রাজধানীর মগবাজার মোড়ে আজমেরী গ্লোরী লিমিটেডের দুই বাসের প্রতিযোগিতায় কিশোর রাকিবের মৃত্যুতে অভিযুক্ত দুই বাস চালককে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এদিকে, ওয়ারীর জয়কালী মন্দির মোড়ে বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে ইরফান আহমেদ নামে এক যাত্রীকে হত্যায় অভিযুক্ত হেলপারকেও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। মগবাজারে অভিযুক্ত দুই বাসের চালক ও ওয়ারীতে অভিযুক্ত বাসের হেলপারকে ধরতে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।
গত বৃহস্পতিবার বিকালে মগবাজার মোড়ে ফেরি করে চিপস বিক্রি করছিল রাকিব। সিগন্যালে বাসের জানালা দিয়ে যাত্রীদের কাছে চিপস বিক্রি করছিল সে। সিগন্যাল ছেড়ে দিলে আজমেরী গ্লোরী পরিবহনের দুই বাস একে অন্যের আগে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় দুই বাসের মধ্যে চাপা পড়ে মারা যায় রাকিব। বাস রেখে পালিয়ে যান চালক ও হেলপার। বাস দুটি জব্দ করে পুলিশ। এ ঘটনায় দুই বাসের চালকের বিরুদ্ধে নিহত রাকিবের বাবা নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে রমনা থানায় মামলা করেন। রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, অভিযুক্ত দুই চালকই পলাতক রয়েছেন। তাদের ধরতে অভিযান চলছে। রাকিবের বাবা নুরুল ইসলাম বলেন, দুই বাস পাল্লা দিতে গিয়ে আমার ছেলেকে চাপা দেয়। চালকদের কারণে এই বয়সে আমার ছেলেকে হারাতে হলো- এ কষ্ট কেমনে সহ্য করব। তিনি চালকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। জানা গেছে, রাকিবের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার গাছুয়া পাড়ায়। তারা দুই ভাই ও এক বোন। মগবাজারের পেয়ারাবাগের একটি টিনের ঘরে মা-বাবার সঙ্গে থাকত সে। তার বাবা নুরুল ইসলাম ফেরি করে পান-সিগারেট বিক্রি করেন। রাকিবের মা রেজিয়া খাতুন অন্যের বাসায় কাজ করেন। বছর দেড়েক আগে তারা গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় আসেন। রাকিবের বড় ভাই রিয়াজুল আগে থেকেই ঢাকায় থেকে দিনমজুরির কাজ করেন। ৭-৮ মাস ধরে রাকিব ফেরি করে মাস্ক ও চিপস বিক্রি করছিল। গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে রাকিবের লাশ ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। এরপর তার লাশ নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামের বাড়িতে। সেখানেই তাকে দাফন করা হয়েছে বলে রাকিবের স্বজনরা জানান। এদিকে, গত বৃহস্পতিবার ভাড়া নিয়ে বাগ্বিতন্ডা ও মারধরের পর যাত্রী ইরফান আহমেদকে জয়কালী মন্দির মোড়ে চলন্ত বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন হেলপার মোজাম্মেল। এতে ইরফান গুরুতর আহত হন। পরে তাকে ঢামেক হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় হেলপারের বিরুদ্ধে ওয়ারী থানায় হত্যা মামলা করে নিহতের পরিবার। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওয়ারী থানার এসআই আবদুল জলিল জানান, ঘটনার পর মাতুয়াইল থেকে গ্রিন বাংলা বাসটি জব্দ করা হয়। মামলার একমাত্র আসামি মোজাম্মেলকে ধরতে অভিযান চলছে। জানা গেছে, ইরফান পুরান ঢাকার নবাবপুরের একটি ইলেকট্রিক দোকানের কর্মচারী ছিলেন। তার বাড়ি ঢাকার ডেমরা থানার সারুলিয়ায়। সেখান থেকে বাসে কর্মস্থলে আসা-যাওয়া করতেন।