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, যারা কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ফাঁদ তৈরি করে। সেই ফাঁদে পড়ে সাধারণ মানুষ সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসেছে।

গত মাসে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে টাকা আত্মসাৎকারী প্রতারক চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। তারা হলেন মো. বাপ্পী ইসলাম (৪৩), মো. নিয়াজুল ইসলাম (৫৪), এন এ সাত্তার (৫৮), মো. সাব্বির হাসান (২৪), মো. রাসেল হাওলাদার (২৪), মো. সোহরাব হোসেন সৌরভ (৩৮) ও মো. মোহাইমিনুল ইসলাম (৩৫)। এ সময় তাদের কাছ থেকে পাঁচটি জাল/ভুয়া আইডিকার্ড, বিভিন্ন লোকের নামে বাংলাদেশি পাসপোর্টের প্রথম পাতার ফটোকপি ৪৮ পাতা, বিদেশে কাজ ও হিসাবের খাতা একটি, বিমানের টিকিটের ফটোকপিসহ বিভিন্ন ধরনের কাগজপত্র পেয়েছে। জানা গেছে, সোহেল মিয়া (৩৪) নামের এক ব্যক্তি খিলক্ষেত থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্র কানাডায় পাঠানোর কথা বলে চার লাখ টাকা আত্মসাতের তথ্য দেন। ওই অভিযোগের ভিত্তিতেই খিলক্ষেত থানায় একটি মামলা হয়। পরবর্তীতে রাজউক ট্রেড সেন্টারের সামনে থেকে মো. বাপ্পী ইসলাম ও মো. নিয়াজুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর তাদের দেওয়া তথ্যমতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আরও পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে রাতভর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় প্রতারণার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। পুলিশ আরও জানায়, গ্রেফতারকৃত বাপ্পী প্রতারক চক্রের প্রধান হিসেবে কাজ করে। নিয়াজুল বিদেশে লোক পাঠানো বিভিন্ন এজেন্সির সামনে অবস্থান করে বিদেশ যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিকে কানাডা, পোল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশে দ্রুত পাঠানোর ব্যবস্থা করে দেবে বলে প্রলোভন দেয়। শুধু তাই নয়, তাদের বস বাপ্পী আমেরিকান অ্যাম্বাসিতে চাকরি করে বলেও সবার কাছে প্রচারণা চালানো হয়। নিয়াজুলের প্রলোভনে অনেকেই রাজি হয়ে যায়। রাজি হওয়ার পর জনপ্রতি ১০ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নেয় তারা। এ ছাড়াও তারা জালিয়াতি করে বিভিন্ন আইডি কার্ড, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট, বিভিন্ন দেশের ভিসা, ওয়ার্ক পারমিট ও মেডিকেল রিপোর্টসহ জাল কাগজপত্র তৈরি করে থাকে। এ জন্য তারা বিদেশগামীদের কাছ থেকে বাড়তি টাকাও আদায় করে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর