সোমবার, ১৩ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা
বাজেট কেমন হলো । রিজওয়ান রাহমান

কর কর্মকর্তাদের বিচারিক ক্ষমতায় হয়রানি বাড়বে

রুহুল আমিন রাসেল

কর কর্মকর্তাদের বিচারিক ক্ষমতায় হয়রানি বাড়বে

প্রস্তাবিত বাজেটে কর কর্মকর্তাদের বিচারিক ক্ষমতা প্রদানের ফলে করদাতাদের ওপর কর বিভাগের হয়রানি ও হেনস্তা বাড়বে বলে মনে করেন দেশের প্রাচীন বাণিজ্যিক সংগঠন ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন- কোন যুক্তিতে একজন উপ-করকমিশনার পর্যায়ের কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিকভাবে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা আরোপের ক্ষমতা দেওয়া হলো? কেন কর কর্মকর্তাদের বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া হলো? কর কর্মকর্তারা র‌্যাব নাকি পুলিশ? গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্টিজ-ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান। তাঁর মতে, প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পুরোপুরি দিকনির্দেশনা নেই। এটা বিস্তারিত থাকা উচিত ছিল। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধিই প্রস্তাবিত বাজেটের মূল চ্যালেঞ্জ।

প্রস্তাবিত বাজেটের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, এই বাজেটে বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রাজস্ব ঘাটতি, অর্থায়ন প্রভৃতি বিষয় অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং।

প্রাক্কলিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে করজাল পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি করা, কর কাঠামোর অটোমেশন, যৌক্তিক রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ও সরকারি ব্যয়ে সামঞ্জস্যতা নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়াও বাজেটে আয় ও ব্যয়ের ভারসাম্য রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাজেটে আয়-ব্যয়ের ঘাটতি স্থানীয় ব্যাংকিং ও অন্যান্য বৈদেশিক খাত থেকে অর্থ সংস্থানের নির্ভরতা তৈরি করতে পারে। বাজেটের আকার বাড়ানোর চেয়ে পরিকল্পিত, সময়োপযোগী, ব্যয় কার্যক্রমে দক্ষতা অর্জন এবং বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট প্রণয়ন অপরিহার্য। ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, করপোরেট করহার কমানোর ক্ষেত্রে তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ১০ শতাংশের বেশি আইপিওর মাধ্যমে বাজারে ছাড়া এবং লিস্টেড ও নন-লিস্টেড কোম্পানির ক্ষেত্রে বার্ষিক মোট ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত নগদ ব্যয় ও বিনিয়োগ ছাড়া সব ধরনের লেনদেন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে সম্পন্ন না করলে লিস্টেড কোম্পানির ২৫ শতাংশ হারে কর আরোপের প্রস্তাব পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। স্থানীয় বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি বেশি হারে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য পর্যায়ক্রমে বিদ্যমান করপোরেট কর হ্রাস করা প্রয়োজন বলে মনে করে ঢাকা চেম্বার।

তিনি আরও বলেন, বেসরকারি বিনিয়োগের ধারা অব্যাহত রাখতে বিদ্যমান করদাতাদের ওপর নতুন করে করের বোঝা না বাড়িয়ে, করজাল বৃদ্ধির জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরে অন্য জেলাগুলোতে আয়কর দাতার সংখ্যা বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন। ব্যক্তি শ্রেণির আয়করে ন্যূনতম সীমা অপরিবর্তিত না রেখে তা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। পণ্য জব্দ করার ক্ষমতা ধারা ৮৩, ৮৪ এবং ১০০ ধারাগুলো সংস্কার করা প্রয়োজন, যাতে হয়রানিমুক্ত ভ্যাট ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা যায়। 

রিজওয়ান রাহমান বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে পণ্য উৎপাদনের কাঁচামাল সাপ্লাইয়ে উৎসে কর ৪ শতাংশে নামিয়ে আনার উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তবে উৎসে করের হার সব রপ্তানিকারকের জন্য সমানভাবে নির্ধারণ করা আবশ্যক। এর ফলে তৈরি পোশাক খাতের সঙ্গে সম্ভাবনাময় অন্যান্য খাতের বৈষম্য কমবে।

তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ও পরিচালন ব্যয় দুটোই বৃদ্ধি পেয়েছে। এ পরিস্থিতিতে রাজস্ব সংগ্রহ কাক্সিক্ষত হারে বৃদ্ধি না পেলে সরকারের ব্যাংকনির্ভরতা আর্থিক খাতকে বেশ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করবে। এমন বাস্তবতায় আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য ব্যাংক ঋণ ও অন্যান্য খাতে যেমন- সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ গ্রহণের পরিমাণ এবং সুদের হারের মধ্যে ভারসাম্য রাখা হোক।

ঢাকা চেম্বারের এই নেতা আরও বলেন, বাজেটে বেসরকারি খাত থেকে ২৪ দশমিক ৯ শতাংশ বিনিয়োগ প্রাপ্তির প্রাক্কলন করা হয়েছে, যা বাস্তবায়নে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বাস্তবায়নের গতি আশাব্যঞ্জক নয়। উল্লেখ্য, মে ২০২২ পর্যন্ত এডিপি বাস্তবায়নের হার ৫৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এ ছাড়াও বৃহৎ প্রকল্পগুলো স্বল্প সময় ও খরচে দ্রুত বাস্তবায়ন এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় প্রকল্প বাস্তবায়ন ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের অন্যান্য উৎপাদনশীল খাতে বাধা তৈরির পাশাপাশি বৈদেশিক ঋণনির্ভরতা আরও বাড়বে।

সর্বশেষ খবর