বৃহস্পতিবার, ৫ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

ঘুরগার বিলে সম্ভাবনার হাতছানি

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

ঘুরগার বিলে সম্ভাবনার হাতছানি

ঘুরগার বিল। এর অবস্থান কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার দোল্লাই নবাবপুর, বাতাঘাসী ইউনিয়ন; দাউদকান্দির দক্ষিণ ইলিয়টগঞ্জ ও চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার সাচার ইউনিয়ন। সরকারি-বেসরকারি মিলে এ বিলের আয়তন প্রায় ১০০ একর। দিগন্তবিস্তৃত জলরাশি ও বর্ণিল জলজ উদ্ভিদের ¯িœগ্ধতা দর্শকের মনে আনন্দের দোলা দিয়ে যায়। বিলের লাল সাদা শাপলার মায়াবী সৌন্দর্যের হাতছানিতে সেখানে ভিড় করছেন দর্শক। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চান্দিনার কুটম্বপুর থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে গল্লাই যাওয়া যায়। তারপর হাঁটাপথ পেরিয়ে ঘুরগার বিল। সূত্রমতে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা লাল ও সাদা শাপলা বিলের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে। এ বিলে প্রায় ৫০ রকমের দেশি প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। রয়েছে বিবিধ প্রজাতির জলজ প্রাণী ও মৌসুমি পাখি। পানিতে নিমজ্জিত বিভিন্ন প্রজাতির শৈবালসহ নানা উদ্ভিদ।

বিল এলাকায় গিয়ে দেখা যায় মীরাখোলা গ্রামের পাশে খালে বাঁধা অনেক ছোট নৌকা। অনেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছেন। ছোট নৌকা ভাড়া নিয়ে ঘুরছেন। খালের স্বচ্ছ পানিতে হাত ভিজিয়ে সুখানুভূতি নিচ্ছেন। পরিবারের ছোট সদস্যদের জলজ উদ্ভিদ সম্পর্কে ধারণা দিচ্ছেন। কেউ শাপলা তুলছেন। কেউ ছবি বা সেলফিতে ব্যস্ত। কেউ গলা ছেড়ে গাইছেন- ‘ওরে নীল দরিয়া/আমায় দে রে দে ছাড়িয়া...’। অন্যদিকে দূরের কোনো নৌকায় সাউন্ডবক্সে বাজছে আঞ্চলিক গান। এ সময় ঘুরগার বিল আনন্দ বিলে রূপ নেয়। চান্দিনার সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্নেহাশীষ দাশ তার একটি লেখায় উল্লেখ করেছেন, ‘কথিত আছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হেলিকপ্টারযোগে স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে এ বিল পরিদর্শন করেছিলেন। উদ্দেশ্য দেশের প্রেক্ষাপটে এ বিলের অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা যাচাই। কিন্তু পঁচাত্তরের নির্মম ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তীতে গৃহীত পদক্ষেপের আর কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। অথচ এটি হতে পারত আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র কিংবা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দু। গড়ে উঠত পাখি ও জলজ প্রাণীর নিরাপদ আবাসস্থল।’

স্থানীয় কৈকরই গ্রামের মহিউদ্দিন আকাশ বলেন, ‘ঘুরগার বিলের জীববৈচিত্র্য আমাদের প্রকৃতি সম্পর্কে শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে।’

ইলিয়টগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়নের শিক্ষাবিদ মতিন সৈকত বলেন, ‘শৈশব থেকে এ বিলের নামকরণ নিয়ে বিভিন্ন কথা শুনে আসছি। কেউ বলেন ঘুরগা নামের এক ধরনের পোকার প্রচুর বিচরণ ছিল এ বিলে। সে পোকার নামে এর নামকরণ। কেউ বলেন এত বড় বিল ঘুরতে ঘুরতে শেষ করা যায় না বলে এর নাম ঘোরার বিল বা ঘুরগার বিল। এ বিল সংরক্ষণ জরুরি। এতে প্রাকৃতিক মাছ উৎপাদনের পাশাপাশি চিত্তবিনোদনেরও সুযোগ রয়েছে।’ বাতাঘাসী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. খোরশেদ আলম বলেন, ‘এটি উপজেলার একটি দর্শনীয় স্থান। বর্ষা মৌসুমে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ এখানে বেড়াতে আসেন।’ চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুন নাহার বলেন, ‘ঘুরগার বিলটি সম্পর্কে স্থানীয়ভাবে জেনেছি। এখানে বিপুল প্রাকৃতিক মাছ উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে; যা পুরো চান্দিনা উপজেলার চাহিদা মেটাতে পারে। বিলের মাছ উৎপাদনের সুযোগ সৃষ্টি ও সৌন্দর্য সংরক্ষণের বিষয়ে আমরা মনোযোগ দেব।’

সর্বশেষ খবর