বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

পুরান ঢাকায় সাকরাইন উৎসব

রাশেদ হোসাইন

পুরান ঢাকায় সাকরাইন উৎসব

পুরান ঢাকা গতকাল উৎসব মুখর ছিল নানা আয়োজনে -রোহেত রাজীব

ব্যস্ত নগরীর খোলা আকাশের দিকে তাকানোর সময়ই থাকে না। রাজধানীর বড় বড় অট্টালিকার ভিড়ে আকাশে নজর একটু কমই পড়ে। তাই পৌষকে বিদায়ের মাধ্যমে নীল আকাশের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য পুরান ঢাকাবাসীর আয়োজন সাকরাইন উৎসব যা ঘুড়ি উৎসব নামেও পরিচিত। গতকাল পুরান ঢাকায় সাকরাইন উৎসব উদ্যাপিত হয়। হরেক রকম রঙ্গিন ঘুড়ি আর নানা ডিজাইনের ছোট-বড় আকৃতির ঘুড়ি ঘুর ঘুর করে পুরান ঢাকার আকাশকে রঙ্গিন করে তোলে। কোনো ঘুড়ি মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে আবার কোনো ঘুড়ি আকাশে রাজত্ব করছে। কোনো ঘুড়ি দিগন্ত ছাড়িয়ে যায় অন্য দিগন্তে আবার কোনো ঘুড়ি নাটাই ছেড়ে উড়ে যায় আকাশের নীল সীমানায়। ছোট-বড় সবার অংশগ্রহণে মুখরিত হয়ে প্রতিটি বাড়ির ছাদে চলছে ঘুড়ির মুক্তবাক। বাংলা ও হিন্দি গানের তালে তালে চলতে থাকে ডিজে, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে উৎসবের মুখরতা। ঘুড়ির এ খেলা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলতে থাকে। দিনের আলো শেষে যেমন অন্ধকার নামে তেমনি ঘুড়ি নাটায়ের কাছে এসে পৌঁছে সন্ধ্যার লাল আলোতে। সন্ধ্যার পর থেকেই শুরু হয়ে যায় আতশবাজি, ফানুস ওড়ানো, আগুন নিয়ে খেলা, বড় বড় গ্যাস বেলুন ওড়ানো, হরেক রকমের লাইটিং যা অন্ধকার আকাশকে বিভিন্ন আলোয় আলোকিত করে। আর ডিজের তালে তালে চলতে থাকে গান নাচ। সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত পুরান ঢাকার সূত্রাপুর, মিলব্যারাক, সদরঘাট, নবাবপুর, লালবাগ, চকবাজার, দয়াগঞ্জ, মুরগিটোলা, শিংটোলা, লক্ষ্মীবাজার, ধূপখোলা মাঠ, বংশাল, ওয়ারী, ইসলামপুর, শাঁখারিবাজার, তাঁতীবাজার, রায় শাহেব বাজার এলাকার মানুষ  ঘটা করে সাকরাইন পালন করেছে। বাংলা পৌষ মাসের শেষের দিন ও মাঘ মাসের প্রথম দিন উদ্যাপন করা হয় পৌষসংক্রান্তি। বর্তমানে ‘পৌষসংক্রান্তি’ শুধু ‘সংক্রান্তি’ নামে পরিচিতি লাভ করেছে, আর পুরান ঢাকার মানুষ একে বলে ‘সাকরাইন’।  বর্ণিল বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উৎসব : নাচ, গান, আবৃত্তি ও লোকনাট্যসহ নানা বর্ণিল আয়োজনে শিল্পকলা একাডেমি মেতে উঠেছে আনন্দ উৎসবে। আর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও সৃজনশীল মানবিক বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে চলমান বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উৎসবে শিল্পানুরাগীদের ভিড়ও ছিল লক্ষ্য করার মতো। ২১ দিনের এ উৎসবে অংশ নিয়েছে দেশের ৬৪টি জেলা, ৬৪টি উপজেলা এবং জাতীয় পর্যায়ের পাঁচ হাজারের অধিক শিল্পী ও শতাধিক সংগঠন। গতকাল ছিল ২১ দিনের এ উৎসবের দ্বাদশ দিন। বিকাল ৪টায় একাডেমির নন্দনমঞ্চে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়েই শুরু হয় এদিনের আয়োজন।

এর পর অ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শন করে একাডেমির শিল্পীরা। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পর্বে সমবেতনৃত্য পরিবেশন করে শুশমি, মেহজাবিন ও শৈলি। ‘শোন একটি মুজিবরের থেকে’ এবং ‘বাংলার হিন্দু বাংলার বৌদ্ধ’ গান দুটির সঙ্গে দলীয়নৃত্য পরিবেশন করে ধৃতি নর্তনালয়। একক আবৃত্তি করেন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়। সমবেত সংগীত পরিবেশন করে সরকারি সংগীত মহাবিদ্যালয় এবং একক সংগীত পরিবেশন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি শিশুদলের শিল্পী প্রতিক দাস। জেলার পরিবেশনা পর্বে  অংশ নেয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ঝালকাঠি ও মাগুরা জেলার শিল্পীরা। সবশেষে রাত ৮টায় একাডেমি প্রাঙ্গণে পরিবেশিত হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ‘গম্ভীরা’। ২৩ জানুয়ারি শেষ হবে ২১ দিনের এ উৎসব।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর