মঙ্গলবার, ২১ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

থমকে গেছে কৃষিপণ্য রপ্তানি

পণ্য রাখার কুলিং সিস্টেম নেই বিমানবন্দরে, ইডিএস মেশিন থাকলেও বিকল, কুকুর দিয়ে পরীক্ষা করা হয় রপ্তানিযোগ্য পণ্য

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

মধ্যপ্রাচ্যসহ ইউরোপের দেশগুলোতে বাংলাদেশের কৃষিপণ্যের বিপুল চাহিদা থাকলেও বন্দর সুবিধার অভাবে থমকে গেছে এ খাতের রপ্তানি। গত অর্থবছরে কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হলেও এসব পণ্যের মধ্যে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের অবদানই বেশি। এর মধ্যে তাজা শাকসবজি ও ফলমূল রপ্তানির পরিমাণ মাত্র ১২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

সূত্র জানায়, ইউরোপের দেশগুলো ছাড়াও করোনা মহামারির পর সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, কাতার, দুবাই ও বাহরাইন থেকে তাজা শাকসবজি সরবরাহের বিপুল চাহিদাপত্র পাওয়া যাচ্ছে। তবে বন্দরে কুলিং সিস্টেম এবং ইডিএস (এক্সপ্লোসিভ ডিটেকটেইড) মেশিন কার্যকর না থাকায় কৃষিপণ্য স্ক্যানিং ও প্যাকেজিংয়ে অনেক শাকসবজি ও ফলমূল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে চাহিদা অনুযায়ী কৃষিপণ্য রপ্তানি করা সম্ভব হচ্ছে না।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কৃষিপণ্য রপ্তানিতে ইডিএস মেশিনে স্ক্যানিংয়ের প্রয়োজন হয়। কিন্তু হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুটি ইডিএস মেশিন থাকলেও তা বিকল অবস্থায় রয়েছে। ইডিএস মেশিনের বিকল্প হিসেবে পণ্য স্ক্যানিংয়ে কুকুর ব্যবহার করা হচ্ছে। রপ্তানিকারকরা জানান, পচনশীল পণ্য হিসেবে তাজা শাকসবজি দ্রুত পরিবহন করতে হয়। এ কারণে এসব কৃষিপণ্য মূলত বিমানবন্দর ব্যবহার করে রপ্তানি হয়ে থাকে। তবে বিমানবন্দরে কুলিং সিস্টেম বা কোল্ড স্টোরেজের যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় বেশির ভাগ কৃষিপণ্য জাহাজীকরণের সময় বাইরে খোলা জায়গায় ফেলে রাখা হয়। এতে পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে রোদে শুকিয়ে সবজি এমনভাবে পচে যায় যে, তা আর রপ্তানির সুযোগ থাকে না। এর ফলে শুধু রপ্তানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তাই নয়, আন্তর্জাতিক বাজারে দেশের কৃষিপণ্যের সুনামও ক্ষুণ্ন হচ্ছে। রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে বাংলাদেশ ফ্রুুটস, ভেজিটেবলস অ্যান্ড এলাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলেও জানান রপ্তানিকারকরা।

চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, রপ্তানিকারকরা বলেছেন, হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের কৃষিপণ্য স্ক্যানিংয়ে ব্যবহৃত ইডিএস (এক্সপ্লোসিভ ডিটেকটেইড) মেশিন নষ্ট হওয়ায় তাদের রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে প্রতিদিন প্রায় ১ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন তারা। বিষয়টির দ্রুত সমাধানে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)-কে উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)-এর ভাইস চেয়ারম্যান ও সিইও এ এইচ এম আহসান বলেন, কৃষিপণ্য রপ্তানিতে কুল চেইন সিস্টেম ও কার্গো সার্ভিস নিশ্চিত করতে একটি সভা হয়েছে। ওই সভায় বিমানবন্দরে কৃষিপণ্যের জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ওয়্যারহাউসের ব্যবস্থা করা, নতুন ও পুরনো ইডিএস মেশিন দ্রুত চালু, বিমান ভাড়া যৌক্তিক পর্যায়ে রাখাসহ বিভিন্ন সুপারিশ গ্রহণ করা হয়েছে। সভায় বিমানবন্দরের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, রপ্তানিপণ্য স্ক্যানিংয়ের জন্য এরই মধ্যে দুটি ইডিএস মেশিন কিনেছেন তারা। মেশিন দুটো ইউরোপের অনুমোদনও পেয়েছে। খুব দ্রুত সেগুলোর কার্যক্রম শুরু হবে।

সর্বশেষ খবর