শুক্রবার, ১ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা
বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি

পণ্যমূল্য বৃদ্ধি ঠেকাতে হস্তক্ষেপ চান ব্যবসায়ীরা

অর্থনীতি সচল রাখতে চলতি মূলধন ঋণ সীমা ৪০ শতাংশ বাড়ানোর দাবি এফবিসিসিআইর ঋণ বিরূপমানে শ্রেণিকরণ প্রক্রিয়া ৩০ জুন পর্যন্ত স্থগিত রাখার প্রস্তাব

রুহুল আমিন রাসেল

দেশে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ঠেকাতে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের জরুরি হস্তক্ষেপ চেয়ে পৃথক দুটি চিঠি দিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। চিঠিতে সংগঠনটি বলেছে, বিরাজমান কভিড ও রাশিয়া-ইউক্রেন পরিস্থিতির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালসহ অন্যান্য পণ্যের মূল্য ও জাহাজ ভাড়া প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কাঁচামাল, শিপিং, যাবতীয় লেনদেন চার্জসহ অন্যান্য খরচ বৃদ্ধির কারণে দেশের উৎপাদন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের ব্যাংকিং সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে অর্থনৈতিক কার্যক্রম সচল রাখার স্বার্থে বিদ্যমান চলতি মূলধন ঋণসীমা অন্তত ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি করতে সব তফসিলি ব্যাংককে নির্দেশনা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে বিশেষভাবে অনুরোধ করেছি। পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের ওপর ব্যাপক অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি হওয়ায় ঋণের কিস্তি সময়মতো পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। ব্যবসায়িক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে পুনরায় ঋণ শ্রেণিকরণ সুবিধা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় দেশের অর্থনীতির স্বার্থে ঋণ বিরূপমানে শ্রেণিকরণ প্রক্রিয়া অন্তত আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত স্থগিত রাখার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করেছি। আশা করছি কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিষয়টি সুবিবেচনায় রাখবে।

এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরকে গতকাল পৃথক দুটি পত্র দিয়েছেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। ‘চলতি মূলধন ঋণসীমা বর্ধিতকরণ’ সম্পর্কিত পত্রে বলা হয়, আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণে কর আপাতন বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদিসহ সব ধরনের পণ্যের মূল্য ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য অত্যধিক বৃদ্ধি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে। কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যবসায়ীদের প্রাপ্ত ঋণসীমা উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। ফলে আমদানিকারক ও রপ্তানিকারক উভয়ই স্বাভাবিক ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করতে           পারছেন না। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় চলতি মূলধন ঋণসীমা বৃদ্ধির বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপ জরুরি বলে আমরা মনে করি। এ অবস্থায় বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের ব্যাংকিং সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে অর্থনৈতিক কার্যক্রম সচল রাখার স্বার্থে বিদ্যমান চলতি মূলধন ঋণসীমা অন্তত ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি করতে সব তফসিলি ব্যাংককে নির্দেশনা প্রদানের জন্য আপনাকে বিশেষভাবে অনুরোধ করছে এফবিসিসিআই। ‘চলমান কভিড পরিস্থিতিতে ঋণ বিরূপমানে শ্রেণিকরণ প্রক্রিয়া চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত স্থগিত রাখা’ সম্পর্কিত আরেকটি পত্রে এফবিসিসিআই বলেছে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কভিডের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় অর্থনীতির বাস্তব সমস্যাগুলো অনুধাবন করে তা থেকে উত্তরণের নিমিত্তে কার্যকর ও সময়োপযোগী আর্থিক ও নীতিসহায়তা দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাই। পরিস্থিতি অনুযায়ী নিয়মিতভাবে পলিসি সহায়তা দেওয়ায় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কভিডের ধকল সন্তোষজনকভাবে মোকাবিলা করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এফবিসিসিআই পত্রে আরও বলেছে, কভিড পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে সচল রাখতে পলিসি সহায়তা দেওয়ার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক বিআরপিডি সার্র্কুলার লেটার নং-৫৩/২০২১-এর মাধ্যমে প্রদেয় কিস্তির ন্যূনতম ১৫ শতাংশ আদায় সাপেক্ষে ঋণ শ্রেণিকরণ সুবিধা ডিসেম্বর, ২০২১ পর্যন্ত বর্ধিত করে। এ সুবিধা অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করতে সহায়ক হয়েছে। পত্রে এফবিসিসিআই বলেছে, কভিড পরিস্থিতি এখনো সম্পূর্ণভাবে স্বাভাবিক হয়নি। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এখনো কভিড পরিস্থিতি বিদ্যমান রয়েছে, যা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমে প্রভাব ফেলছে। বিরাজমান কভিড ও রাশিয়া-ইউক্রেন পরিস্থিতির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম ও জাহাজ ভাড়া প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কাঁচামাল, শিপিং ও অন্যান্য খরচ বৃদ্ধির কারণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের ওপর ব্যাপক অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি হওয়ায় ঋণের কিস্তি সময়মতো পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। ব্যবসায়িক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে পুনরায় ঋণ শ্রেণিকরণ সুবিধা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় দেশের অর্থনীতির স্বার্থে ঋণ বিরূপমানে শ্রেণিকরণ প্রক্রিয়া অন্তত আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত স্থগিত রাখার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছে এফবিসিসিআই।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর