বৈশ্বিক দুর্যোগ করোনা অন্য সবকিছুর মতো অমর একুশে গ্রন্থমেলায়ও হানা দিয়েছিল। এবারের মেলা হবে কি হবে না এ নিয়েও ছিল নানা জল্পনা-কল্পনা। সব প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে মেলা আয়োজিত হচ্ছে তাতেই খুশি লেখক-পাঠক-প্রকাশকরা। তবে কভিড-১৯-এর থাবায় চিরাচরিত নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির বইমেলা গড়াল স্বাধীনতার মাস মার্চে। ১৮ মার্চ শুরু হচ্ছে এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলা। আর মাত্র চার দিন বাকি। ৮ মার্চ লটারির মাধ্যমে স্টল ও প্যাভিলিয়ন বরাদ্দের পর বর্তমানে চলছে স্টল ও প্যাভিলিয়নের নির্মাণ। যার কারণে বদলে গেছে বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চিরচেনা রূপ। ১৬ মার্চের মধ্যে স্টল নির্মাণের কাজ শেষ করার জন্য প্রকাশকদের সময় বেঁধে দিয়েছে মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি। হাতুড়ি-বাটালের টুংটাং শব্দে এখন মুখরিত সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি। আর রাজধানীর ফকিরাপুল, বাংলাবাজার, আরামবাগ, কাঁটাবনসহ ছাপাখানা ও বাঁধাইখানাগুলোর শ্রমিকরাও ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। বরাবরের মতো সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে থাকছে জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতিসহ বিভিন্ন প্রকাশনীর স্টল ও প্যাভিলিয়ন এবং বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে থাকছে সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের স্টল। এ বছর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৩৩টি প্রকাশনা সংস্থা প্যাভিলিয়ন পাচ্ছে। তবে এর বাইরে মেলার দুই প্রাঙ্গণেই বাংলা একাডেমির একটি করে প্যাভিলিয়ন থাকছে। এ বছর সর্বমোট ৫২২টি প্রতিষ্ঠানের মাঝে ৮১৭টি ইউনিট ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১ ইউনিটের স্টল থাকছে ২৫৪টি, ২ ইউনিটের ৯২টি, ৩ ইউনিটের ৪৪টি ও ৪ ইউনিটের ২২টি। আর শিশু কর্নারে ৬১টি প্রকাশনা সংস্থার মাঝে ৭২ ইউনিট ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১ ইউনিটের স্টল থাকছে ৩৯টি, ২ ইউনিটের ১৫টি এবং ৩ ইউনিটের ৭টি। নিরাপত্তার স্বার্থে বইমেলার ভিতরে ও বাইরে সাদা পোশাকে ও ইউনিফর্মে পর্যাপ্তসংখ্যক পুলিশ নিয়োজিত থাকবে। পুরো মেলাপ্রাঙ্গণ ও এর চারপাশের এলাকা সার্বক্ষণিক সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হবে। ইভ টিজিং ও অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা প্রতিরোধে থাকবে পুলিশের ফুট ও মোটরসাইকেল প্যাট্রলিং। নি-িদ্র নিরাপত্তা প্রদানে থাকবে ওয়াচ টাওয়ার, ফায়ার টেন্ডার ও প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা। এবারও বইমেলার আশপাশ হকারমুক্ত করা হবে ডিএমপির পক্ষ থেকে। সেই সঙ্গে যাতে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে জন্য মেলায় প্রবেশ ও বাইরের জন্য থাকবে আলাদা গেট। প্রত্যেক দর্শনার্থীকে আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টর দ্বারা তল্লাশির মাধ্যমে মেলায় প্রবেশ করতে হবে। গতকাল মেলার প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানপ্রাঙ্গণ পরিদর্শন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, গেল কয়েক দিনে দেশে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন। তবে এ উদ্বিগ্নতার মাঝেই যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ‘অমর একুশে বইমেলা’ হবে। এবার আয়তনের দিক থেকে বিশাল পরিসরে বইমেলা হবে। প্রায় ১৫ লাখ বর্গফুট এলাকাজুড়ে থাকছে মেলার বিস্তৃতি, যা গতবারের চেয়ে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বেশি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশের ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের গেট থেকে একটি নতুন প্রবেশপথ থাকছে। সেই সঙ্গে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তন এলাকাসংলগ্ন জায়গায় গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রেখেছি। এ সময় প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে আরও ছিলেন বাংলা একাডেমির সচিব এ এইচ এম লোকমান এবং ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২১’ পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব ও একাডেমির পরিচালক ড. জালাল আহমেদ।