বুধবার, ২২ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

দেশে ওমিক্রনের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্টে আতঙ্ক

অ্যান্টিবডিকে পাশ কাটিয়ে ঢুকছে শরীরে, দ্বিতীয় দিনের মতো ৮ শতাধিক রোগী শনাক্ত, চার মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ শনাক্তের হার

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে ফের ঊর্ধ্বমুখী করোনা সংক্রমণের মধ্যে এবার যশোরে দুজনের শরীরে মিলেছে ভাইরাসটির ওমিক্রন ধরনের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট বিএ.৪/৫। বিশ্বব্যাপী নতুন করে আতঙ্ক জন্ম দেওয়া এই সাব-ভ্যারিয়েন্ট ভ্যাকসিন বা অ্যান্টিবডিকে পাশ কাটিয়ে সহজেই মানবশরীরে প্রবেশ করতে পারে। গতকাল যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারের একদল গবেষক দুজন আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে সংগৃহীত ভাইরাসের আংশিক (স্পাইক প্রোটিনের) জিনোম সিকোয়েন্সের মাধ্যমে করোনার এ সাব-ভ্যারিয়েন্টটি শনাক্ত করেন। যবিপ্রবি উপাচার্য ও জিনোম সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, নতুন এই সাব-ভ্যারিয়েন্টটি মানুষের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সহজেই ফাঁকি দিতে পারে। তাই মাস্ক ব্যবহারসহ করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলা খুবই জরুরি। ভাইরাসটি প্রতিরোধে মাস্ক সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখবে। যবিপ্রবির জনসংযোগ বিভাগের সহকারী পরিচালক আবদুর রশিদ অর্নব জানান, নতুন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত দুজন ব্যক্তিই পুরুষ, যাদের বয়স ৪৪ ও ৭৯ বছর। দুজনের একজন বুস্টার     ডোজ নিয়েছেন, আরেকজন দুই ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন। একজন হাসপাতালে এবং অন্যজন বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আক্রান্ত দুজনের শরীরে জ্বর, গলাব্যাথা, সর্দি-কাশির মৃদু উপসর্গ রয়েছে।

এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় টানা দ্বিতীয় দিনের মতো দেশে আট শতাধিক করোনা রোগী শনাক্তের ঘটনা ঘটেছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যুর খবরও এসেছে গতকাল। সোমবারও কভিডে একজনের মৃত্যুর খবর আসে। তার আগে সর্বশেষ মৃত্যুর খবর এসেছিল গত ৩০ জুন। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, গতকাল সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৭ হাজার ৯২৭টি নমুনা পরীক্ষা করে ৮৭৪ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এক দিনে এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল সর্বশেষ গত ২৮ ফেব্রুয়ারি। সেদিন ৮৯৭ জনের শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়ে। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার বেড়ে দাঁড়ায় ১১.০৩ শতাংশে। ১৭ ফেব্রুয়ারির পর প্রথমবারের মতো দৈনিক শনাক্তের হার ১১ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে গত ২৪ ঘণ্টায়।

গত জানুয়ারিতে প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকায় ছড়িয়ে পড়ে ওমিক্রনের নতুন দুটি সাব-ভ্যারিয়েন্ট বিএ.৪ ও বিএ.৫। এরপর ইউরোপ, আমেরিকায় দ্রুত ছড়াতে থাকে ভাইরাসটি। যবিপ্রবির জিনোম সেন্টারের সহযোগী পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল কবীর জাহিদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা এখনো কমপ্লিট সিকোয়েন্সিং করিনি। তাই দুজনের শরীরে পাওয়া ভ্যারিয়েন্টটি বিএ.৪ নাকি বিএ.৫ তা নিশ্চিত নই। তবে এই দুটির মধ্যে একটি তা স্পাইক প্রোটিনের জিনোম সিকোয়েন্সিং করে নিশ্চিত হয়েছি। এর আগে আমরাই প্রথম ডেল্টা ও ওমিক্রন শনাক্ত করেছিলাম। তিনি বলেন, বর্তমানে পাওয়া ওমিক্রনের সাব-ভ্যারিয়েন্টটিকে ওমিক্রন ও ডেল্টার মিশ্রণ বলা যায়। এটা ওমিক্রনের চেয়ে বেশি রোগ সৃষ্টি করতে পারে এবং সহজে অ্যান্টিবডিকে ফাঁকি দিয়ে শরীরে ঢুকতে পারে। যে কারণে ভ্যাকসিন নিলেও মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। এটার কারণে নতুন ঢেউয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। মাস্ক ৯০ ভাগ সংক্রমণ ঠেকাতে পারে। এটা এখন ফের বাধ্যতামূলক করা দরকার। একই সঙ্গে বেশি বেশি জিনোম সিকোয়েন্সিং করে দেখা দরকার কোন ধরনটি এখন বাংলাদেশে লিড রোল প্লে করছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর