রবিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

সৌন্দর্যের প্রতীক তাজহাট জমিদারবাড়ি

নজরুল মৃধা, রংপুর

সৌন্দর্যের প্রতীক তাজহাট জমিদারবাড়ি

সৌন্দর্যের অনন্য প্রতীক তাজহাট জমিদারবাড়ি। রংপুর নগরীর অনন্য সৌন্দর্যবর্ধন করে চলছে তাজহাট জমিদারবাড়ি ও জাদুঘর। ভবনটির সৌন্দর্য এবং নৌকা প্রতীকে আঁকা বাগানটি দর্শনার্থীদের কাছে টানে। শত বছরের বেশি সময় ধরে এই বাড়িটি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। 

১৯৯৫ সালে এ ভবনটিকে প্রত্নতত্ত্ব সম্পদ হিসেবে গণ্য করা হয়। ২০০২ সালে এটিকে জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়। এর নাম রাখা হয় রংপুর জাদুঘর। বর্তমানে এটি ১৬ দশমিক ৬ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। এই জাদুঘরে তিনশর বেশি মূল্যবান নিদর্শন রয়েছে। প্রতিদিন দেশি-বিদেশি পর্যটক এই বাড়ির সৌন্দর্য দর্শনে আসেন। এই বাড়ির প্রাঙ্গণের বাগান মানুষের নজর কাড়ে। বিশেষ করে ছোট ছোট গাছ দিয়ে বানানো নৌকা প্রতীকটি।

জানা গেছে, তাজহাট জমিদারবাড়ি প্রতিষ্ঠা করেন মান্নালাল রায়। তিনি ভারতের পাঞ্জাব থেকে এসেছিলেন। পেশায় ছিলেন একজন স্বর্ণকার। স্বর্ণখচিত টুপি বা তাজ নির্মাণ করায় এই অঞ্চলের নাম তাজহাট হয়েছে। জাতিতে ক্ষত্রিয় হলেও তার শিখ ধর্মের প্রতি দুর্বলতা ছিল। মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সঙ্গে শিখদের সংঘাতের সময় স্বর্ণ ব্যবসায়ী মান্নালাল পাঞ্জাব থেকে পালিয়ে রংপুরের মাহিগঞ্জে বসতি স্থাপন করেন। মাহিগঞ্জে  তিনি হীরা মণি মুক্তা খচিত টুপি (তাজ) বিক্রি করতেন। আর এভাবেই প্রতিষ্ঠিত হয় তার জমিদারি। রংপুর শহর থেকে পুব দিকে ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থান এই জমিদারবাড়ির।

১৮৯৭ সালে ভূমিকম্পে ভবনটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে বাড়িটি নতুন করে তৈরি করা হয়। ৫৬ একর এলাকাজুড়ে এই কমপ্লেক্সটির পুবমুখী দোতলা এই জমিদারবাড়িটির সামনের দিকে প্রায় ৭৭ মিটার দৈর্ঘ্য। বাড়ির সামনের দিকে রয়েছে বড় একটি দরদালান। এই দালানে ওঠার জন্য শ্বেতপাথরে আবৃত রয়েছে দৃষ্টিনন্দন সিঁড়ি। বাড়ির ছাদের মূল অংশে আট কোনা পিলারের ওপর অবস্থিত রেনেসাঁ গম্বুজ। এই গম্বুজের বৈশিষ্ট হলো এটি আংশিকভাবে সরু পিলারের ওপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। প্রাসাদের গৃহমুখের দুই প্রান্তে অষ্টাভুজাকৃতির বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার অংশ রয়েছে। প্রাসাদটির গাড়ি বারান্দা প্রায় ১০ মিটার দীর্ঘ। গাড়ি বারান্দার ওপরে যে ঝুল বারান্দা রয়েছে তার ছাদ চারটি পিলারের ওপর অবস্থিত। এই প্রাসাদের দুই প্রান্তের বারান্দাতেও ত্রিকোণাকৃতির ছাদ রয়েছে। প্রাসাদের ভূমি নকশা অনেকটা ইংরেজি টি-এর মতো। প্রাসাদে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে চোখ পড়ে ১৪/১৯ মিটার বিশাল হলঘর। হলঘরের দুই দিকে একটি করে ঘর রয়েছে। প্রাসাদটির ভিতর ৩ মিটার প্রশস্ত একটি টানা বারান্দা ও পুরো ভবনে ২২টি ঘর রয়েছে। এই জমিদার বংশের মধ্যে জনপ্রিয় জমিদার ছিলেন গিরিধারি লাল রায়। ১৮৭৯ সালে তার মৃত্যু হলে তার ছেলে গোবিন্দলাল রায় জমিদারি লাভ করেন। গোবিন্দলাল রায় প্রজাহিতৈষী ও দানশীলতার জন্য ১৮৮৮ সালে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক রাজা, ১৮৯২ সালে রাজা বাহাদুর ও ১৮৯৬ সালে মহারাজা উপাধিতে ভূষিত হন। এই সময়টিই ছিল তাজহাট জমিদারদের সোনালি অধ্যায়। ১৮৯৭ সালে তার মৃত্যু হলে তার ছেলে গোপাল লাল রায় জমিদার নিযুক্ত হন। তিনি ছিলেন এই বংশের শেষ জমিদার। ১৯৫০ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলে কুমার গোপাল রায়ের বংশধররা ভারতে চলে যান। ১৯৫২ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর বাড়িটি চলে যায় কৃষি বিভাগের অধীনে। এখানে গড়ে উঠে কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট। ১৯৮৪ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত তাজহাট রাজবাড়ি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বেঞ্চ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। রংপুর তাজহাট জমিদারবাড়ির কাস্টোডিয়ান এস এম হাসনাত বিন ইসলাম জানান, করোনার কারণে তাজহাট জমিদারবাড়ি আপাতত দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর