রবিবার, ৩ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

সাভারে শিক্ষক হত্যায় জিতুসহ এক ছাত্রীকে বহিষ্কার

সাভার প্রতিনিধি

শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় আলোচিত হাজি ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর গতকাল ক্লাসে ফিরেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তবে কিশোর গ্যাং আতঙ্ক এবং আরও কিছু কারণে ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি আগের চেয়ে কম বলে জানা গেছে। এদিকে শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার বিষয়ে সম্পৃক্ত থাকায় একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এর আগে বহিষ্কার করা হয় জিতুকে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আশুলিয়ার ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ সাইফুল হাসান।

শুক্রবার সকালে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মারুফ হোসেন সরদার মতবিনিময় সভা করেন। সেখানে পুলিশ সুপার ক্লাস চলাকালে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংলগ্ন এলাকায় সার্বক্ষণিক পুলিশি টহলের আশ্বাস দেন। তবে সেই প্রতিশ্রুতিমতো সকাল থেকে পুলিশের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, সেখানে প্রভাতী (প্লে থেকে চতুর্থ) এবং দিবা (পঞ্চম থেকে দ্বাদশ) এ দুটি শাখায় ক্লাস কার্যক্রম পরিচালিত হয়। গতকাল প্রভাতী শাখার ক্লাস সকাল সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। দিবা শাখার ক্লাস সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। প্রভাতী শাখায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল ৫৩ শতাংশ এবং দিবা শাখায় উপস্থিতি ছিল ৬০ শতাংশ।

সকাল ১০টার দিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে সরেজমিন দেখা যায়, প্রভাতী শাখার শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছে। কয়েকজন শিক্ষক প্রতিষ্ঠানের মূল ফটকে দাঁড়িয়ে আছেন। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য বেশ কয়েকজন শিক্ষক প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন বিভিন্ন সড়কে কয়েকটি গ্রুপে ভাগ হয়ে টহল দিচ্ছেন। আশপাশের কয়েকটি সড়কে ঘুরে কিশোরদের কোনো জটলা চোখে পড়েনি। তবে পুলিশি টহল না থাকায় অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষার্থী ভয়ের কথা জানিয়েছেন।

এদিকে শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার স্মরণে ও আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে প্রতিদিন ১৫ মিনিট করে কলেজের সামনে মাসব্যাপী মৌন মানববন্ধন করবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গতকাল আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকায় অবস্থিত কলেজের সামনে আসামি গ্রেফতার হওয়ার পর প্রথম দিনের মৌন মানববন্ধনে দাঁড়ান শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। হাজি ইউনুছ আলী কলেজের অধ্যক্ষ সাইফুল হাসান বলেন, উৎপল স্যার হত্যার ঘটনায় পুলিশ ও র‌্যাব এবং প্রশাসনের প্রতি আমরা সন্তুষ্ট। আগামীতে বিচার কার্যক্রমে কি হয় সেটাই আমাদের দেখার পালা। আমরা উৎপল স্যারের স্মরণে ও জিতুসহ বাকি আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে প্রতিদিন ক্লাস শেষে কলেজের সামনে ১৫ মিনিট করে অবস্থান করে মৌন মানববন্ধন করব। আগামী এক মাস এই মানববন্ধন চলবে।

২৫ জুন দুপুরে হাজি ইউনুস আলী কলেজে মেয়েদের ক্রিকেট খেলা চলার সময় পেছন থেকে শিক্ষক উৎপলকে কাঠের স্টাম্প দিয়ে হামলা করে জিতু দাদা নামের কিশোর গ্যাং-এর প্রধান ছাত্র জিতু। পরে দ্রুত তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে এক দিন পর ২৬ জুন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এ ঘটনায় নিহতের ভাই অসীম কুমার সরকার বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় জিতুর নামে একটি মামলা করেন। ঘটনার চার দিন পর ২৯ জুন জিতুর বাবাকে কুষ্টিয়া থেকে ও জিতুকে গাজীপুর থেকে গ্রেফতার করে দুজনকে পাঁচ দিন করে রিমান্ড দিয়েছেন আদালত।

ছেলে হত্যার বিচার চাইলেন মা : ছেলে উৎপল হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাইলেন মা গীতা রানী। গতকাল সকালে উল্লাপাড়া কলেজ শিক্ষক সমিতি আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মানববন্ধনে বক্তব্যকালে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এ দাবি করেন।

 

 

সর্বশেষ খবর