বুধবার, ৭ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

আলতাদিঘিতে পদ্মফুলের মেলা

নওগাঁ প্রতিনিধি

আলতাদিঘিতে পদ্মফুলের মেলা

নওগাঁ জেলা শহর থেকে প্রায় ৫৬ কিলোমিটার উত্তরে ভারতীয় সীমান্তের কোলঘেঁষে এবং জয়পুরহাট জেলা শহর থেকে ১৯ কিলোমিটার পশ্চিমে নির্জন বনের গভীরে জাতীয় উদ্যান আলতাদিঘির অবস্থান। নিরিবিলি, প্রচুর গাছপালা, সর্পিল পথ, গহিন বন। শালগাছকে আলিঙ্গন করে গড়ে ওঠা আকর্ষণীয় উঁই পোকার ঢিবি। চেনা-অচেনা পাখির আচমকা ডাক, শালপাতার ফাঁকে ফাঁকে আলোছায়ার লুকোচুরি আর বাতাসের দোলায় মন মাতাল হওয়ার জোগাড় হয়। আলতাদিঘির সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় বিষয় পদ্মফুল।

স্বচ্ছ পানিতে ফুটে ওঠা হাজারো পদ্মফুল যে কোনো ভ্রমণপিপাসু মানুষকে করছে বিমোহিত। শীতকালে পরিযায়ী পাখি, ডাহুক, পানকৌড়ির ওড়াউড়িতে মুগ্ধকর সব দৃশ্য যে কোনো বয়সের মানুষের হৃদয়কে করে চঞ্চল। জানা যায়, জেলার ধামইরহাট উপজেলার ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানের মধ্যে আলতাদিঘি অন্যতম। প্রায় ২৬৪.১২ হেক্টর এ বনভূমির মধ্যে দিঘিটির আয়তন ৪৩ একর। এটি দৈর্ঘ্যে ১ হাজার ১০০ মিটার এবং প্রস্থে ৫০০ মিটার। পাহাড়ের মতো পাড়গুলো উঁচু এবং দক্ষিণপাড় শালবনে ঢাকা। পুরো জায়গায় শোভা পাচ্ছে রাশি রাশি পদ্মফুল। ধামইরহাট উপজেলায় মোট বনভূমির পরিমাণ ১৪০১.৬৯ একর। ভারতের কোল ঘেঁষে আলতাদিঘি ও তৎসংলগ্ন বন এলাকার ২৬৪.১২ (৬৫২.৩৭ একর) হেক্টর জায়গাকে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ২০১১ সালে আলতাদিঘি জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করে। বিশাল দিঘি রামসাগরের দৈর্ঘ্য এটির চেয়ে ১৫০ মিটার বেশি হলেও চওড়ায় ১৫০ মিটারের কম। আর রামসাগর ১৭৫০ সালের দিকে খনন করা হয়। কিন্তু আলতাদিঘি পাল রাজ্য শাসনের যুগের দিঘি।

জনশ্রুতি আছে, বরেন্দ্র অঞ্চলে এক সময় প্রবল খরার কারণে মাঠ-ঘাট সব পুড়ছিল চরম পানীয় সংকটে। প্রজাদের দাবির কারণে স্থানীয় জগদল বিহারের (১০৭৭-১১২০ খ্রিস্টাব্দে) রাজা রামপাল ও সদর পালের রাজ্য শাসনের সময় রাজমাতা পুত্রের কাছে বর চাইলেন। ওয়াদা করিয়ে নেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি যতদূর পর্যন্ত পায়ে হেঁটে যেতে পারব, ততদূর পর্যন্ত একটি দিঘি খনন করে দিতে হবে। পরদিন বৃদ্ধা মা হেঁটে চলেছেন তো চলেছেন, আর থামেন না। রাজা, উজির, নাজির পড়লেন বেকায়দায়। এত লম্বা দিঘি খনন করবেন কী করে? তাই কৌশলে মায়ের পায়ে আলতা ঢেলে দিয়ে পা কেটে গেছে বলে তার চলার পথ বন্ধ করে দেন। সেই থেকে এ দিঘির নামকরণ করা হয় আলতাদিঘি।

বনবিট কর্মকর্তা আবদুল মান্নান বলেন, জাতীয় উদ্যান ঘোষণার পর ধামইরহাট উপজেলা সদর থেকে শালবন বনাঞ্চল ও আলতাদিঘি পর্যন্ত পাকা রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। বর্তমানে বাস, মাইক্রোবাস, ভটভটি ও রিকশা-ভ্যানযোগে ধামইরহাট থেকে আলতাদিঘি পর্যন্ত চার-পাঁচ কিলোমিটার পথ অনায়াসে পাড়ি দেওয়া সম্ভব।

সর্বশেষ খবর