শনিবার, ২১ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

প্রশাসক বসছে যুবকে

সম্পদ বিক্রি করে গ্রাহকের পাওনা পরিশোধ করা হবে

মানিক মুনতাসির

অবশেষে প্রশাসক বসিয়ে যুব কর্মসংস্থান সোসাইটির (যুবক) নামে-বেনামে থাকা সম্পদ বিক্রি করে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের পাওনা অর্থ ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সুপারিশের ভিত্তিতে এ রকম একটি আদেশ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণায়ল। সারা দেশে যুবক-এর প্রায় সাত হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। আর যুবক-এর কাছে গ্রাহকদের পাওনা তিন হাজার কোটি টাকারও কম। অর্থবিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, গত ১৬ মার্চ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ আবদুল আওয়াল স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত এক আদেশে বলা হয়েছে, যুবকের অধীনে সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সম্পদগুলো বিক্রি করে গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধ করার জন্য একজন প্রশাসক নিয়োগ করা যেতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। এজন্য যুবকের সম্পদ পুনর্মূল্যায়ন এবং বিক্রির জন্য একজন প্রশাসক বসানো  সমীচীন হবে। এ আদেশের অনুলিপি অর্থমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে যুবক-এ ক্ষতিগ্রস্ত জনকল্যাণ সোসাইটির সাধারণ সম্পদক মাহমুদ হোসেন বলেন, একজন প্রশাসক বসিয়ে এই সম্পদ বিক্রি করে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের পাওনা ফেরত দেওয়ার দাবি আমরা অনেক আগে থেকেই জানিয়ে আসছি। অবশেষে সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আশা করি এবার ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা তাদের পাওনা বুঝে পাবেন।

সূত্র জানায়, টানা তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসায় যুবক-এ ক্ষতিগ্রস্ত জনকল্যাণ সোসাইটির ব্যানারে প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহকরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের কাছে পৃথকভাবে চিঠি দেয়। সে সময় সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা যুবক-এর সম্পদের একটি বিবরণীও জমা দেওয়া হয়। তাতে দেখানো হয় সারা দেশে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। এর বেশিরভাগ সম্পদ যুবক-এর উদ্যোক্তারা ভোগদখল করে আছেন। আবার কিছুু জমি, রাবার বাগান ও সম্পদ পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। ঢাকার পার্শ¦বর্তী নারায়ণগঞ্জেও অন্তত ৭০০ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। আর শুধু ঢাকা, গাজীপুর ও সাভারেই রয়েছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার সম্পদ। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- ফ্ল্যাট, বহুতল ভবন, জলাধার, কৃষিজমি এবং সমতল ভূমি। এর আগে সরকারের অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব মো. রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিশন গঠন করা হয়। কমিশন এক বছর ধরে তদন্ত শেষে সরকারের কাছে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। সেখানে যুবক-এর প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার সম্পদ খুঁজে পায় কমিশন। ওই কমিশনের সুপারিশগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল সম্পদ মূল্যায়ন ও অর্থ ফেরতের আগ পর্যন্ত সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একজন প্রশাসক নিয়োগ করা। কিন্তু ৯ বছরেও সে সুপারিশ বাস্তবায়িত হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা প্রশাসক বসিয়ে সম্পদগুলো বিক্রি করে তাদের পাওনা ফেরতের দাবি জানিয়ে গত বছরের শেষের দিকে আবারও অর্থমন্ত্রীকে চিঠি দেন।

যুবক-এর যত সম্পদ : যুবক-এর সম্পদের তথ্যে ব্যাপক গরমিল পাওয়া গেছে। যুবক-এ ক্ষতিগ্রস্ত জনকল্যাণ সোসাইটির হিসাবে সারা দেশে ৬ হাজার ১২৪ কোটি ৮০ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে জমির পরিমাণ মোট তিন হাজার একর। এ ছাড়া আবাসন, বৃক্ষ, বনায়নসহ মোট প্রকল্প ১৮টি। ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ সারা দেশে অন্তত ১৮টি বহুতল বাড়ি রয়েছে। আর যুবক-এর কাছে গ্রাহকদের পাওয়া মাত্র ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিশনের দেওয়া প্রতিবেদনের তথ্য মতে, সারা দেশে যুবক-এর জমি রয়েছে ২ হাজার ২০০ একর। ১৮টি বাড়ি ও ১৮টি প্রকল্প। এর বাইরে ক্ষতিগ্রস্ত জনকল্যাণ সোসাইটি মাঠ পর্যায়ে তদন্ত করে আরও ১ হাজার একর জমির সন্ধান পেয়েছে বলে জানা গেছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর