সোমবার, ২১ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

খুনের ক্লু একটি ফোনকল

মির্জা মেহেদী তমাল

খুনের ক্লু একটি ফোনকল

চট্টগ্রামের পাহাড়তলী এলাকার বাসা থেকে এক যুবকের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে লাশটি উদ্ধার করা হয়। যুবকের বিস্তারিত পরিচয় জানতে পারেনি স্থানীয় লোকজন। বাড়ির মালিক ইউসুফ মিয়াও কিছু বলতে পারেনি ভাড়াটিয়ার বিষয়ে। ঘটনার দুই দিন আগে ওই বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন যুবকটি। সকালে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে এক তরুণীকে নিয়ে বাসায় ওঠেন। বিকালে স্থানীয়রা বাসাটিতে সাড়াশব্দ না পেয়ে সেখানে ঢুকে লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে জানায়। কম্বলে শোয়ানো লাশটি বিছানার চাদর দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছিল। সেখান থেকে একটি রক্তমাখা ছুরিও উদ্ধার করা হয়। যুবকের সঙ্গে যে নারী বাসাটিতে উঠেছিলেন তাকে পাওয়া যায়নি। ঘটনাটি ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারির। এ মামলার তদন্ত করতে যেয়ে বিপাকে পড়ে পুলিশ। এমন কিছু নেই যার সূত্র ধরে পুলিশ খুনের এই তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাবে। একটি কম্বল আর একটি চাদর। এই ছিল বাসাটিতে। কম্বল আর চাদরে তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কোনো নাম বা সূত্র কিছু মিলেনি। নিহত যুবকের পরিচয় উদঘাটন করাটাই পুলিশের কাছে বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পুলিশ জানায়, হত্যাকান্ডটি এক প্রকার ‘ক্লু-লেস’। ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা ছুরি উদ্ধার করা হলেও কোনো মোবাইল সেট উদ্ধার করা যায়নি। তদন্তের এক পর্যায়ে বাড়িওয়ালার মেয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, তাদের ভাড়াটে ওই যুবক এক দিন তাকে কল করেছিলেন। সেই নম্বরটি তার কাছে আছে। ফোনের নম্বর পেয়ে পুলিশ যুবকের পরিচয় সম্পর্কে জানতে পারে। পুলিশ জানতে পারে যুবকটির নাম মো. শামীম। পেশায় বাবুর্চি শামীমের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে; থাকতেন চট্টগ্রামের খুলশী ঢেবার পাড় এলাকায়। পুলিশ ফোনের কললিস্ট দেখে এক নারীর নম্বর নিয়ে সন্দেহ হয়। বগুড়ার ওই নারীর ঠিকানায় চলে যায় পুলিশ। তার নাম আশা। পুলিশের এই সন্দেহের তীর সঠিক স্থানেই বিদ্ধ হয়। এই আশা হলো শামীমের দ্বিতীয় স্ত্রী। তিনিই তার স্বামীকে খুন করে পালিয়ে যান। পুলিশের জেরায় আশা জানিয়েছেন, বিয়ের মাস ছয়েক পর আশা জানতে পারে শামীমের আগের স্ত্রী আছে। সেখানে তার দুটি সন্তানও আছে। আশার দাবি, শামীমের সঙ্গে আরও একাধিক নারীর সম্পর্ক ছিল। তাদের সঙ্গে তোলা বিভিন্ন ‘অন্তরঙ্গ ছবি’ শামীম নিজেই আশার কাছে পাঠাত। শামীম তার আগের স্ত্রী ও দুই সন্তান থাকার কথা গোপন করে বগুড়ায় গিয়ে আশাকে বিয়ে করে। বিয়ের পর শামীমের স্থায়ীভাবে বগুড়ায় থাকার কথা থাকলেও প্রায়ই চট্টগ্রাম চলে আসতেন। জিজ্ঞাসাবাদে আশা জানিয়েছেন, শামীমকে বগুড়ায় থাকার জন্য এনজিও থেকে ৬৫ হাজার টাকা ঋণ করে একটি ইজিবাইকও কিনে দিয়েছিলেন। তার আগেও শামীম আশার কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। তবে বিভিন্ন সময়ে শামীম বগুড়া গেলেও কয়েক দিন থেকে চট্টগ্রামে চলে আসতেন। ইজিবাইক না চালানোর কারণে শামীমের জন্য আশা চাকরিও ঠিক করেছিলেন বলে জানিয়েছেন। এত কিছু করার পরও স্বামীকে নিজের করে না পাওয়ায় ও একাধিক নারীর সঙ্গে মেলামেশার ক্ষোভ থেকে শামীমকে খুন করেন আশা। আশার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, হত্যাকান্ডের দুই দিন আগে শামীম বাসাটি ঠিক করে আশাকে আনতে বগুড়া যান। ১৬ ফেব্রুয়ারি সকালে আশাকে নিয়ে চট্টগ্রাম এসে নতুন বাসায় ওঠেন। বাসায় ওঠার পর শামীম ঘুমিয়ে পড়লে আশা তার গলায় ছুরি চালিয়ে হত্যা করে আবার বগুড়া চলে যান।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর