বৃহস্পতিবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

এক বাসচালক মাদকাসক্ত অন্যটির চালক হেলপার

বাসচাপায় মাস্ক বিক্রেতার মৃত্যু

নিজস্ব ও আদালত প্রতিবেদক

রাজধানীর মগবাজারে মাস্ক বিক্রেতার মৃত্যুর জন্য দায়ী আজমেরী গ্লোরী পরিবহনের দুই বাসচালকের একজন মো. ইমরান। বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকলেও তিনি একজন মাদকাসক্ত। আর আরেক বাসের ড্রাইভিং সিটে ছিলেন হেলপার মনির। চালকের অনুপস্থিতিতে তিনি বাসটি চালাচ্ছিলেন। তার নেই বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স। র‌্যাব-৩ এর একটি দল মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর পল্টন এবং মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থেকে এদের গ্রেফতারের পর এসব তথ্য বেরিয়ে আসে। এদিকে রাজধানীর মগবাজার মোড়ে আজমেরী গ্লোরী লিমিটেডের দুই বাসের রেষারেষিতে পিষ্ট হয়ে মো. রাকিব (১৪) নামে এক কিশোরের মৃত্যুর মামলায় বাসচালক মো. মনির হোসেন ও মো. ইমরানের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।

২০ জানুয়ারি মগবাজার মোড়ে বিকালের দিকে আজমেরী গ্লোরী পরিবহনের দুটি বাসের মধ্যে চাপা পড়ে আহত হন রাকিবুল হাসান নামে এক কিশোর। ঘটনাস্থল থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, দুর্ঘটনার পর দুই ঘাতক ড্রাইভার বাস দুটি রেখে পালিয়ে যান। ভিকটিম ঘটনাস্থলে মাস্ক বিক্রি করছিলেন। তার মাস্ক বিক্রির আয়ে পরিবারটি চলে। ঘটনাটি দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। দুর্ঘটনায় নিহতের পরিবারের সদস্যরা সড়ক ও পরিবহন আইন, ২০১৮-এর ৯৮ ও ১০৫ ধারায় ২০ জানুয়ারি রমনা মডেল থানায় মামলা করেন। মামলা নম্বর ১৬। গ্রেফতার ইমরান মাদকাসক্ত। তার বিরুদ্ধে মাদকাসক্তির কারণে ২০২১ সালে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়েছে।

গ্রেফতার মনিরের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে মঈন জানান, তিনি পাঁচ বছর মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত ছিলেন। তিন মাস আগে তিনি বাংলাদেশে নিজ গ্রামের বাড়ি ভোলায় আসেন। দেড় মাস আগে ঢাকায় কর্মসংস্থানের জন্য আসেন তিনি। এক মাস আগে থেকে আজমেরী গ্লোরী গাড়ির চালকের সঙ্গে ওই গাড়িতে দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা মজুরিতে হেলপারি শুরু করেন। তিনি মাঝেমধ্যে বাসটি নিজেও চালাতেন। তার কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল না। ২০ জানুয়ারি বিকাল ৪টায় আজমেরী গ্লোরী পরিবহন (ঢাকা মেট্রো-ব-১৫-৫৭৮৭) সদরঘাট থেকে গাজীপুরের চন্দ্রার উদ্দেশে মূল চালক সুমন গাড়িটি চালিয়ে নিয়ে আসেন। পথিমধ্যে চালক সুমন গুলিস্তানে এসে গাড়িটি হেলপার মনির হোসেনের দায়িত্বে দিয়ে যান। মনির গাড়িটি চালিয়ে মগবাজার মোড়ে নিয়ে আসেন। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার ব্যক্তিরা জানান, মগবাজার মোড়ের সিগন্যাল ছেড়ে দিলে দ্রুত গাড়ি দুটি এগিয়ে যাচ্ছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল পরবর্তী স্টপেজে যিনি আগে পৌঁছাতে পারবেন তিনি বাসের জন্য অপেক্ষমাণ বেশি সংখ্যক যাত্রীকে তার বাসে নিতে পারবেন। এমতাবস্থায় বেপরোয়া প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে এক গাড়ি অপর গাড়িকে ওভারটেক করার সময় দুই গাড়ির মাঝখানে চাপা পড়ে ওই কিশোর। ঘটনার পরই দুই চালক মনির হোসেন ও ইমরান হোসেন বাস দুটি রেখে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার ইমরান হোসেন জানান, তিনি ১০/১২ বছর ধরে আজমেরী গ্লোরী নামক কোম্পানির বাস চালিয়ে আসছেন। ঢাকা মেট্রো-ব-১৫-৬০-৫৬ নম্বরের বাসটি তিনি আনুমানিক দুই বছর ধরে চালাচ্ছেন। যদিও তিনি এক সময় হেলপার ছিলেন। তিন বছর আগে তিনি ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়েছেন। পরে মালিকের কাছ থেকে দৈনিক ৩ হাজার ৫০০ টাকা হারে বাসটি ভাড়ায় চালানো শুরু করেন। ২০ জানুয়ারি ৪টার দিকে যথারীতি বাসটি নিয়ে সদরঘাট থেকে গাজীপুরের চন্দ্রার উদ্দেশে রওনা হন। মগবাজারে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটান। রাজধানীর মগবাজার মোড়ে আজমেরী গ্লোরী লিমিটেডের দুই বাসের রেষারেষিতে পিষ্ট হয়ে মো. রাকিব (১৪) নামে এক কিশোরের মৃত্যুর মামলায় বাসচালক মো. মনির হোসেন ও মো. ইমরানের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম মোশাররফ হোসেন রিমান্ডের এ আদেশ দেন। এর আগে রমনা মডেল থানা পুলিশ দুই আসামিকে আদালতে হাজির করে প্রত্যেকের ১০ দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। দুই বাসের চাপায় রাকিবের মৃত্যুর ঘটনায় তার বাবা নুরুল ইসলাম ওই দিন রাতেই রাজধানীর রমনা থানায় বাদী হয়ে মামলা করেন।

 

সর্বশেষ খবর