রবিবার, ১ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

পানিবন্দী লাখো মানুষ

প্রতিদিন ডেস্ক

পানিবন্দী লাখো মানুষ

বৃষ্টিপাত কমে আসায় বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে কক্সবাজার, পটুয়াখালীর কলাপাড়াসহ অনেক স্থানে লাখো মানুষ এখনো পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো বিবরণ-

কক্সবাজার : জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। গত শুক্রবার থেকে জেলায় ভারী বৃষ্টিপাত না হওয়ায় নদী ও প্লাবিত জনপদ থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। তবে দুর্গত এলাকায় মানুষের দুর্ভোগ শুরু হয়েছে। এখনো জেলার চকরিয়া, পেকুয়া, ঈদগাঁও, রামু ও সদর উপজেলার লাখো মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। রামু-ঈদগড় সড়কের পানের ছড়া ঢালায় বিরাট অংশ ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

এদিকে পাহাড়ি ঢলের পানি কমলেও জেলার মাতামুহুরি ও বাকখালী নদীর ভাঙন বেড়েছে। মাতামুহুরি নদীর কয়েকটি পয়েন্টে শুক্রবারও ভাঙনের ফলে শতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। মাতামুহুরি নদীর ফাসিয়াখালী, কৈয়ারবিল, কাকারা, বিএমচর, পূর্ব বড়ভেওলা, শাহারবিল, চকরিয়া পৌরসভা এলাকায় এ ভাঙন দেখা দিয়েছে। বাঁকখালী নদীর গর্জনীয়া, রাজারকুল, মিঠাছড়ি, ঝিলংজা, রামু পয়েন্টেও নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন জানায়, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজারের ৫২৫টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ৭৬ হাজার ৫০০ পরিবারের ৪ লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতির শিকার হয়েছে। জেলার ৭১ ইউনিয়ন ও চার পৌরসভার মধ্যে ৫১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এবারের বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ক্ষতির পরিমাণ ৩২ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জানান, প্লাবিত এলাকার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ৩০০ মেট্রিন টন চাল, ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও ১৫ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে।

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : টানা কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিতে পানিবন্দী হয়ে আছেন উপকূলীয় পটুয়াখালীর কলাপাড়ার কয়েক হাজার মানুষ। বৃষ্টি কমলেও পানি কমেনি। তলিয়ে রয়েছে পুকুর ও মাছের ঘের। সবচেয়ে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন মৌসুমি সবজি চাষিরা। পানিতে তলিয়ে থাকায় অনেকের বাড়িতে উনুন জ্বলেনি। এ ছাড়া দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের সংকট। এদিকে ভাঙনের কবলে পড়েছে উপজেলার লালুয়া, ধানখালী, চম্পাপুর, মহিপুর ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কালভার্ট আটকিয়ে প্রভাবশালীরা মাছ চাষ করার ফলে এমন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীরা জানান, টানা ভারী বৃষ্টিতে উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের অন্তত ১০ হাজার একর জমি দেড় থেকে তিন ফুট পানিতে তলিয়ে রয়েছে। এ কারণে আমন ফসল নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। এভাবে খেত তলিয়ে থাকলে আমনের রোপণ করা চারা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। এদিকে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়িবাঁধের বাইরে নিম্নাঞ্চল তলিয়ে রয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছে শত শত পরিবার। আর ওইসব এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক জানান, করোনায় কর্মহীন ও পানিতে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ছয় লাখ টাকা স্থানীয় চেয়ারম্যানদের কাছে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মহিপুর, লালুয়া, চম্পাপুর, ধানখালী, ইউপির পানিবন্দী মানুষের জন্য জরুরি খাদ্যসামগ্রী পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বাগেরহাট : বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলায় অবিরাম বৃষ্টির পানিতে চার দিন ধরে পানিবন্দী হয়ে আছেন সাড়ে ৮৬ হাজার মানুষ। ভেসে গেছে শত শত মাছের খামার ও পুকুরের মাছ। পানিতে তলিয়ে রয়েছে কৃষকের খেতের ফসল, রোপা আমন ও বীজতলা। উপজেলা প্রশাসনের সর্বশেষ হিসাবে বৃষ্টির পানিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় রায়েন্দা, সাউথখালী, খোন্তাকাটা ও ধানসাগর- এ চারটি ইউনিয়নে ১৩ হাজার পরিবারের বসতঘর তলিয়ে যাওয়ায় এসব মানুষ এখনো অবর্ণনীয় দুর্ভোগে রয়েছেন। রান্নাঘর পানিতে ডুবে থাকায় উপজেলা প্রশাসনের দেওয়া শুকনা খাবার খেয়ে তারা এখন মানবেতর জীবনধারণ করছেন। শরণখোলা উপজেলার খাদা গ্রামের বিলকিস বেগম বলেন, চার দিন ধরে পানিবন্দী রয়েছি। পানিতে বসতঘর, রান্নাঘর ও পায়খানা সব একাকার হয়ে গেছে। হাঁস-মুরগি, গরু সব রাস্তায় রাখতে হচ্ছে অনাহারে। নিজেরাই খেতে পারি না, আর গবাদিপশুকে কী খাওয়াব। একই গ্রামের বেলায়েত হোসেন বলেন, পানিতে এমন অবস্থা যে ঘরে থাকারও কোনো কায়দা নেই। এভাবে আর কয়েকদিন থাকলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে। শুধু এই বৃষ্টি নয়, প্রতি বছর তিন চারবার পানিতে নিমজ্জিত থাকতে হয় আমাদের। তাফালবাড়ি মৌরাশি আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা রেজাউল করিম বলেন, চার দিন ধরে ঘরের ভিতরে দুই ফুট পানির মধ্যে মাচায় থাকতে হচ্ছে। তাফালবাড়ি গ্রামের দোলোয়র হোসেন বলেন, আজ চার দিন ধরে আমার ১০ কেজি ধানের বীজতলা পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। সকালে কিছু চারা উঠিয়ে দেখেছি বেশির ভাগ নষ্ট হয়ে গেছে। এবার আমন ধান লাগানোটা খুব কষ্টের হয়ে যাবে। একই অবস্থা উপজেলার সব গ্রামের।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর