বৃহস্পতিবার, ২৬ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

গাড়ি সরাতে নম্বর প্লেট পরিবর্তন করেছিলেন মিশু

মাহবুব মমতাজী

গ্রেফতার অভিযানের সময় বিলাসবহুল গাড়িটি সরিয়ে ফেলতে নম্বর প্লেট পরিবর্তন করে ফেলেন শরফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান। তদন্তে সেই বিলাসবহুল গাড়িটির আসল নম্বর উদ্ধার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। কথিত মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও মরিয়ম আক্তার মৌয়ের ‘মাদক ও অনৈতিক কাজের’  সহযোগী হিসেবে গ্রেফতার হয় মিশু হাসান। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গত ১ আগস্ট রাতে বারিধারা ও মোহাম্মদপুরে অভিযান চালিয়ে পিয়াসা ও মৌকে আটক করে। এরপর ৩ আগস্ট রাতে র‌্যাবের অভিযানে আটক হন মিশু ও জিসান। তাদের চারজনের বাসা থেকেই মাদক উদ্ধার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে করা কয়েকটি মামলাসহ মোট ১৪টির তদন্ত করছে সিআইডি।

র‌্যাবের অভিযানে মিশুর বাসা থেকে বিলাসবহুল লাল রঙের একটি ফেরারি গাড়ি জব্দ করা হয়। তখন গাড়ির নম্বর প্লেটে লেখা ছিল- ঢাকা মেট্রো-চ-১২-৯১৮০। তদন্তে গিয়ে সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তারা ওই নম্বরের কোনো গাড়িই খুঁজে পায়নি। তারা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সার্ভারে ঢাকা মেট্রো-চ-১২-৯১৮০ এই নম্বর সার্চ দিয়ে কিছু পায়নি। তবে শুধুমাত্র ১২-৯১৮০ নম্বর সার্চ দিলে পাঁচটি নম্বর পাওয়া যায়। সেগুলো হলো- কুমিল্লা মেট্রো-ল-১২-৯১৮০, ঢাকা মেট্রো-ঘ-১২-৯১৮০, ঢাকা মেট্রো-হ-১২-৯১৮০, ঢাকা মেট্রো-খ-১২-৯১৮০ এবং দিনাজপুর-হ-১২-৯১৮০।

বিআরটিএ’র কর্মকর্তারা তদন্ত সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছেন, ফেরারি গাড়িটির ঢাকা মেট্রো-চ-১২-৯১৮০ নম্বরটি একটি ভুয়া নম্বর। এই নম্বরের কোনো ডিজিটাল নম্বর প্লেট তারা এখনো ইস্যু করা শুরু করেনি। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা লাল রঙের ওই ফেরারি গাড়ির ইঞ্জিন নম্বর দিয়ে বিআরটিএতে সার্চ করা শুরু করেন। এরপরে বেরিয়ে আসে গাড়িটির আসল নম্বর।

সিআইডি সূত্র জানিয়েছে, ওই গাড়িটির আসল নম্বর হলো- ঢাকা মেট্রো-ভ-১১-১৬০৪। মিশুর গাড়ি বিক্রি প্রতিষ্ঠান রেডি অটো নামে গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন করা আছে।

রিমান্ডে সিআইডি কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে মিশু জানিয়েছেন, র‌্যাবের অভিযানে গাড়িটি যেন জব্দ না হয়, সেজন্য তিনি নম্বর প্লেট পরিবর্তন করে সরিয়ে ফেলতে চেয়েছিলেন। গাড়িটি তিনি অকশনে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কিনে নিয়েছিলেন। মূলত গাড়িটি আমদানি করা হয়েছিল সিলেটের এক ব্যক্তির নামে।

গত ৫ আগস্ট তার বিরুদ্ধে রাজধানীর ভাটারা থানায় করা মাদক মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, মিশুকে গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেন- মাদক পরিবহনের কাজে তার লাল রঙের ফেরারি গাড়িটি রাজধানীর গুলশান-২ এর ১১১ নম্বর রোডের অটোমিউজিয়াম লিমিটেড নামে একটি গাড়ির দোকানে আছে। পরে সেখান থেকে গাড়িটি জব্দ করা হয়।

এ বিষয়ে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (ঢাকা নর্থ) খালিদুল হক হাওলাদার জানান, মিশুর কাছ থেকে জব্দ হওয়া গাড়িটি বিআরটিএ-তে তার প্রতিষ্ঠানের নামে রেজিস্ট্রেশন করা আছে। আর পিয়াসার বাসা থেকে দুটি গাড়ি জব্দ করা হয়েছিল, তার একটি তার নিজের নামে আরেকটি অন্য নামে। একইভাবে রাজের বাসা থেকে দুটি গাড়ি পাওয়া গিয়েছিল তার একটি তার নামে আরেকটি অন্য নামে রেজিস্ট্রেশন করা। অন্য নামে থাকা দুটি গাড়ির মালিকানা নিয়ে তদন্ত চলছে।

বিআরটিএ তথ্য বলছে, জব্দ ছয়টি গাড়ির মধ্যে দুটি প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজের বাসা থেকে পাওয়া যায়। এর মধ্যে ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৫-৬৪০১ নম্বর গাড়িটি রাজের নামে রেজিস্ট্রেশন করা। আর ঢাকা মেট্রো-গ-১৩-৪৬১৭ গাড়ির মালিকের জায়গায় রাশিদুজ্জামান রাজুর নাম আছে। এ ছাড়া পিয়াসার বাসা থেকেও দুটি গাড়ি জব্দ করা হয়। এর মধ্যে মাজদা এক্সেলা ব্র্যান্ডের নীল রঙের গাড়ি, যার নম্বর ঢাকা মেট্রো-গ-৩৪-৫০০৯। এটি পিয়ার নিজের নামে রেজিস্ট্রেশন করা। এ ছাড়া পিয়াসার হেফাজত থেকে জব্দ করা বিএমডব্লিউ আরেকটি গাড়ি। যার নম্বর ঢাকা মেট্রো-গ-৩৯-৮৫৭৪। এটি দ্য রিলায়েবল বিল্ডার্স নামে রেজিস্ট্রেশন করা। পরীমণির কাছ থেকে জব্দ করা ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৫-৯৬৫৩ নম্বরের গাড়িটি ২০১৮ সালে একটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কিনেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গাড়িটির মালিকের নামের স্থানে পরীমণির নাম রয়েছে।

সূত্র জানায়, বিদেশি একটি এয়ারলাইনসে চাকরি করেন ইউসুফ মেহেদী। যিনি মিশু পিয়াসা সিন্ডিকেটেরে সদস্য। তার মাধ্যমে কোকেন, সোনা পাচার করত। পিয়াসা হীরা পাচারের বাহন হিসেবে গরুর পেট ব্যবহার করত। এ বিষয়ে গোয়েন্দারা ঢাকার একজন হীরা ব্যবসায়ীর বিষয়ে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে।

সর্বশেষ খবর