শুক্রবার, ১১ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

করোনা হটস্পট রাজশাহী-খুলনা

রাজশাহী সিটিতে সর্বাত্মক লকডাউন, মৃত্যু বেশি চট্টগ্রামে

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনা হটস্পট রাজশাহী-খুলনা

দেশের করোনা সংক্রমণের হটস্পট এখন রাজশাহী ও খুলনা বিভাগ। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ ঘোষণা করা হয়েছে। আজ শুক্রবার বিকাল ৫টা থেকে ১৭ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত চলবে এই লকডাউন। একই সঙ্গে করোনাভাইরাসে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আজ শুক্রবার মধ্যরাত থেকে রাজশাহীর সঙ্গে সব রুটের যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

গতকাল রাতে জেলা সার্কিট হাউসে রাত পৌনে ১০টা পর্যন্ত চলা এক জরুরি সভা শেষে সাংবাদিকদের এই সিদ্ধান্তের কথা জানান বিভাগীয় কমিশনার মো. হুমায়ুন কবীর। এদিকে গতকাল রাতে রেলপথ মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ‘আগামী ১১ জুন মধ্যরাত থেকে ১৭ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত রাজশাহী থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচলকারী বাংলাদেশ রেলওয়ের যাত্রীবাহী সব ট্রেন বন্ধ থাকবে। রাজশাহী ও খুলনা  বিভাগের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে করোনা সংক্রমণ দিন দিন বেড়েই চলছে। দৈনিক করোনা সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা গতকাল সবচেয়ে বেশি ছিল রাজশাহী বিভাগে। এরপরই বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে খুলনা বিভাগে। এ ছাড়া গত এক দিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা আগের দিনের চেয়ে বেড়েছে; মৃতের মোট সংখ্যা পৌঁছে গেছে ১৩ হাজারের কাছাকাছি।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ২ হাজার ৫৭৬ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে; মৃত্যু হয়েছে ৪০ জনের। এর আগে এক দিনে এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল গত ২৮ এপ্রিল, সেদিন ২ হাজার ৯৫৫ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ার কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর। আর বুধবার শনাক্ত হয়েছিল ২ হাজার ৫৩৭ জন নতুন রোগী। গত এক দিনে নতুন আক্রান্তদের নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে ৮ লাখ ২০ হাজার ৩৯৫ জন হয়েছে। আর মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১২ হাজার ৯৮৯ জন। সরকারি হিসাবে, আক্রান্তদের মধ্যে এক দিনে আরও ২ হাজার ৬১ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তাদের নিয়ে মোট সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ৫৯ হাজার ৬৩০ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি ৮১৫ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে রাজশাহী বিভাগে। এরপর রয়েছে খুলনা বিভাগ, শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৫৭৮ জন। ঢাকা বিভাগে শনাক্ত হয়েছেন ৫১৩, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩৩৭, রংপুর বিভাগে ১৩০, ময়মনসিংহ বিভাগে ১১৯, সিলেট বিভাগে ৯২ এবং বরিশাল বিভাগে ৪৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। অন্যদিকে রাজশাহী বিভাগে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে রাজশাহী জেলায় ৩৫৩ জন। এরপর রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা, সেখানে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৫৮ জন। এ ছাড়া জয়পুরহাটে ৯৬, নওগাঁয় ৯৪, নাটোরে ৬২, পাবনায় ২৭, বগুড়ায় ১৫ ও সিরাজগঞ্জে ১০ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। খুলনা বিভাগে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে যশোরে ২০০ জন। এরপর রয়েছে খুলনা জেলা, রোগী শনাক্ত হয়েছে ১২২ জন। এরপর কুষ্টিয়ায় ৭৩, বাগেরহাটে ৬৩, সাতক্ষীরায় ৪৮, চুয়াডাঙ্গায় ৩৭, ঝিনাইদহে ২১, মেহেরপুরে ৯ ও নড়াইলে ৫ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। রোগী শনাক্তের দিক দিয়ে তৃতীয় ঢাকা বিভাগের মধ্যে এখনো সবচেয়ে বেশি রোগী ঢাকায়। ঢাকা মহানগর মিলিয়ে এই জেলায় শনাক্ত রোগী সংখ্যা ২৮৮ জন। এরপর বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে গাজীপুরে ৪৭ এবং ফরিদপুর ও টাঙ্গাইলে ৪৬ জন করে। এ ছাড়া মাদারীপুরে ২০, কিশোরগঞ্জে ১৬, নারায়ণগঞ্জে ১২, নরসিংদীতে ১১, মানিকগঞ্জে ৮, রাজবাড়ী ৭, গোপালগঞ্জে ৬, শরীয়তপুরে ৪ ও মুন্সীগঞ্জে দুজন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। চট্টগ্রাম বিভাগে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে চট্টগ্রাম জেলায় ১১৯। এরপর নোয়াখালীতে ৮৭ ও কক্সবাজারে ৬৩ সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। রংপুর বিভাগে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে দিনাজপুরে ৪৩ জন। এরপর ঠাকুরগাঁওয়ে ৩৯ জন এবং রংপুরে ১৯ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। ময়মনসিংহ বিভাগে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে ময়মনসিংহ জেলায় ৩৫ জন। বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে বরিশাল জেলায় ৩৪ জন। অন্য সব জেলার অবস্থা এখনো ভালো আছে। সিলেট বিভাগে বেশি রোগী সিলেট জেলায় ৬৯ জন। এরপর রয়েছে মৌলভীবাজার ১৯ জন। অন্য দুই জেলায় রোগী শনাক্ত হয়েছে দুজন করে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা সংক্রমিত হয়ে মারা গেছেন ৪০ জন। এ সময় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে, ১২ জনের। এরপর ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগে আটজন করে, খুলনা বিভাগে ছয়জন, রংপুরে চারজন ও সিলেটে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন শনাক্তদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাস শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মোট ৮ লাখ ২০ হাজার ৩৯৫। মোট মৃত্যু হয়েছে ১২ হাজার ৯৮৯ জনের। সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ৫৯ হাজার ৬৩০ জন।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গত বছর ৮ মার্চ; তা ৮ লাখ পেরিয়ে যায় এ বছর ৩১ মে। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে গত ৭ এপ্রিল রেকর্ড ৭ হাজার ৬২৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এ বছর ১১ মে তা ১২ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে ১৯ এপ্রিল রেকর্ড ১১২ জনের মৃত্যুর খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৫১০টি ল্যাবে ১৯ হাজার ৪৪৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৬১ লাখ ২৬ হাজার ২৩৮টি নমুনা। বৃহস্পতিবার নমুনা পরীক্ষা অনুযায়ী সারা দেশে শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ। এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯২ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৮ শতাংশ। ঢাকা বিভাগে দৈনিক শনাক্তের হার যেখানে ৬ শতাংশের কম, রাজশাহী বিভাগে তা ১৬ দশমিক ৯৪ শতাংশের বেশি, খুলনা বিভাগে ৩৯ শতাংশ। জেলাওয়ারি হিসেবে এদিন যাশোরে শনাক্ত রোগীর হার ৫১ শতাংশ, বাগেরহাটে ৩১ শতাংশ, খুলনায় ৩০ শতাংশ, রাজশাহীতে ২১ শতাংশ, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৯ শতাংশ, আর ঢাকায় ৪ শতাংশের কিছু বেশি।

 

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- খুলনায় হাসপাতালে ঠাঁই নেই খুলনা : খুলনা বিভাগে করোনা শনাক্তের সংখ্যা ৩৮ হাজার ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে বিভাগের ১০ জেলায় ৫৭৮ জন করোনা শনাক্ত হয়েছেন। এ পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন ৬৯৫ জন। এদিকে বিভাগীয় শহর হওয়ায় খুলনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে রোগীর চাপ বেশি। চিকিৎসার জন্য সবাই এখানে ছুটে আসছেন। কিন্তু শয্যা সংকটে সব রোগীকে ভর্তি নিতে পারছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গতকাল ১০০ শয্যার ডেডিকেটেড হাসপাতালে রোগী ভর্তি ছিল ১৩০ জন। মুমূর্ষু রোগীর চিকিৎসায়ও জায়গা মিলছে না নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র আইসিইউ ও এইচডিইউতে। চাপ সামলাতে পুরাতন গ্যাস্ট্রোলজি বিভাগে ৩০ শয্যার আরেকটি ইউনিট প্রস্তুত করা হয়েছে। কিন্তু চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী না থাকায় ইউনিটটি চালু করা যাচ্ছে না। রাজশাহী : রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে এক দিনে আরও ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে রাজশাহীর নয়জন ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের তিনজন। বুধবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত বিভিন্ন সময় তারা মারা যান বলে জানান হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার শামীম ইয়াজদানী। তিনি জানান, মৃত ১২ জনের মধ্যে সাতজন করোনা শনাক্ত হওয়ার পর মারা যান। বাকিরা মারা যান নমুনা পরীক্ষার আগে চিকিৎসাধীন অবস্থায়। আর করোনা শনাক্ত সাতজনের মধ্যে রাজশাহীর পাঁচজন ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের দুজন। এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত করোনা ওয়ার্ডের ২৭১ শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি আছেন ২৯০ জন। এর মধ্যে রাজশাহীর ১৪২, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১১১, নওগাঁর ১৫, নাটোরের ১৫, পাবনার ৩, কুষ্টিয়ার ৩ জন ও চুয়াডাঙ্গার ১ জন। আইসিইউতে ভর্তি আছেন ১৮ জন। সাতক্ষীরায় লকডাউন বাড়ল আরও এক সপ্তাহ সাতক্ষীরা : সীমান্ত জেলা সাতক্ষীরায় করোনা সংক্রমণের হার না কমায় চলমান লকডাউন আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে। লকডাউন চলবে ১৭ জুন পর্যন্ত। গতকাল জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির ভার্চুয়াল সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কাল শনিবার সকাল থেকে এই লকডাউন কার্যকর হবে। এর আগে ৫ জুন ঘোষিত সপ্তাহব্যাপী লকডাউনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আজ শুক্রবার রাতে। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৫ জনের নমুনায় করোনা ৪৮ জনের করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে। শনাক্ত হার ৫৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ থেকে নেমে ৫০ দশমিক ৫২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া করোনার উপসর্গ জ্বর, সর্দি, কাশি ও গলা ব্যথা নিয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুই নারীসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। বাগেরহাট : মোংলাসহ বাগেরহাট জেলায় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের সামাজিক সংক্রমণ হওয়ায় হু-হু করে বেড়েই চলেছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। গতকাল জেলায় করোনা আক্রান্ত ৬১ জনের মধ্যে হটস্পট মোংলারই রয়েছে ৪০ জন। মোংলায় করোনা শনাক্তের হার ৬১. ২২ ভগে। দুজন মারা গেছেন।

 নওগাঁ : নওগাঁ জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নতুন করে আরও এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। আর নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৯৪ জন। এ জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের হার ২৫ দশমিক ২৬ শতাংশ প্রায়।

সর্বশেষ খবর