মঙ্গলবার, ৯ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

এবার হবে বিতর্কিতদের ছাঁটাই

আওয়ামী লীগের ঢাউস উপকমিটি

রফিকুল ইসলাম রনি

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন উপকমিটি থেকে এবার বিতর্কিতদের ছাঁটাই করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দলীয় নেতাকে হত্যা মামলাসহ নানা অভিযোগ থাকায় দলের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপকমিটি থেকে গতকাল সৈয়দ হেমায়েত হোসেনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দলের ১৯টি সম্পাদকীয় পদের মধ্যে ঘোষিত প্রায় ১৬টি উপ-কমিটির আরও দুই ডজন বিতর্কিত নেতাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যে কোনো সময়ে তাদের ছাঁটাই করা হবে বলে জানা গেছে।

সূত্র মতে, সাবেক ছাত্র ও যুবনেতা এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী নানা বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মূল্যায়ন করতে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন উপকমিটি গঠন করা হয়। ৩৫ সদস্যের মধ্যে কমিটি করার মৌখিক নির্দেশনা থাকলেও কোনো কোনো কমিটিতে শতকের ঘর ছাড়িয়ে গেছে। এ নিয়ে দলের নেতারাই অনেকে বলছেন, উপকমিটির সংখ্যা আবারও ‘ঢাউস’ আকৃতির হয়েছে। উপকমিটি গঠন ও অনুমোদনে দীর্ঘ সময় নেওয়া হলেও বিতর্কিত কেউ কেউ ঢুকে পড়েছেন। বিষয়টি দেখভালের জন্য দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়েকজন কেন্দ্রীয় ও সাবেক ছাত্রনেতাদের দায়িত্ব দিয়েছেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা অফিসে বিভিন্ন উপকমিটির নেতাদের ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছেন। কারা কারা বিতর্কিত সে তালিকা তৈরি করছেন। গতকাল আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ উপকমিটি থেকে সদস্য সৈয়দ হেমায়েত হোসেনকে অব্যাহতি দেন কমিটির সদস্য সচিব দেলোয়ার হোসেন। অব্যাহতি দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের বন ও  পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নিয়মিত প্রোগ্রামে না আসা এবং কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকায় তাকে অব্যাহতি দিয়েছি।’ কমিটি করার আগে খোঁজখবর নেননি কেন জানতে চাইলে বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ও ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করতে। উপকমিটি ঘোষণার সময়ই বলেছিলাম, কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলেই ছাঁটাই করা হবে। সেই প্রক্রিয়া শুরু করেছি।’

সূত্র মতে, ২০০১ সালের ৫ অক্টোবর শরীয়তপুর জেলা শহরে জেলার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা কোর্টের পিপি অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমানের বাসভবনে আলোচনা সভা আয়োজন করে জেলা আওয়ামী লীগ। হাবিবুর রহমানের বাসভবনে ঢুকে সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে হাবিবুর রহমান ও তাঁর ভাই মনির হোসেন মুন্সীকে। চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলায় ৫৪ জন আসামির মধ্যে প্রয়াত এমপি কে এম হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গসহ দুজন মারা যাওয়ায় ৫২ জন আসামি বিদ্যমান। এ মামলার অন্যতম একজন আসামি সৈয়দ হেমায়েত হোসেন। আজ (৯ মার্চ) মামলার রায় হওয়ার কথা রয়েছে। দলীয় নেতাকে হত্যার অভিযোগ থাকায় তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। ইতিমধ্যে ৩৫ সদস্যের প্রচার ও প্রকাশনা, ৪০ সদস্যের শিক্ষা ও মানবসম্পদ, ৪৫ সদস্যের সংস্কৃতিক বিষয়ক, ৪২ সদস্যের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা, ৫০ সদস্যের মহিলা বিষয়ক, ৫৫ সদস্যের কৃষি ও সমবায়, ৫৫ সদস্যের অর্থ ও পরিকল্পনা, ৬০ সদস্যের শিল্প বাণিজ্য, ৭২ সদস্যের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক, ১০০ সদস্যের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপকমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষিত কমিটিগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, নির্দিষ্ট সংখ্যায় কমিটি রাখা হয়নি। যে যার মতো করেই কমিটি করেছেন। এই ঢাউস কমিটি থেকে বিতর্কিতদের ছাঁটাই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গত ২ মার্চ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটির পরিচিতি সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘উপ-কমিটিতে নাম লিখিয়ে কেউ চাঁদাবাজি অথবা ক্ষমতার দাপট দেখালে সঙ্গে সঙ্গে কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হবে। যারা একাধিক কমিটিতে নাম লেখাবেন তাদের সব কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হবে। উপকমিটির সদস্যপদে নাম লিখিয়ে কেউ কেউ কার্ড ছাপিয়ে নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। এই সদস্যদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর