রবিবার, ২২ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

চার ঘণ্টায় নিয়ন্ত্রণে বনানীর আগুন

রাজধানীতে তীব্র যানজট

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর বনানীর চেয়ারম্যানবাড়ি এলাকার ছয় তলা ভবনে লাগা আগুন চার ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে আসে। এই আগুনে পুরো রাজধানীতে প্রভাব পড়ে। অগ্নিকান্ডে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক বন্ধ থাকায় আশপাশের অন্য সড়কগুলোতে দেখা দেয় তীব্র যানজট। কোনো উপায়ান্তর না পেয়ে হেঁটে নিজ নিজ গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে নগরবাসীকে। তবে আগুন লাগার ঘটনায় প্রায় সাড়ে ৭ ঘণ্টায় ওই এলাকা দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

গতকাল সকাল ৯টা ১০ মিনিটে ওই ভবনে আগুনের সূত্রপাত। এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। ছয় তলা ভবনটির দ্বিতীয় তলায় আনন্দ টিভির কার্যালয়। আগুনের সূত্রপাত তৃতীয় তলা থেকে। এ আগুনে ভবন থেকে প্রচুর ধোঁয়া বের হতে  থাকে। ধোঁয়াচ্ছন্ন হওয়ায় ওই এলাকা অন্ধকার হয়ে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে আগুন লাগার কারণ জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। 

ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণে ১৫টি ইউনিট কাজ করে। বনানীর ওই ভবনে এমিকন নামের একটি প্রতিষ্ঠানের গোডাউন রয়েছে। সেখানে কেমিক্যাল জাতীয় প্রচুর দাহ্য পদার্থ ছিল। প্রচ- ধোঁয়ায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের আগুনের কাছে যেতে সমস্যায় পড়তে হয়েছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বিমানবাহিনীর পানিবাহী দুটি গাড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছে। 

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, আগুন লাগার পর কাজ নির্বিঘ্ন করতে বনানী এলাকার সড়ক বন্ধ করে দেয় ফায়ার সার্ভিস। এতে রাস্তার দুই পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। স্থবির হয়ে পড়ে পুরো এলাকা। এরপর মগবাজার ও ফার্মগেট থেকে আসা সড়কে দীর্ঘ গাড়ির সারি দেখা যায়। ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে পুলিশ, ভলান্টিয়ার, সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, ওয়াসা ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।

অগ্নিকান্ডে রাজধানীতে দীর্ঘ যানজটে চরম ভোগান্তিতে পড়ে নগরবাসী। রাস্তার ওপরই প্রখর রোদের মধ্যে বিভিন্ন যানবাহনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাদের থাকতে দেখা গেছে। উত্তরা থেকে ফার্মগেট ও মহাখালীমুখী সড়কে যানজটে আটকা পড়েন হাজার হাজার মানুষ। আগুন লাগার পরপরই বনানী, ফার্মগেট, ময়মনসিংহ সড়ক, বিজয় সরণি, মহাখালী, তেজগাঁও, সাতরাস্তার মোড়, সোনারগাঁও, কারওয়ানবাজার, শাহবাগ, মগবাজারসহ আশপাশের রাস্তায় অসংখ্য গাড়ি ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকে। লম্বা সময় অপেক্ষার পর পরিস্থিতির উন্নতি না দেখে হেঁটে গন্তব্যে রওনা হন অনেকে। ফায়ার সার্ভিসের ১৫টি ইউনিটের চেষ্টায় দুপুর ১টা ১০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে ওই সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। গাড়ির চাপ কিছুটা কমতে থাকে। এতে দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থাকা যাত্রী ও বাস চালকরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন।

আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের ভিতরে সার্চিং অভিযান শেষ হয়েছে। তারা ভিতরে কোনো হতাহত লোকজনের সন্ধান পাননি। এ ছাড়া এখন পর্যন্ত তাদের কাছে নিখোঁজের কোনো দাবিদারও আসেনি। গোডাউনে প্রচুর পরিমাণ দাহ্য পদার্থ থাকায় এখনো থেমে থেমে আগুন জ্বলছে ভবনটির ভিতরে। তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে আগুন লাগার প্রকৃত কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে।

এদিকে আগুন লাগার পর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র ও ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তারা এ সময় আগুনের ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান। দুপুর ১টায় বনানী চেয়ারম্যানবাড়ি এলাকার আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি বিল্ডিংয়ের মালিককে বিল্ডিং আইন মেনে ট্রেড লাইসেন্স দিতে হবে। বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড মানা ছাড়া কোনো ভবনে ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হবে না। তবে বনানীর চেয়ারম্যানবাড়ির এই বিল্ডিংটা অনেক পুরনো। কেন আগুন লেগেছে আমরা এখনো বুঝতে পারছি না। এখানে আগে অনেক গার্মেন্ট ছিল। সেগুলো এখান থেকে স্থানান্তরিত হয়েছে। এখানে কেউ আটকে পড়েছে এমন খবর আমরা এখনো পাইনি। তিনটি টিম রিসকিউয়ের জন্য ভিতরে যায়। আমাদের সিটি করপোরেশনের টিমও এখানে কাজ করেছে। পেছন দিকে ভবনটির ইমার্জেন্সি এক্সজিট লোহার সিঁড়িও আছে।

এরপর ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, আগুন এখন নিয়ন্ত্রণে। আগুন আর ছড়াবে না বলে ধারণা করছি। ভবনটিতে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ছিল না বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির পরিচালক (অপারেশন ও মেনটেইন্যান্স) জিলুর রহমান। তিনি বলেন, মূলত এমিকন নামে প্রতিষ্ঠানের গোডাউন এখানে। গোডাউনের ভিতরে প্রচুর পরিমাণ দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন নেভাতে আমাদের সমস্যা হয়।

সর্বশেষ খবর