বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

আবাসন খাতের সংকট নিরসনে হাউজিং কমিশন চায় বিশ্বব্যাংক

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বাংলাদেশে আবাসন খাতের সংকট নিরসনে ‘হাউজিং কমিশন’ গঠনের প্রস্তাব সংবলিত একটি গবেষণা প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দিয়েছে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক। প্রতিবেদনে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও দ্রুত নগরায়ণের বিষয়টি তুলে ধরে সংস্থাটি বলেছে, বর্তমানে প্রতিবছর ৪ লাখ ৩২ হাজার নতুন আবাসন ইউনিট দরকার। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আবাসন নির্মাণ যদি না হয়, তবে শহরগুলো হয়ে যাবে অপরিকল্পিত ঘরবাড়ি, ঝুপড়ি আর বস্তির কেন্দ্রবিন্দু। গত ১৮ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে এ গবেষণা প্রতিবেদন জমা দেয় বিশ্বব্যাংক, যেখানে স্বাক্ষর রয়েছে সংস্থাটির বাংলাদেশ ও ভুটান অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক প্রতিনিধি ডানড্যান চেন ও কান্ট্রি ম্যানেজার উয়িন্ডি জো ওয়ার্নার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ অফিসের চিফ ইকনোমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শুধু নামকাওয়াস্তে কিছু গঠন করলেই হবে না; এ ক্ষেত্রে এমন একটি কমিশন দরকার যেটির দাঁত থাকবে। অর্থাৎ এমন একটি কমিশন গঠন করতে হবে যেটিতে আবাসন ও নির্মাণ খাত সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী, ভূমি, সাবরেজিস্ট্রার, করসহ সংশ্লিষ্টরা যুক্ত থাকবেন এবং যার নেতৃত্বে থাকবে সরকার। অত্যন্ত পেশাদারিত্বের সঙ্গে এ কার্যকাঠামো পরিচালনা করতে হবে, যাতে এই কমিশন কোনো সুপারিশ বা সংস্কারের প্রস্তাব দিলে সেই প্রস্তাব যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হয়। আর না করা হলে তা কেন করা হলো না সে সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। গবেষণা প্রতিবেদনে আবাসন খাতের ঋণ সংকট, অতিরিক্ত সুদের হার, দীর্ঘমেয়াদি ঋণে ব্যাংকগুলোর অনাগ্রহ এবং সেকেন্ডারি মর্টগেজ মার্কেট না থাকার বিষয়গুলো তুলে ধরে এ খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে পাঁচটি সুপারিশ করেছে বিশ্বব্যাংক। এসব সুপারিশের প্রথমেই একটি সহজগম্য ‘হাউজিং কমিশন’ গঠনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বর্তমানে আবাসন খাতের সংকট নিরসনে প্রকৃতপক্ষে এমন কোনো সমন্বিত সংস্থা নেই, যেটি সরকারি এবং বেসরকারি খাতের আবাসন কোম্পানিগুলোর মধ্যে সমন্বয় সৃষ্টি করে এ খাতের সমস্যা ও সংকটগুলো সমাধানে আইন ও নীতি সংস্কারের উদ্যোগ নেবে।

বিভিন্ন দেশে হাউজিং কমিশন : বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ ধরনের হাউজিং কমিশন গঠন হচ্ছে জানিয়ে সংস্থাটি বলেছে, আবাসন খাতের সংকট নিরসনে ভারতে ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’ নামক সংস্থা গঠন হয়েছে ২০১৫ সালে। সম্প্রতি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এ ধরনের একটি কমিশন গঠন হয়েছে। এমন কি অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্যেও আবাসন খাতের সংকটে কমিশনের আদলে গড়ে তোলা হয়েছে ন্যাশনাল হাউজিং টাস্কফোর্স। 

সেকেন্ডারি মর্টগেজ মার্কেট : একটি সেকেন্ডারি মর্টগেজ মার্কেট স্থাপনের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে বিশ্বব্যাংক বলেছে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দিতে উৎসাহিত করার জন্য এ ধরনের একটি মর্টগেজ মার্কেট গড়ে তুলতে হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠান হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনকে সংস্কার করে অথবা নতুন একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মাধ্যমে এই মর্টগেজ মার্কেট গঠন করা যেতে পারে বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।

আবাসন ঋণ গ্যারান্টি/ইন্স্যুরেন্স : স্বল্প আয়ের মানুষকে আবাসন সুবিধা দেওয়ার জন্য ‘আবাসন ঋণ গ্যারান্টি’ বা ‘ইন্স্যুরেন্স স্কিম’ গঠনের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে বিশ্বব্যাংক তার তৃতীয় সুপারিশে বলেছে, এ ধরনের গ্যারান্টি বা ইন্স্যুরেন্স স্কিম অনিয়মিত, প্রান্তিক এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক গোষ্ঠীকে আবাসন খাতে সম্পৃক্ত করতে সহায়তা করতে পারে। এটি একদিকে যেমন আয় বৈষম্য দূর করবে তেমনি ধনী-দরিদ্র্যের  আবাসন বৈষম্যও দূর হবে।

আইনি ও নীতিগত বাধা দূর করা : আবাসন খাতে অর্থায়নে যে নীতিগত সীমাবদ্ধতা রয়েছে সেগুলো দূর করার জন্য বর্তমানে সরকারের যে নীতিমালা রয়েছে সেটি সংস্কারের কথা বলা হয়েছে চতুর্থ সুপারিশে। সংস্থাটি বলেছে, নীতিগত যে কোনো একটি সীমাবদ্ধতা আবাসন খাতকে পেছনে ঠেলে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। সে কারণে এ খাতের বাধা দূর করার লক্ষ্যে এর আইন ও নীতিগত সঠিকভাবে পর্যালোচনা করা উচিত।

জমির প্রাপ্যতা এবং নির্মাণ খাতেও সংস্কার জরুরি : বিশ্বব্যাংক তার সর্বশেষ সুপারিশে বলেছে, একটি সম্ভাবনাময় আবাসন খাতের জন্য জমির প্রাপ্যতা এবং নির্মাণ উপকরণের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা জরুরি।

আর এ দুটি খাতেও সরকারের সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

সর্বশেষ খবর