মঙ্গলবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

১৫ ফেব্রুয়ারি মার্কা নির্বাচন আর হবে না : কাদের

দিনাজপুর ও জামালপুর প্রতিনিধি

১৫ ফেব্রুয়ারি মার্কা নির্বাচন আর হবে না : কাদের

জামালপুরে গতকাল জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে আগতদের একাংশ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

দিনাজপুর ও জামালপুরে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ-শহীদ ময়দানে গতকাল দুপুরের সম্মেলনে তিনি বলেন, ১৫ ফেব্রুয়ারি মার্কা নির্বাচন এ দেশে আর হবে না। সুষ্ঠু ভোট হবে, ভয় পাবেন না। শেখ হাসিনার রুটিন দায়িত্ব। পৃথিবীর অন্য দেশের মতোই এ দেশে নির্বাচন হবে।

অপরদিকে গতকাল বিকালে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের বলেন- নেত্রীর নির্দেশে ছাত্রলীগের সম্মেলন ৮ তারিখের পরিবর্তে ৬ তারিখে দিয়েছি। আমরা বাধা দিতে চাই না, ১০ তারিখে বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি করুক, আমরা এটাই চাই। তবে আগুন আর লাঠি নিয়ে এলে খেলা হবে।

জামালপুর জিলা স্কুল মাঠে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগ এই ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের আয়োজন করে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহর সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী প্রমুখ।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, এদেশে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে আমাদের পা কেটেছে, হাত কেটেছে, চোখ উপড়ে ফেলেছে, ভাইয়ের সামনে বোনকে ধর্ষণ করেছে, মায়ের সামনে ধর্ষণ করেছে মেয়েকে। কোনো নাবালিকা শিশু পর্যন্ত তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি, সেই দল বিএনপি এখন গণতন্ত্রের কথা বলে। যাদের অত্যাচার, নির্যাতন, নিষ্পেষণে আমাদের বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করা মহাপাপ ছিল, যে ৭ মার্চের ভাষণ বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষকে স্বাধীনতার নির্দেশনা দিয়েছিল, সেই ৭ মার্চের ভাষণ যারা নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল, বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলেছিল, যারা ভোট কেটে হ্যাঁ-না ভোট করেছিল, সেই তারা আজ গণতন্ত্রের কথা বলে, যা খুবই হাস্যকর।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলেই বিএনপির ষড়যন্ত্রের তৎপরতা বেড়ে যায়। তাই আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং বিএনপির ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় আমাদের সভানেত্রী যাকেই দলের দায়িত্ব অর্পণ করুক না কেন, তার নেতৃত্বেই দলকে সুসংগঠিত করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। এখানে মান-অভিমানের কোনো জায়গা নেই, দলের সভানেত্রীর নির্দেশনাই আমাদের জন্য শেষ কথা।

সম্মেলনে অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বিজন কুমার চন্দকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করেন ওবায়দুল কাদের। সাড়ে ৭ বছর পর জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বিগত ২০১৫ সালের ২০ মে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ-শহীদ ময়দানে দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিএনপির প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে কোনো উসকানি দেবেন না। আওয়ামী লীগের কর্মীরা মাঠ ছেড়ে দেয়নি। ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, পরিবহন নেতাদের আমরা কখনো বলিনি পরিবহন ধর্মঘট করে বিএনপির সমাবেশে বাধাগ্রস্ত করতে। পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের আবারও বলতে চাই, ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশ ঘিরে কোনো ধর্মঘট করা যাবে না। আমরা কোনো বাধা দিব না। তারপরও দেখবেন হাঁড়ি-পাতিল, মশারি-কয়েল নিয়ে হাজির হবে ঢাকা সিটিতে।

দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ-শহীদ ময়দানে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন এমপি এবং প্রধান বক্তা ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি। সম্মানিত অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান এমপি। দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান এমপির সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিক, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি, সাবেক মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এমপি, মনোরঞ্জন শীল গোপাল এমপি, মো. শিবলী সাদিক এমপি, অ্যাডভোকেট জাকিয়া তাবাসসুম জুঁই এমপি এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুতফা ডালিয়া ও অ্যাডভোকেট সফুরা বেগম রুমি প্রমুখ।

কমিটি : ১০ বছর পর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক কাউন্সিল শেষে সভাপতি হিসেবে দিনাজপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারকে পুনরায় মনোনীত করা হয়েছে। সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন বিদায়ী কমিটির সহসভাপতি আলতাফুজ্জামান মিতা। গতকাল বিকালে জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল শেষে এ ঘোষণা দেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন। সম্মেলনে দুজন সহসভাপতি ও দুজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের নামও ঘোষণা করা হয়। তারা হলেন- সহসভাপতি হিসেবে বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইমাম চৌধুরী ও তহিদুল হক সরকার এবং যুগ্ম সম্পাদক পদে শাহ ইয়াজদান মার্শাল ও ফারুকুজ্জামান চৌধুরী মাইকেল। উল্লেখ্য, সব শেষ কাউন্সিল হয়েছে ২০১২ সালের ২৩ ডিসেম্বর।

সর্বশেষ খবর