শনিবার, ৯ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

পাখিরাই বদলে দিয়েছে গ্রামের নাম

সরকার হায়দার, পঞ্চগড়

পাখিরাই বদলে দিয়েছে গ্রামের নাম

পঞ্চগড় থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে দেবীগঞ্জ-ডোমার উপজেলার সীমান্তরেখার একটি গ্রামের নাম পশ্চিম ডাঙ্গাপাড়া। কাগজে কলমে এই গ্রামের নাম ডাঙ্গাপাড়া হলেও স্থানীয়রা বলছেন প্রায় ২০০ বছর ধরে এই গ্রামের একটি বাড়ির বাঁশ বাগানে বাস করছে অসংখ্য পাখি। গ্রামে পাখিদের আনাগোনায় এখন বদলে গেছে এই গ্রামের নাম। পাখিদের অবাধ বিচরণের কারণে এই গ্রামের নাম হয়েছে ‘পাখিনাগা’। এখন সবাই এই গ্রামকে পাখিনাগা বলেই ডাকে। দিন দিন বাঁশ বাগান এবং গাছপালা ধ্বংস হওয়ার কারণে হুমকির মুখে পড়েছে পাখিরা। চিলাহাটি ইউনিয়নের পাখিনাগা গ্রামের অধিবাসীদের ঘুম ভেঙে যায় অসংখ্য পাখির কিচিরমিচির ডাকে। আর সন্ধ্যা আসে পাখিদের বাড়ি ফেরার ডাকে। নৈসর্গিক সৌন্দর্য ছড়িয়ে প্রায় ২০০ বছর ধরে এই গ্রামে পাখিদের বসবাস। এই গ্রামের মজিদুল শেখ এবং রফিকুল শেখের বাড়িতে প্রায় ২ একর এলাকা জুড়ে গড়ে ওঠা বাঁশ বাগানে বাস করছে হাজার হাজার পাখি। বক, পানকৌড়ি, শালিক, দোয়েল, ঘুঘু, শ্যামা, রাত চড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বাস করছে এখানে। বাড়ির মালিকেরা বলছেন প্রায় ২০০ বছর ধরে তাদের বাড়িতে পাখিরা বসবাস করছে। পাখিদের বসবাসের কারণে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও নিয়মিত পাখিদের যত্ন নিচ্ছেন তারা। দেশের নানা এলাকার অসংখ্য মানুষ ছুটে আসছে পাখিদের এই গ্রাম দেখতে। বাড়ির মালিকেরা চান সরকারি উদ্যোগে এই এলাকাকে অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হোক। মজিদুল শেখ জানান, বৈশাখ মাসের শুরুতে পাখিরা আসতে শুরু করে। অগ্রহায়ণের শেষ দিকে আবার চলে যায়। দাদুর কাছে গল্প শুনেছি তার দাদুর কাছে তিনি পাখিদের এই আবাসের কথা শুনেছেন। স্বাধীনতার আগে এক সুবেদার পাখি শিকার করতে এসেছিলেন। আমার দাদু তার বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দিয়েছিলেন। বংশগত ভাবেই আমরা এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে চাই। কিন্তু এর জন্য দরকার সহযোগিতা। স্থানীয়রা জানান, বাড়ির মালিক পাখিপ্রেমী মজিদুল শেখ এবং রফিকুল শেখ নিয়মিত পাখিদের যত্ন নেন। বাঁশ গাছ থেকে কোনো পাখি পড়ে গেলে তারা আবার বাসায় তুলে দেন। এ ছাড়া মাঝে মাঝে খাবারের ব্যবস্থাও করেন তারা। পাখিদের যত্ন আত্তিতে গ্রামবাসীও সচেতন। তারা কেউই এই এলাকায় পাখি শিকার করতে দেন না। তারা চান পাখিদের সংরক্ষণে সরকারি সহযোগিতা। এই গ্রামের সব মানুষ পাখিপ্রেমী।

চিলাহাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান একরামুল হক জানান, ছোটবেলা থেকেই এই গ্রামকে পাখিনাগা হিসেবেই চিনি। পাখিদের সঙ্গে থাকতে থাকতে তারা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তাই পাখিদের প্রতি তাদের আলাদা দরদ আছে। কিন্তু সরকারি উদ্যোগ ছাড়া পাখিদের এই আবাসকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। ডোমার উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহিনা শবনম পাখিদের সংরক্ষণ এবং গ্রামটির ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে সবরকমের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, সম্প্রতি আমি নিজে পাখিনাগায় গিয়েছি। পাখিদের প্রতি ভালোবাসা দেখে আমি মুগ্ধ। আমি সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে পাখিদের এই অভয়াশ্রমটিকে টিকিয়ে রাখার জন্য যা দরকার হবে তাই উদ্যোগ নেব।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর