রবিবার, ১১ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

পোশাক-বস্ত্র কারখানা খোলা চান মালিকরা

বিজিএমইএ বিকেএমইএ বিটিএমএ ও ইএবির আজ যৌথ সংবাদ সম্মেলন

রুহুল আমিন রাসেল

করোনাভাইরাস সংক্রমণ মারাত্মক বেড়ে যাওয়ায় আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে সরকার কঠোর লকডাউন দিতে যাচ্ছে। সরকার বলছে, জরুরি সেবা ছাড়া পোশাকশিল্পসহ সব কলকারখানা, শপিং মল, দোকানপাট ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান এ সময় বন্ধ থাকবে। লকডাউন নিয়ে সরকারের এমন পরিকল্পনায় আপত্তি পোশাক ও বস্ত্রশিল্প মালিকদের। পোশাকশিল্প মালিকরা প্রতিযোগী দেশগুলোর মতো স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা খোলা রাখতে চান। এই দাবি জানিয়ে আজ যৌথ সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে মালিকদের চার সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ ও ইএবি। এ প্রসঙ্গে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ   নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি-বিকেএমইএ প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা চাই জীবন ও জীবিকা সচল রাখতে হবে। এই সময়ে লকডাউনে কারখানা বন্ধ হলে পোশাকশিল্পে বড় বিপর্যয় আসবে। শ্রমিক অসন্তোষ হবে। সার্বিক পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাবে। আমরা চাই প্রতিযোগী দেশগুলোর মতোই স্বাস্থ্যবিধি মেনে পোশাক কারখানাসমূহ খোলা থাকুক। শিল্পের উৎপাদন কার্যক্রম সচল থাকুক। কারণ, ঈদের আগে ক্রেতাদের ক্রয়াদেশ মোতাবেক পণ্য সরবরাহের ব্যাপক চাপ রয়েছে। পোশাকশিল্প মালিকদের আরেক প্রভাবশালী সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি-বিজিএমইএ সহসভাপতি মশিউল আজম সজল গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঈদের আগে এই মুহূর্তে লকডাউনে কারখানা বন্ধ হলে শ্রমিকরা বাড়ি যাওয়ার চেষ্টা করবেন। কিন্তু তারা এখন কারখানায় থাকলে অন্ততপক্ষে প্রতিদিন স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজে নিয়োজিত থাকছেন। কারখানাগুলো এই সংক্রান্ত স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলছে। প্রতিদিন তাপমাত্রা চেক করে কারখানায় ঢুকছেন শ্রমিকরা। আবার শ্রমিকরা কারখানায় গেলে, তাদের জীবন ও জীবিকার বিষয়টিও সচল থাকছে। কিন্তু কারখানা বন্ধ হলে, ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি। সংশ্লিষ্টদের মনে রাখতে হবে- ৪০ লাখ শ্রমিকের অর্ধেক ২০ লাখও যদি বাড়িমুখী হয়, তাতে কোন পরিস্থিতি তৈরি হবে, তাও বিবেচনা করতে হবে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন-বিটিএমএ পরিচালক ও ওয়েল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রি চেয়ারম্যান সৈয়দ নুরুল ইসলাম গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশের অর্থনীতির স্বার্থে পুরো বস্ত্র ও পোশাক খাতের কারখানাগুলো কঠোর স্বাস্থ্য বিধি মেনে চালু রাখতে হবে। গতবারের অভিজ্ঞতা কী বলে-কারখানা একবার খোলা, একবার বন্ধ এই করে হাজার হাজার শ্রমিক-কর্মচারীদের রাস্তায় নামানো হলো। পরবর্তীতে টাস্কফোর্স গঠন করে সিদ্ধান্ত হলো- কারখানা খোলা থাকবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে। আজকের অভিজ্ঞতা বলে, সেই দিন টাস্কফোর্সের পরামর্শে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তই সঠিক ছিল। কিন্তু এবার যদি লকডাউনে বস্ত্র ও পোশাক খাতের কারখানা বন্ধ রাখা হয়, তবে পুরো খাতই একেবারে শেষ হয়ে যাবে। সরকারের প্রণোদনা কাজে আসবে না। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ বস্ত্র, পোশাক ও এক্সেসরিজ খাতের কারখানাগুলোকে লকডাউনকালীন সময়ে কঠোর স্বাস্থ্য বিধি মেনে আগের মতো খোলা রাখা হোক। এতে রপ্তানি খাত টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যাবে। বেঁচে যাবেন বস্ত্র ও পোশাক খাতের অর্ধ কোটির বেশি শ্রমিক-কর্র্মচারী। প্রসঙ্গত, আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে যে কঠোর লকডাউন দেওয়ার কথা সরকার জানিয়েছে, তাতে আওতামুক্ত থাকবে জরুরি সেবা। গণমাধ্যমের পরিবহন ও অফিস লকডাউনের আওতামুক্ত থাকবে। বন্ধ থাকবে সরকারি-বেসরকারি সব অফিস। চলবে না কোনো ধরনের যানবাহন। যথারীতি বন্ধ থাকবে নৌপথ ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট। গার্মেন্ট, কলকারখানা, শপিং মল, দোকানপাটসহ সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। সরকারের পক্ষ থেকে সবাইকে পুরোপুরি ঘরে থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। এর আগে অন্তত দুই সপ্তাহ ‘পূর্ণ লকডাউন’ ছাড়া করোনাভাইরাসের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না বলে মত দিয়েছে কভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।

সর্বশেষ খবর