সোমবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

স্বস্তির বাজেট দিতে চায় সরকার

জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা, জনগণের কাঁধে নতুন করে করের বোঝা না চাপানোর মতো পদক্ষেপ থাকছে

মানিক মুনতাসির

অব্যাহত দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম বৃদ্ধি, লাগামহীন পরিবহন খরচ মানুষের জীবন যাত্রার ব্যয় বাড়িয়েছে অনেক গুণ। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকার মানুষের জীবন যাত্রার ব্যয় পাগলা ঘোড়ার মতোই ছুটছে। এরই মধ্যে বাড়তে শুরু করেছে মূল্যস্ফীতি।

উৎপাদন ও সরবরাহে তেমন কোনো সংকট না থাকলেও ও সুষ্ঠু বণ্টন ব্যবস্থাপনার অভাবে জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। প্রায় আড়াই বছর ধরে চলা করোনা মহামারির ফলে এমনিতেই         দেশের মানুষের আয় কমে গেছে। নতুন করে দারিদ্র্য সীমার নিচে নেমে গেছে বহু মানুষ। এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে জ্বালানি তেলের বিশ্ববাজারে চলছে চরম অস্থিরতা। রপ্তানি ছাড়া দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির প্রায় সবগুলো সূচকই নেতিবাচক পর্যায়ে রয়েছে। এমন এই অস্থির সময়ে দেশের মানুষকে সামান্য হলেও স্বস্তি দিতে চায় সরকার। আসছে ২০২২-২৩ অর্থবছরের যে বাজেট প্রস্তুত করা হচ্ছে- সেখানে সে চেষ্টাই করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী ৯ জুন জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করবেন অর্থমন্ত্রী।

অর্থবিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বাজেটের অঙ্ক যাই হোক বাজেটে সাধারণ মানুষের জন্য কিছু হলেও সুখবর দিতে চায় সরকার। জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা, জনগণের কাঁধে নতুন করে করের বোঝা না চাপানোর মতো পদক্ষেপ থাকছে। যদিও বাজেটের ঘাটতি ও ভর্তুকি কমাতে গ্যাস-বিদ্যুৎ, পানিসহ সব ধরনের জ্বালানি ও পরিষেবার দাম বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। এতে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে। কিন্তু আসছে বাজেটে এমন কিছু উদ্যোগ নিতে চায় সরকার, যার ফলে জীবন যাত্রার ব্যয় লাগামহীনভাবে বাড়বে না। জিনিসপত্রের দাম নাগালের মধ্যেই থাকবে। এসব বিষয় মাথায় রেখেই বাজেট প্রণয়নের কাজ করছেন অর্থবিভাগের কর্মকর্তারা। অর্থমন্ত্রী এরই মধ্যে বলেছেন, এবারের বাজেট হবে জনকল্যাণের বাজেট। এমন একটি বাজেট দেওয়া হবে যার মাধ্যমে সবাই উপকৃত হবেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সরকার আর দুটি বাজেট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। এর মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পূর্ণাঙ্গ বাজেট উপস্থাপন এবং বাস্তবায়ন করতে পারবে। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাজেট উপস্থাপন করলেও বাস্তবায়নে সময় পাবে অর্ধেক। এমন প্রেক্ষাপটে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ভোটার সন্তুষ্টির দিকটি সরকার অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে ভাবছে। আর এই ভাবনা মাথায় রেখেই আগামী বাজেটের অর্থ বরাদ্দের খাত সাজানো হচ্ছে। যেসব খাতের সুযোগ-সুবিধার সঙ্গে সরাসরি ভোটার তুষ্টির বিষয় সম্পৃক্ত; আগামী বাজেটে সেসব খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যেমন বরাদ্দ গত অর্থবছরের তুলনায় বাড়ানোর ঘোষণা আসছে, তেমনি সুবিধাভোগীর আওতাও সম্প্রসারিত করা হচ্ছে। বাজেটের আরও কোন কোন খাতে নজর দিলে ভোটারদের আকৃষ্ট করা যাবে সেদিকেও খেয়াল রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে যে ধাক্কা লেগেছে তা পুনরুদ্ধার কার্যক্রম অব্যাহত রাখতেও নতুন রূপরেখা থাকছে আগামী বাজেটে।

সূত্র জানায়, আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকার বাজেট প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এবারের বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির হার সাড়ে ৫ শতাংশে বেঁধে রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে এবারের বাজেটে ভর্তুকির জন্য বরাদ্দ বাড়ছে। গত রবিবার ১৮ এপ্রিল বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় প্রাক্কলিত বাজেটের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়। এতে বাজেটের আকার, রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করা হয়। এবারের বাজেটের যে প্রাক্কলন করা হয়েছে তা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৫ দশমিক ৪ শতাংশের সমান।

সূত্র আরও জানায়, কভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজসমূহের বাস্তবায়ন সম্পন্ন করা, খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, সেচ ও বীজে প্রণোদনা, কৃষি পুনর্বাসন, সারে ভর্তুকি অব্যাহত রাখা হবে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানো, নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে স্বল্পমূল্যে ও বিনা মূল্যে খাদ্য বিতরণ, ব্যাপক কর্মসৃজনের কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে এবারের বাজেটে। মানুষের শেষ বয়সের টেনশন কমাতে অবসরকালীন সুবিধার আওতায় আনতে সরকারি বেসরকারি সব খাতের জন্য একটি সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করতে যাচ্ছে সরকার, যার প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আসছে বাজেট থেকেই এ কর্মসূচির যাত্রা শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর